বৃহস্পতিবার রাতে টানা বর্ষণে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল এবং সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের একটি অংশে। এতে স্বাভাবিক চলাফেরায় বিঘ্নসহ খাবার পানি’র সমস্যায় পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী ও বঙ্গমাতা ফজিলাতন্নেছা হলের ছাত্রীরা কার্যত পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।
বৃহস্পতিবার রাতের বৃষ্টিতে জমা পানিতে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত অবস্থার খুব বেশি উন্নতি হয়নি।
কুয়েত মৈত্রী ও বঙ্গমাতা হলের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাতে বৃষ্টির পর কুয়েত মৈত্রী হলের নিচতলা পর্যন্ত পানি উঠে গেছে। আজ সকাল নাগাদ রুম থেকে পানি নেমে গেলেও হলের অভ্যন্তরে এখনও পানি জমে আছে। পানি খুব কম গতিতে নামছে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর এখনও বিদ্যুৎ আসেনি। বিদ্যুৎ না থাকা ও পানির কারণে হলের পানির পাম্প চালু না হওয়ায় খাবার ও নিত্য ব্যবহার্য পানির সংকট দেখা গেছে।
অন্যদিকে, বঙ্গমাতা হলেও একই পরিস্থিতি দেখে গেছে। সেখানেও গতকাল থেকে বিদ্যুৎ নেই। খাবার পানিরও সংকট তৈরি হয়েছে।
মৈত্রী হলের আবাসিক শিক্ষার্থী নুসরাত জানান, হলের ভিতরে পানি জমে থাকায় স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করা যাচ্ছে না। হলের রিজার্ভ যে পানি আছে, তাও শেষের পথে। সবমিলিয়ে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
অন্যদিকে, বঙ্গমাতা হলের শিক্ষার্থী সিফাত তাসনীম জানান, হলের ভিতরে ও রাস্তায় পানি জমে আছে। এদিকে, বিদ্যুৎ না থাকায় ফোনের চার্জ শেষ হয়ে আসছে। ফোন বন্ধ হয়ে গেলে তো যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবো। অনেকেই কাল পরশু পরীক্ষা আছে। তারা পড়াশুনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে মৈত্রী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাজমুন নাহার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের হলের অবস্থা আসলে খুবই খারাপ। রাতে তো মেয়েদের হলে পানি উঠে গিয়েছিল। পানি নামছে তবে আমাদের দুই হল এবং সমাজকল্যাণ ইনস্টিটিউটের সব পানি একটি মাত্র চ্যানেল দিয়ে বিজিবি কেয়ার্টায় হয়ে ঝিগাতলা দিয়ে বুড়িগঙ্গায় যাচ্ছে। ফলে, যে গতিতে পানি নামছে বিকেল নাগাদও পানি সরবে না। ইলেক্ট্রিক মেশিনে পানি উঠে গতকাল রাতে আর্থিং হয়ে ব্লাস্ট হয়ে গেছে। এজন্য ওনারা লাইন বন্ধ করে রেখেছেন। পানি না কমলে সংযোগ দেওয়া যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, আমরা সিটি কর্পোরেশন ও ওয়াসার সাথে যোগাযোগ করেছি। তাদের বিকল্প উপায়ে বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবস্থা করে দিতে বলেছি। তবে, আশঙ্কার ব্যাপার হলো, আবার যদি বৃষ্টি হয়, তবে অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যাবে।
এদিকে, ছেলেদের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ও সার্জেন্ট জহুরুল হক হলেও জলাবদ্ধতা দেখা গেছে। বৃহস্পতিবার ভারী বর্ষণের পর থেকে হলের মাঠ, মাঠের আশেপাশের অংশ এবং হল থেকে পলাশি যাওয়ার রাস্তা সব পানিতে ঢুবে যায়। হাঁটু সমান পানি হওয়ার কারণে হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সহ সংশ্লিষ্ট সকলের চলাচলের জন দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি হলের টিনশেড অংশের টয়লেটগুলোতে পানি উঠে যায়, যার ফলে এগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এদিকে, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের প্রবেশপথ ও খেলার মাঠ পানিতে ডুবে গেছে। তবে, হলগুলোর প্রধান ভবন উচু হওয়ায় সেগুলোতে পানি উঠেনি।
এ বিষয়ে জহুরুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ মো: আবদুর রহিম বলেন, আমি হল পরিদর্শন করেছি। শুধু হলে না রাতে আমার বাংলোতেও পানি উঠে গিয়েছিলো। এটা একটা দুর্যোগ তারপরও কী করা যায় এ বিষয়ে আমরা চিন্তা করছি। বিদ্যুতের ব্যাপারে আমি সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছি। যেখানে পানি জমেছে ঐসব স্থানে আমাদের কোনো ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যুৎ লাইন নেই। তবুও আমি কর্মচারীদের সতর্ক করে দিয়েছি। আশা করি আর বৃষ্টিপাত না হলে পানি নেমে যাবে।
হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ইকবাল মামুন বলেন, এখন দুর্যোগের সময় একটু সমস্যা তো হবেই। রাস্তার পানি নেমে গেলে হলের সামনের পানিও নেমে যাবে। হলের বিদ্যুৎ যাওয়ার ব্যাপারে কোনো অভিযোগ আমার কাছে আসেনি।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল