চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) 'সেকেন্ড টাইম' ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ না থাকায় অনেক শিক্ষার্থী থমকে গিয়েছিলেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন যেন পূরণ করবেই তারা। তাই তারা মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিয়ে নিজেকে যোগ্য করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা দেয়। এদের মধ্যে এ, বি ও সি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় প্রায় ৪০০ শিক্ষার্থী। কিন্তু প্রশাসন বলছে তারা ভর্তি হতে পারবে না। এতে কান্নায় ভেঙে পড়েন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
অন্যদিকে প্রশাসনের একটি ভুল সিদ্ধান্তে 'ডি' ইউনিটে দুই দফা পরীক্ষা নেয়ার পর মানোন্নয়ন দেয়া শিক্ষার্থীদের রেজাল্ট দেয়া হয়নি। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে চলছে সমালোচনার ঝড়।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের ভুলের কারণে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে 'ডি' ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা দুই দফা নেওয়া হয়। প্রায় সাতদিন পর 'ডি' ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয় বৃহস্পতিবার রাতে। এতে গত বছর আবেদনের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও মানোন্নয়ন দেয়া শিক্ষার্থীদের ফল প্রকাশ করেনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অন্য ইউনিটগুলোতে তাদের ফল প্রকাশ করলেও ডি ইউনিটে তাদের বাদ দিয়ে ফল প্রকাশ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন তারা। এদিকে বিষয়টি নিয়ে পরস্পর বিপরীতমুখী কথা বলছেন ভর্তি পরীক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্তৃপক্ষ।
ডি ইউনিটের কো অর্ডিনেটর ও শিক্ষা অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন প্রফেসর ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, গত বছর যারা ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে ডি ইউনিটের প্রকাশিত ফলে তাদের নাম আসেনি। এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমাদের কমিটির সিদ্ধান্ত।
অন্যদিকে ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব ও একাডেমিক শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার এসএম আকবর হোছাইন সাংবাদিকদের বলেন, ওএমআর শিটে শিক্ষার্থীদের ত্রুটির কারণে ডি ইউনিটে কিছু শিক্ষার্থীর ফল প্রকাশ হয়নি। এছাড়া সব শিক্ষার্থীর ফল প্রকাশিত হয়েছে।
শতাধিক শিক্ষার্থী কি ওএমআর শিটে ভুল করতে পারে?এ ধরনের প্রশ্নে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে অন্য ইউনিটে মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ এবং গত বছরের আবেদনের যোগ্য একাধিক শিক্ষার্থী ডি ইউনিটে তাদের ফলাফল না আসা ও অনেকের সিরিয়াল এত দূরে আসছে যেন সে বিশ্বাসই করতে পারছেনা এ বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো নিজেদের মতামত জানিয়ে প্রশাসনের সুদৃষ্টির আবেদন জানান। আবার অনেকে প্রতিবেদককে জানিয়েছেন বিষয়টি।
মানোন্নয়নের শিক্ষার্থী ইমাম হোসেন দায়িত্ব নিয়ে বলেন, অন্তত ৩১৯ জন শিক্ষার্থীর সাথে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে যাদের অন্য ইউনিটের ফলাফলে নাম আসলেও ডি ইউনিটে কারোরই নাম আসেনি। প্রকাশিত ফলাফলে আমাদেরকে ‘অ্যাবসেন্ট অর ক্যানসেল্ড’ দেখাচ্ছে।
তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন আমাদের স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেনি। এছাড়াও অন্য ইউনিটে আমাদের মধ্যে যারা উত্তীর্ণ হয়েছে তাদের বিষয়ে প্রশাসন খোলাসা করে কিছু বলেনি। প্রথম দুইদিন ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে দিলেও গত পরশু আমাদেরকে ক্যম্পাস থেকে বের করা দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে আমরা শহরে গিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করি।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার রাতে প্রকাশিত ফলে পাশের হার ছিল ৩৪ শতাংশ। অর্থাৎ ১৫ হাজার ২৫৫ জন শিক্ষার্থী পাস করেছেন।
পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ৪৪ হাজার ৮৬৮ জন শিক্ষার্থী। এর আগে গত ২৮ অক্টোবর দুইব শিফটে ‘ডি’ ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ওইদিন ন্যাশনাল কারিকুলামের (ইংরেজী মাধ্যম) শিক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্র ছাপানোর বিষয়ে ত্রুটির কারণে ফলাফল প্রকাশ স্থগিত করে কর্তৃপক্ষ। গত ৬ নভেম্বর ন্যাশনাল কারিকুলামের ২০৭ জন শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে পুনঃপরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
ডি ইউনিটে আবেদন করেন ৫২ হাজার ৯১৭জন শিক্ষার্থী। পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিলেন ৮ হাজার ৪৯ জন।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত