চালের আটা, নারিকেল কুচি আর খেজুরের গুড়ের মিশ্রণে তৈরি বিভিন্ন মিষ্টান্ন জাতীয় খাবারের নামই হচ্ছে পিঠা। শীতকালে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী বিশেষ পিঠার উৎসব হয়েছে কুষ্টিয়ায়।
মঙ্গলবার ইংরেজি বছরের শেষ দিনে বসুন্ধরা শুভসংঘ কুষ্টিয়ার বন্ধুদের সহায়তায় পিঠা উৎসব এবং শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। কুষ্টিয়া শহরের থানা পাড়ায় শুভসংঘের আঞ্চলিক কার্যালয়ে বিকেলে পিঠা উৎসব এবং দারিদ্র্যদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়।
এ সময় কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান সিনিয়র প্রফেসর ড. সারওয়ার মুর্শেদ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল আলম টুকু, রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদ কুষ্টিয়ার সাধারণ সম্পাদক শিল্পী অশোক সাহা, সাবেক ব্যাংকার শাহাজাহান আলী, কালের কণ্ঠের কুষ্টিয়ার নিজস্ব প্রতিবেদক তারিকুল হক তারিক, শুভসংঘের সাধারণ সম্পাদক কাকলি খাতুন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুমাইয়া ইসলামসহ শুভসংঘের বন্ধুরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, দুপুর থেকেই শুভসংঘের বন্ধু পপি, সুমাইয়া, কাকলী, লিমন, অহনা, অছিয়াসহ অন্যরা একে একে নানান ধরনের ভাপা পিঠা, কুলি পিঠা, চিতই পিঠা, রস পিঠা, পাকান পিঠা, সারা পিঠা, নকশি পিঠা, পাটিসাপ্টা পিঠা ও কুলসি পিঠাসহ ২০-২৫ ধরনের পিঠা নিয়ে উপস্থিত হন শুভসংঘ কার্যালয়ে। একই সঙ্গে আসতে থাকেন অতিথিরাও। ঘড়ির কাঁটা ৩টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় পিঠা উৎসব।
শুভসংঘের সদস্যদের হাতে পিঠা তুলে দিয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান সিনিয়র প্রফেসর ড. সারওয়ার মুর্শেদ। এরপরই শুরু হয় স্বাদে গন্ধে ভরপুর পিঠা ভক্ষণ পর্ব। সে সময় বিভিন্ন পিঠার মৌ মৌ সুবাসে অতিথি এবং শুভসংঘের বন্ধুরা হারিয়ে যান পিঠার রাজ্যে।
পিঠা উৎসবের উদ্বোধন করে অতিথি সিনিয়র প্রফেসর ড. সারওয়ার মুর্শেদ বলেন, সেই প্রাচীনকাল থেকেই বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে পিঠাপুলি। শীতের সময় পিঠা হচ্ছে রসনা বিলাসী বাঙালিদের একটি অনন্য খাবার। শীতে পিঠা ছাড়া ভাবাই যায় না। এই পিঠার সাথে গ্রামবাংলার একটি ঐতিহ্যও মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে। গ্রামের কৃষকের ঘরে নবান্নের নতুন ধান উঠলেই ঘরের বৌ-ঝিরা ধান ভেনে আটা বানিয়ে তা দিয়ে পিঠা তৈরিতে লেগে যান। এর সাথে যোগ হয় শীতের খেজুরের রস বা খেজুরের গুড়।
তিনি বলেন, আগেকার সময়ে গ্রামের দাদি-নানি বা বড়মারা সাধারণত শীতের পিঠা বানাতেন। এখন আমাদের অনেকেরই দাদি-নানিরা পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। তাই আগের মতো মজা করে পিঠা খাওয়া হয় না। বসুন্ধরা শুভসংঘের পিঠা উৎসবে আসতে পেরে আমি গর্বিত। অনেক ধরনের পিঠা খেতে পেরে আমি অনন্দিতও বটে। কেননা এতো পিঠা তো কখনো একসাথে খাওয়া হয় না।
পিঠা উৎসব শেষে শুরু হয় শীতের কম্বল বিতরণ। এ সময় বসুন্ধরা শুভসংঘের সদস্যদের তত্ত্বাবধানে অতিথিরা ২০ জন দারিদ্র্য অসহায় মানুষের হাতে শীতের কম্বল তুলে দেন। কম্বল পেয়ে শীতার্ত দারিদ্র্যরাও দারুণ খুশি।
শেষে কালের কণ্ঠের নিজস্ব প্রতিবেদক ও কুষ্টিয়া জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি তারিকুল হক তারিক বলেন, দেশ ও মানুষের কল্যাণে বসুন্ধরা শুভসংঘ সবসময়ই এগিয়ে থাকে। সমাজের যেকোনো ধরনের অসহায় মানুষের পাশে বসুন্ধরা শুভসংঘ আগেও ছিল, এখনো আছে, আগামীতেও থাকবে ইনশাআল্লাহ।
বিডি প্রতিদিন/কেএ