রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ২০২২-২৩ সেশনে স্নাতক প্রথমবর্ষ ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতা মুশফিক তাহমিদ তন্ময়সহ চারজনের নামে মামলা হয়েছে। এ মামলায় আহসান হাবীব নামের একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার নগরীর মতিহার থানায় এ মালালা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুহুল আমিন।
এই কর্মকর্তা জানান, ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই মামলা করেছে। এ মামলায় আসামি আহসান হাবীবকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদেরও গ্রেফতারের প্রক্রিয়া চলছে।
মামলায় পলাতক আসামিরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুশফিক তাহমিদ তন্ময়, শেরে বাংলা হল ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ, শিক্ষা ও গবেষণা ইনিস্টিউটের শিক্ষার্থী শাকোয়ান সিদ্দিক প্রাঙ্গণ ও লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মহিবুল মমিন সনেট সহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজন।
মালালার এজহার সূত্রে ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৩১ মে রাবির সি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় আহসান হাবীবের হয়ে টাকার বিনিময়ে অন্য জন প্রক্সি দেয়। এই প্রক্সি জালিয়াতির বিনিময়ে এই শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনিস্টিউটের শিক্ষার্থী শাকোয়ান সিদ্দিক ওরফে প্রাঙ্গণ ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা নেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করার শর্তে চার লাখ ৮০ হাজার টাকার চুক্তি হয়। পরীক্ষার পর ভর্তির সুযোগ পান আহসান। মেরিট অনুযায়ী গতকাল ১৭ আগস্ট পপুলেশন সায়েন্সেস এন্ড হিউম্যান রিসোর্স বিভাগে ভর্তি হন তিনি। কিন্তু চুক্তির বাকি টাকা না পেয়ে ক্যাম্পাস থেকে আহসানকে তুলে নিয়ে যান প্রাঙ্গণ ও তার সহযোগিরা।
আহসানের ভাষ্য মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা হলে আটকে রেখে তার পরিবারের নিকট আরও তিন লাখ টাকা দাবি করেন প্রাঙ্গণ। সেখানে ছিলেন শেরে বাংলা হল ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ।
পরে রাজু টাকা দাবির বিষয়টি স্বীকার করে জানান, প্রাঙ্গণ ও লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মহিবুল মমিন সনেট তার নিকট টাকা পায় বলে হলে আনেন এবং এই টাকা তোলার জন্য আমাকেও জানায়। তখন তাদের সঙ্গে আমিও ছিলাম। তবে প্রক্সি কিংবা টাকা নেয়ার ব্যাপারে আমি সম্পৃক্ত নই।
এদিকে ছেলেকে না পেয়ে প্রক্টর দপ্তরে অভিযোগ জানান আহসানের মা রেহেনা বেগম। পরে বিষয়টি জানতে পেরে প্রক্টরিয়াল টিম শেরে বাংলা হল থেকে আহসানকে উদ্ধার করে এবং তাকে জিজ্ঞেসাবাদের পর ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির বিষয়টি সামনে আসে।
এদিকে, ছেলেকে অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবির অভিযোগ এনে একটি মামলা করেছেন আহসান হাবীবের মা রেহেনা বেগম ও বাবা সাইফুল ইসলাম। এ মামলায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুশফিক তাহমিদ তন্ময়, প্রাঙ্গণ, সাকিব ও রাজু সহ অজ্ঞাতনামা আরো কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।
শুক্রবার নগরীর মতিহার থানায় এ মামলা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুহুল আমিন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, প্রক্সি দিয়ে ভর্তি করানোর শর্তে যে টাকা চুক্তি হয়, সেই টাকা পরিশোধ না করায় আসামিরা আহসান হাবীবকে তুলে নিয়ে মারধর ও মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না পেলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার কথা এজহারে জানানো হয়।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ নেতা মুশফিক তাহমিদ তন্ময় জানান, এ ঘটনার সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা নেই। সামনে শাখা ছাত্রলীগের কমিটি, তাই আমাকে ফাঁসানো চেষ্টা করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক জানান, ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির বিষয়ে আহসান হাবীবকে জিজ্ঞেসাবাদ করার পর কিছু নাম পাওয়া গেছে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীও আছে। তাই বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাছাড়া জালিয়াতির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সেটার বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত