শিরোনাম
৯ মার্চ, ২০২৩ ১২:৪০

ভুট্টায় স্বপ্ন দেখছেন লালমনিরহাটের কৃষক

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

ভুট্টায় স্বপ্ন দেখছেন লালমনিরহাটের কৃষক

ফাইল ছবি

বর্তমানে  লালমনিরহাট  জেলার ব্র্যান্ডিং নাম ‘ভুট্টায় ভরা সবার ঘর, লালমনিরহাট স্বনির্ভর’। খরচ কম লাভ বেশি হওয়ায় ক্রমেই বাড়ছে লালমনিরহাটে ভুট্টার চাষির সংখ্যা। জেলার কৃষি জমি ও আবহাওয়া ভুট্টা চাষের উপযোগী হওয়ায় এ জেলায় বরাবরই ভুট্টার ফসল বেশ ভালো হয়। তবে করোনাকালীন সময়ে সৃষ্ট অর্থনৈতিক দুর্বলতা পর্যায়ক্রমে কাটিয়ে পুনরায় সম্মৃদ্ধির ছোঁয়া পেতে এ অঞ্চলের কৃষক ভুট্টার ওপরই নির্ভর করেছে। 

এ বছর কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের হানায় ফসল ক্ষতিগ্রস্ত না হলে বর্তমান বাজার চাহিদা অনুয়ায়ী চাষাবাদকৃত এসব ভুট্টার সব খরচ মিটিয়ে বেশ লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন জেলার লক্ষাধিক কৃষক। কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী এ বছর সমতল ও চরাঞ্চলে উৎসাহ নিয়ে লাখো কৃষক চাষ ৩২ হাজার ৯২০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড জাতের ভুট্টা চাষ করেছেন। এর মধ্যে পাটগ্রামে ১৩ হাজার ২৫০ হেক্টর, হাতীবান্ধা উপজেলায় ১৩ হাজার হেক্টর, কালীগঞ্জ উপজেলায় ৪ হাজার ১৭০ হেক্টর, আদিতমারী উপজেলায় ৭২০ হেক্টর এবং লালমনিরহাট সদর উপজেলায় ১ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। 

জেলার পাটগ্রাম উপজেলার জগতবেড় ইউনিয়নের ভুট্টাচাষি মজিবর রহমান বলেন, এবারেও আড়াই একর জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। একর প্রতি ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ১২০ মণ ভুট্টা উৎপাদনের আশা করছি। বর্তমানে প্রতি কেজি ভুট্টা ৩৪-৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। নতুন ভুট্টা প্রতি কেজি ২৮-২৯ টাকা দরে বেচাকেনা হলেও এক একর জমিতে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৪০০ টাকার ফসল বিক্রি হবে। এতে প্রতি একরে প্রায় ৭৪ হাজার টাকা লাভ হবে। 

হাতিবান্ধা উপজেলার বড়খাতা এলাকার ভুট্টাচাষি রবিউল ইসলাম বলেন, গত তিন বছর আগে আমিসহ অনেকেই তামাক চাষ করতাম। তামাকের চেয়ে ভুট্টায় লাভ বেশি হয় দেখেই ভুট্টা চাষ শুরু করি। বর্তমানে আমাদের এলাকার প্রায় জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। 

একই উপজেলার সিঙ্গিমারী এলাকার আবদুল হামিদ ও নেছার উদ্দিন বলেন, ‘আগে আমরা তামাক চাষ করতাম। এখন ভুট্টা চাষের প্রচলন হওয়ায় আমরা অনেক ভালো আছি। এখন প্রতি বছর ভুট্টা ঘরে তোলার পর বিক্রি করে মানুষ পাকা ঘরবাড়ি তৈরি করছে। 

তথ্যমতে, তিস্তায় জেগে ওঠা ৫৯ চরের চাষাবাদ উপযোগী জমির পরিমাণ ৮ হাজার ৫৭১ হেক্টর, আর জেগে ওঠা চাষাবাদ উপযোগী জমি চরের মাত্র ৮.৫৬ শতাংশ। এর মধ্যে এ বছর শুধু মাত্র ভুট্টাই চাষ হয়েছে ২ হাজার ৬৮০ হেক্টর জমিতে যা চাষ উপযোগী জমির প্রায় ২৬.৮ শতাংশ। 

কালীগঞ্জের ভোটমারী চরের কৃষক সোবাহান আলী জানান, ২৭ শতাংশ জমিতে ভুট্টা চাষে প্রায় ১৫ হাজার টাকা করে খরচ হয়। ভুট্টা বিক্রি করে ৩৩-৩৫ হাজার টাকা পাওয়া যায়। কৃষকের দ্বিগুণেরও বেশি লাভ হয়। এ জন্য সবাই ভুট্টা চাষ করছেন। 

একই এলাকার বাবুল মিয়া জানায়, চরাঞ্চলে ভুট্টা চাষে তার অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা ফেরার কথা, তিনি বলেন টানা দশ বছর থেকে ভুট্টা চাষ করছি এবং লাভ হওয়ায় আমার ও আমার পরিবারের অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা এসেছে। শুধু আমি নই এই এলাকার অধিকাংশ কৃষক এখন ভুট্টাকে প্রধান ফসল ধরেছে। 

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক হামিদুর রহমান বলেন, জেলার পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধা উপজেলায় ভুট্টা চাষে নীরব বিল্পব ঘটে গেছে। এখন কালীগঞ্জ উপজেলার কৃষকরাও সে পথে হাঁটছেন। আমরা কৃষকদের সব ধরনের পরামর্শ প্রদান করছি। অনেক কৃষক তামাক চাষ পরিহার করে ভুট্টা চাষে মনোযোগী হয়েছে। এ জন্য বিভিন্নভাবে সরকার কৃষকদের প্রণোদনাও দিচ্ছে। 

লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ জানান, ‘তিস্তার চরসহ জেলার পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা ও কালীগঞ্জ উপজেলায় এবার ব্যাপক ভুট্টা চাষ হয়েছে। এসব অঞ্চলের কৃষকের উৎপাদিত ভুট্টা দিয়ে কৃষিনির্ভর কলকারখানা গড়ে উঠতে পারে। এ বিষয়ে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।’


বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর