কে হচ্ছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পরবর্তী উপ-উপাচার্য (শিক্ষা)? বিষয়টি ণীয়ে আলোচনা এখন ক্যাম্পাসের সর্বত্র। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, রাজনীতিবিদ, ছাত্রনেতা সকলের মুখে এখন এ আলোচনা।
আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দক্ষতার সাথে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতির ভারসাম্য ধরে রাখার জন্য উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) নিয়োগকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন শিক্ষক নেতারা।
বিশ্ববিদ্যালয়টিতে দীর্ঘ প্রায় এক বছর ধরে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) নেই। ফলে উপাচার্যকেই উপ-উপাচার্যের (শিক্ষা) সব কাজ সামাল দিতে হচ্ছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়টির একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজে প্রায়ই দীর্ঘসূত্রিতা দেখা যায় বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১২ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) হিসেবে অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের মেয়াদ শেষ হয়। এর আগে, গত ২ মার্চ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মো. নূরুল আলম উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব পালন শুরু করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৭৩ এর ১১(২) ধারা অনুযায়ী তাকে উপাচার্য পদে সাময়িকভাবে নিযুক্ত করা হয়। এরপর অধ্যাদেশের ১১(১) ধারা অনুযায়ী প্যানেল নির্বাচনের মাধ্যমে উপাচার্যের পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করেন অধ্যাপক মো. নূরুল আলম।
তবে প্রায় এক বছর পার হলেও উপ-উপাচার্যের (শিক্ষা) শূন্য পদে এখন পর্যন্ত কাউকে নিয়োগ না দেওয়ায় উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ছাড়াই সিনেট, সিন্ডিকেট, অর্থ কমিটি ও একাডেমিক কাউন্সিলসহ গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও একাডেমিক কাজে গতিশীলতা ও স্বচ্ছতা আনতে উপ-উপাচার্যের (শিক্ষা) নিয়োগ জুরুরি প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন একাধিক জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক।
এদিকে, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) হওয়ার দৌঁড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন অধ্যাপক এগিয়ে রয়েছেন বলে জানা গেছে। তারা হলেন- আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ হেল কাফি, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক বশির আহমেদ, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ। তাদের তিনজনের নাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতোমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।
এদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষক নেতা অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হেল কাফি গত বছর অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনে ৫ম স্থান অর্জন করেন। উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনে নিজের অবস্থান পোক্ত করার পর উপ-উপাচার্যের তালিকায় তার নাম থাকাতে উপ-উপাচার্যের দৌঁড়ে তিনি এগিয়ে রয়েছেন বলে মনে করছেন অনেকেই।
অধ্যাপক কাফী বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ নং হলের প্রাধ্যক্ষের দায়িত্বে রয়েছেন। এর আগে, তিনি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রাধ্যক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাধ্যক্ষ কমিটির দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে তিনি যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য হতে না পারেন সেজন্য যৌন নিপীড়নসহ বিভিন্ন ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে নানামুখী ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে দাবি করেন এ অধ্যাপক।
এদিকে, এগিয়ে থাকা আরেক অধ্যাপক বশির আহমেদ সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। তিনি এর আগে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন, শেখ হাসিনা হলের প্রাধ্যক্ষ, প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি, জাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
বর্তমানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে এ অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ছাত্রজীবনে ছাত্রদলের রাজনীতিতে যুক্ত থাকাসহ কতিপয় অভিযোগ রয়েছে। যদিও তিনি এ অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন।
তালিকায় এগিয়ে থাকা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ বাংলাদেশের বন্যপ্রাণীর শিক্ষা, গবেষণা ও সংরক্ষণে অসামান্য অবদানের জন্য জাতীয় পুরস্কার স্বর্ণপদক 'বঙ্গবন্ধু পুরস্কার ফর ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন-২০১৪' লাভ করেন। তিনি একাধারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি, সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য ছিলেন। এছাড়াও গবেষক হিসেবে তার খ্যাতি রয়েছে। তবে এ অধ্যাপক বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু আদর্শের শিক্ষক রাজনীতিতে কখনো সক্রিয় ছিলেন না।
এদিকে, কয়েকদিন ধরে অধ্যাপক ফিরোজের নাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলরের বরাবর সুপারিশ করেছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্রে জানা যায়, আওয়ামীপন্থী শিক্ষক নেতা অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হেল কাফি ও অধ্যাপক বশিরের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে সমালোচনামূলক একাধিক সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় অধ্যাপক ফিরোজের নাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সবশেষ প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর যাকে উপ-উপাচার্যের (শিক্ষা) পদের জন্য মনোনীত করবে, তিনিই পরবর্তী উপ-উপাচার্য হবেন।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ