শিরোনাম
১৬ এপ্রিল, ২০২১ ১৮:০৪

রাবিতে রাতের আঁধারে লুট হচ্ছে মাটি!

মর্তুজা নুর, রাবি

রাবিতে রাতের আঁধারে লুট হচ্ছে মাটি!

রাতে আঁধারে ঢেকে পড়েছিলো পুরো শহর। অন্ধকারে চারিদিকে ছিলো শুনসান নিরবতা। কেবল কাছের মজসিদগুলো থেকে ভেসে আসছিলো রজমানে তারাবির নামাজের আল্লাহু আকবর শব্দ। কেউ কেউ যখন ইবাদাত বন্দিগিতে মশগুল, তখন একদল মাটি খেকো, লুটতরাজ বাহিনী লুট করছিলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসের মাটি।

ক্যাম্পাসের চৌদ্দপাই এলাকায় রাতের আঁধারেই ঢুকছিলো একের পর এক ট্রাক আর করছিলো লুটপাট। ক্যাম্পাসের পূর্ব এলাকা তখন পরিণত হয়েছিলো যেনো এক লুটতরাজের রাজ্যে।

এমন অরাজ্যকতা ও লুটপাটের ঘটনাটি গত বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) রাতের। এদিন রাত ৯ টায় ক্যাম্পাসের মাটি লুটের খবর পেয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেলো, ক্যাম্পাসের চৌদ্দপাই এলাকা থেকে বদ্ধভূমি এলাকা পর্যন্ত একসঙ্গে মাটি লুট করছে ৫০ টির বেশি ট্রাক।

এই মাটি কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, কারা নিয়ে যাচ্ছে সে বিষয়ে কথা বলতে চাইলে অপারগতা প্রকাশ করেন ট্রাক ড্রাইভাররা।

তবে মাটি নিয়ে যাওয়াতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মৌখিক অনুমতি রয়েছে এমন তথ্য জানান একাধিক ড্রাইভার। আর এই মাটিগুলো বিভিন্ন ইট ভাটায় ট্রাক প্রতি ৫ হাজার টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানান তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাবি প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইজারাদারকে একাধিকবার নিষেধ করার পরও নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে গত কয়েকদিন থেকে তারা একই কাজ করছেন। ইজারাদারদের কাছে নিরুপায় হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইজারাদারদের মাটি নিয়ে যাওয়া থেকে কেন আটকাতে পারছে না কিংবা ইজারাদার কীসের প্রভাব খাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিষেধাজ্ঞা মানছে না সেই বিষয় নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয় যে কেউ ইচ্ছা করলেই যা খুশি নিয়ে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ প্রশাসনকেই করতে হবে। নিষেধাজ্ঞার পরও যখন মাটি নেয়া আটকানো যাচ্ছে না তখন প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্যের মেয়াদের শেষ লগ্নে এসে যে লুটপাট হচ্ছে তা একেবারে অভূতপূর্ব।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছর মার্চ মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা হলের পূর্বপাশের প্রায় ১০ বিঘা জমিতে পুকুর তৈরির জন্য টেন্ডার হয়। রাজশাহীর স্থানীয় একাধিক প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতারা দরপত্রে সর্বোচ্চ দর দিয়ে চার বছরের জন্য পুকুরের ইজারা পান। কিছুদিন আগে সেখানে পুকুর খননের কাজ শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রকল্প এই বিষয়গুলোর দেখভাল করে।

কৃষি প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী খননের পর পুকুরের পাড় বাঁধাই করে অতিরিক্ত মাটি পাশেই রাখতে হবে। এই মাটি ব্যবহারের বিষয়ে কৃষি প্রকল্প সিদ্ধান্ত নেবে।

তবে পুকুর খননের মাটি ট্রাক্টরে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে নেওয়ার বিষয়ে সত্যতা পেয়েছে কৃষি প্রকল্প। এর প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাটি ক্যাম্পাসের বাইরে না নিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। অথচ সেই নির্দেশনা অমান্য করে গত কয়েকদিন থেকে ক্যাম্পাসের এসব মাটি বাইরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

 এমন ঘটনার প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কৃষি প্রকল্পের উপদেষ্টা কমিটি ইতিমধ্যে একাধিক মিটিং করেছেন।  কিভাবে এই মাটি লুট বন্ধ করা যায়, সে বিষয়ে নানা পদক্ষেপের কথাও চিন্তা করেছেন। থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করার চিন্তাভাবনা করছিল তারা।  তবে এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের সম্মতি না থাকায় থানায় অভিযোগ করা সম্ভব হয়নি বলে কৃষি প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি প্রকল্পের উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেন, মাটি লুট বন্ধ করতে আমরা অনেক চেষ্টা করছি। কিন্তু ঊর্ধ্বতন অদৃশ্য শক্তির কারণে সেটা সম্ভব হচ্ছে না।

কৃষি প্রকল্প উপদেষ্টা কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা যাদেরকে নিষেধ করেছিলাম, তারা বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়া তাদেরকে মাটি বাইরে নেয়ার জন্য মৌখিক অনুমতি দিয়েছেন। সেই অনুমতির ভিত্তিতেই তারা ক্যাম্পাস থেকে মাটি নিয়ে যাচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সিনিয়র অধ্যাপক বলছেন, বর্তমান প্রশাসন দায়িত্বে আসার পেছনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের একটা বড় প্রভাব ছিল। কিন্তু গত চার বছরে তাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তেমন কিছুই করতে পারেনি। তাই বর্তমান প্রশাসনের শেষ সময়ে এসে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনী ব্যবস্থা নিতে পারছে না।

এ বিষয়ে  উপাচার্য চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, কৃষি প্রকল্প আমার অধীনে না। যারা আমার বিরুদ্ধে দোষারোপ করছে, তারা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। ওখানে  কাউকে আমার কোনো মৌখিক অনুমতি দেয়া নেই।

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর