৩১ মে, ২০২৩ ২১:৪৬

লিফট কিনতে তুরস্কে যাচ্ছেন পাবিপ্রবির প্রতিনিধিদল

পাবনা প্রতিনিধি

লিফট কিনতে তুরস্কে যাচ্ছেন পাবিপ্রবির প্রতিনিধিদল

ফাইল ছবি

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান প্রকল্পের নির্মানাধীন ভবনের লিফট কিনতে তুরস্ক যাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় কর্মকর্তা। এর ভেতর চারজন প্রকৌশলী হলেও উপ-উপাচার্য ও কোষাধাক্ষ্য লিফট সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ নন বলে জানা গেছে। প্রকল্পের শিডিউল অনুযায়ী- শুরুতে ইউরোপিয়ান লিফট সংযোজনের কথা থাকলেও পরে তুরস্কের লিফট কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হলেও নিয়মতান্ত্রিক ভাবেই সফরের আয়োজন করা হয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) প্রকৌশলী লেফট্যানেন্ট কর্ণেল (অব:) জিএম আজিজুর রহমান স্বাক্ষরিত এক পত্রে জানানো হয়েছে- বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. এস এম মোস্তফা কামাল খান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কে এম সালাহ উদ্দিন, বিশবিদ্যালয়ের প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) ফরিদ আহমেদ, উপ-প্রকৌশলী রিপন আলী (ইইই), জহির মুহা: জিয়াউল আবেদীন (সিভিল) ও প্রকল্প পরিচালক জিএম আজিজুর রহমান। তারা চলমান পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের বিভিন্ন স্থাপনার লিফট সংগ্রহের জন্য গঠিত প্রাক-জাহাজিকরণ পরিদর্শন দল তুরস্ক ভ্রমণ করবেন।

প্রকল্প কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে- চিঠিতে ৯ মে থেকে ১৯ মে ভ্রমণের কথা উল্লেখ থাকলেও ৬ জুন ভ্রমণের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে আহŸানকৃত টেন্ডার শিডিউলের মাধ্যমে লিফটগুলো কেনা হবে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, প্রকল্পের শর্ত অনুযায়ী উন্নয়ন প্রকল্পের প্রতিটি জিনিস যাচাই-বাছাই করে করা হচ্ছে। লিফট কেনার আগে তা চাহিদা অনুযায়ী হচ্ছে কি না, সেটি যাচাই করে নেওয়ার জন্য এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় তহবিলের কোনো অতিরিক্ত খরচ হবে না বলেও জানান তিনি। 

নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান (ঠিকাদার) এ ব্যয়ভার বহন করবে। এ জন্য প্রকল্পের কোনো অতিরিক্ত অর্থ খরচ হবে না এবং বিশ্ববিদ্যালয়েরও কোনো অর্থ খরচ হবে না। ঠিকাদার তার কাজের শর্ত অনুযায়ী এর ব্যবস্থা করবেন। ঠিকাদার তার লাভের টাকা থেকে আপনাদের এ ট্যুরের ব্যবস্থা করছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি সদুত্তর দেননি। 

ইউরোপীয় লিফটের পরিবর্তে তুরষ্কের লিফট কেন কেনা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রকল্প অনুমোদনের সময়ের চেয়ে বর্তমানে লিফটের দামের ফারাক রয়েছে। তবে শিডিউল অনুযায়ী নির্ধারিত স্পেসিফিকেশন নিশ্চিত করেই লিফট কেনা হবে। 

প্রসঙ্গত, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮০ কোটি টাকার কাজ ২০২১ সালের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও দুই দফায় সময় বাড়িয়ে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে কাজের ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। 

এদিকে লিফট কেনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ সর্বত্র সমালোচনা চলছে। কেনাকাটার নামে বিদেশ ভ্রমণ সরকারি অর্থের অপচয় বলেও মন্তব্য করেছেন অনেকে।

এ ব্যাপারে পাবনা জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক এবিএম ফজলুর রহমান বলেন, বর্তমান সময়ে লিফট কিনতে বিদেশে যাওয়ার দরকার হয়না। এগুলো সরকারী অর্থের অপচয় করে নিজেদের প্রমোদ ভ্রমণের জন্য যুক্তি দেখানো হচ্ছে। সারা দেশের ন্যায় বিশাল বিশাল বিল্ডিং নির্মাণ করা হচ্ছে, কেউ কখনো বিদেশে যাচ্ছেন না। সম্প্রতি পাবনার রুপপুর প্রকল্পেও অনেকগুলো ২০ তলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। তারাও যাননি বিদেশে। পাবিপ্রবির সামান্য ২৫টি লিফট কেনার জন্য কেন অর্থ অপচয় করে বিলাসবহুল সফর করতে হবে, তার আমার বোধগম্য নয়।

পাবনার অন্যতম সাংস্কৃতিক সংগঠন পাবনা ড্রামা সার্কেলের সভাপতি সাজিদ সুজন বলেন, লিফট কেনার জন্য বিদেশ ভ্রমণের বিষয়টি নিছক প্রমোদ ভ্রমণ। এই প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম দূর্নিতী হয়েছে। তারা আমোদ ফূর্তি করতেই এই অযৌক্তিক ভ্রমণের আয়োজন করেছেন। পাবনাবাসী বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার রয়েছেন, এই অযৌক্তিক ভ্রমণ বাতিল না হলে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহন করা হবে বলেও তিনি হুসিয়ারী উচ্চারণ করেন। 

সুশাসনের জন্য নাগরিক পাবনার সভাপতি আব্দুল মতীন খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনের লিফট কেনার জন্য শিক্ষকদের বিদেশ ভ্রমন মোটেও যুক্তিযুক্ত নয়। ঠিকাদারের খরচে গেলেও ঠিকাদার তো বাড়ি থেকে টাকা এনে তাদের দিয়ে এই ভ্রমণ করাবেন না নিশ্চয়ই। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম মোস্তফা কামাল খান বলেন, লিফট ক্রয় করার বিষয়টি চার বছর আগের প্রকল্প। এই ভ্রমণের সাথে লিফট কেনার কোনো সম্পর্ক, কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টতা নেই। আপনি তো এক্সপার্ট না লিফট সম্পর্কে তাহলে এই ভ্রমণে যাওয়াটা কতটুকু য়ৌক্তিক এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রকল্প পিরচালক আমাকে এই ভ্রমণ দলের দলনেতা করেছেন বিধায় যেতে হচ্ছে। আমি তো লিফট বিশেষজ্ঞ হিসেবে যাচ্ছি না বলে জানান তিনি। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন বলেন, সফরের বিষয়টা অনেক আগে থেকেই অনুমোদন করা ছিল, সফরটি আরো আগে হওয়ার কথা থাকলেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাকে সম্মান করতেই বিলম্বে করা হয়েছে। 


বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর