২৫ অক্টোবর, ২০২১ ১৮:৪৩

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে অবরুদ্ধ শিক্ষক-কর্মকর্তারা ৯ ঘণ্টা পর মুক্ত

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে অবরুদ্ধ শিক্ষক-কর্মকর্তারা ৯ ঘণ্টা পর মুক্ত

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

১৪ ছাত্রের চুল কর্তনের বিষয়ে সিন্ডিকেট সভায় কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করায় ফের আন্দোলনে নেমেছে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়। চতুর্থ দিনের মতো শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে অবস্থান ধর্মঘট পালন করছে।

অন্যদিকে, রবিবার সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে ক্লাস ও পরীক্ষায় ফেরাতে রেজিস্ট্রারসহ ৩৫ প্রক্টর, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বোঝাতে একাডেমিক ভবনে প্রবেশ করলে তাদের একাডেমিক ভবনে অবরুদ্ধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। পরে ভোর চারটার দিকে পুলিশ-প্রশাসনের সহযোগিতায় তারা মুক্ত হয়ে বাসায় ফেরেন। এ অবস্থায় শিক্ষাঙ্গনের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে শিক্ষামন্ত্রীর জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থী আবু জাফর, সাব্বির হোসেন, বেনজির নুসরাত বিভা ও আমিনুর রহমান জানান, ক্যাম্পাসে অবস্থান ধর্মঘট অব্যাহত রয়েছে। মহাসড়ক অবরোধের সিদ্ধান্ত হলেও স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ক্যাম্পাসে এসে আলোচনা করে আশ্বাস দিয়েছেন ভিসির সাথে বৈঠক করে শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়টি নিয়ে সুরাহার ব্যবস্থা করবেন। একারণে মহাসড়ক অবরোধ করা হয়নি।

তারা আরও জানান, রবিবার ট্রেজারারসহ সকল শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ক্যাম্পাসে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। ভোরের দিকে রেজিস্ট্রার সোহরাব আলী স্থানীয় যুবলীগ ও পুলিশ নিয়ে এসে আমাদের বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে তাদের বের করে নিয়ে যায়। এতে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। দাবি পূরণ না হলে আন্দোলন চালিয়ে যাবে বলে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন।

শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শামসুজ্জোহা জানান, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা হয়েছে। জনভোগান্তি হয় বা মহাসড়ক অবরোধ এমন কোনো কর্মসূচি থেকে বিরত থাকবেন তারা। আর তাদের দাবির বিষয়টি নিয়ে ভিসির সাথে আলোচনা করা হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন। ইতিমধ্যে ভিসির সাথে কথা হয়েছে। তিনিও আলোচনায় বসবেন।

ভিসি আব্দুল লতিফ জানান, রাতে শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা হয়েছে। রাতে তারা শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের মুক্ত করে দিয়েছেন। তারপরেও শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে, যাতে তারা কোনো অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি না করে।

সিন্ডিকেট সভার বিষয়ে তিনি জানান, কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ছোটখাট আইনি বিষয় খতিয়ে দেখতে হয়। সিন্ডিকেট সভায় এ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার জন্য কয়েকদিনের সময় হাতে নিয়ে সিন্ডিকেট সভা মুলতবি করা হয়েছে। আইনি বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে কয়েকদিনের মধ্যে সিন্ডিকেট সভার আহ্বান করে অভিযুক্ত শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, গত ২৬ সেপ্টেম্বর রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন নিজেই কাঁচি হাতে ১৪ শিক্ষার্থীর চুল কেটে দেন বলে অভিযোগে ওঠে। সেই শিক্ষার্থীদের একজন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলে তাকে বকাঝকা করায় আত্মহত্যার চেষ্টা করলে ক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়।

এ পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিন প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন সহযোগী অধ্যাপক ফারহানা ইয়াসমিন। যদিও তিনি শিক্ষার্থীদের চুল কেটে দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন। ওই ঘটনায় ফারহানা ইয়াসমিনকে অপসারণের দাবিতে অনশন শুরু করে একদল শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের চলমান অবস্থায় চুল কাটার একটি সিসি টিভি ফুটেজ ভাইরাল হয়।

এরপর ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় ফারহানা ইয়াসমিনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। পাশাপাশি একটি বিজ্ঞপ্তিতে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার নির্দেশনা হয়। এ অবস্থায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অনশন তুলে নিয়ে প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অবরোধে করে সামনে অবস্থান করতে থাকে। পরে শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করেছিল। এরপর তদন্ত কমিটির কাছে নির্যাতিত ছাত্র, প্রত্যক্ষদর্শী, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা সাক্ষ্য দিলেও শিক্ষিকা ফারহানা সাক্ষ্য না দিয়ে দুই সপ্তাহের সময় প্রার্থনা করেন।

তদন্ত কমিটি প্রথমে ৩ দিন, পরে আরও ৬ দিন ও সব শেষে ১৪ দিন সময় দেন। এ সময়ের শেষ দিন গত বৃহস্পতিবারও তিনি সাক্ষ্য দিতে আসেননি। ফলে তাকে আর সময় না দিয়ে তদন্ত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় শুক্রবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু সভায় কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই মুলতবি ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকেই শিক্ষার্থীরা ফের আন্দোলনে নামেন।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর