চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে ঐতিহ্যবাহী দুই কলেজের ছাত্রাবাস। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ ও ছাত্র শিবিরের দুই পক্ষের মারামারিতে বন্ধ হয়েছিল চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্রাবাস। দীর্ঘ ৫ বছর পার হলেও এখনো এসব ছাত্রাবাস খুলবে কি না তা নিয়ে এখনো নিশ্চয়তা দিতে পারছে না কলেজ প্রশাসন। একই অবস্থা পাশের সরকারি হাজী মুহম্মদ মহসিন কলেজেও।
দুই কলেজের ৮টি ছাত্রাবাস বন্ধ রয়েছে গত ৫ বছর ধরে। ফলে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা শিক্ষার্থীদের থাকতে হচ্ছে মেসে। এতে করে যে ব্যয় তা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে পরিবারগুলো। যার কারণে শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন, আর কত বছর বন্ধ থাকবে কলেজের হোস্টেল।
চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, আপাতত হোস্টেল খোলার কোনো পরিকল্পনা নেই। আগামী বছরের জানুয়ারি/ফেব্রুয়ারির দিকে হোস্টেল খোলার চিন্তাভাবনা করবো।
সরকারি হাজী মুহম্মদ মহসিন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর কামরুল ইসলাম বলেন, ২০১৫ থেকে কলেজের দুইটি হোস্টেল প্রশাসনের নির্দেশে বন্ধ রয়েছে। নতুন করে কোন নির্দেশনা আসেনি হোস্টেল খোলার বিষয়ে। আমরাও যার কারণে নিজ থেকে খোলার বিষয়ে আলোচনা করিনি।
চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিম বলেন, কলেজ হোস্টেগুলো দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকার কারণে তা এখন পরিত্যক্ত ভবনে রূপ নিয়েছে। আমরা কলেজ প্রশাসনের সাথে কথা বলেছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে তা সংস্কার করে যেন শিক্ষার্থীদের থাকার উপযোগী করা হয়। যেসব শিক্ষার্থী গ্রাম থেকে আসছে তাদের যেন নিরাপদ আবাস হয়। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের আড়ালে এখানে যেন কোন মৌলবাদী, জামায়াত শিবির ও জঙ্গিদের স্থান না হয় সে বিষয়ে কলেজ প্রশাসনকে নজর দিতে হবে।
চট্টগ্রামের প্রধান দুই কলেজের ছাত্রবাস বন্ধ থাকার কারণে চকবাজার ও আশেপাশের এলাকায় গড়ে উঠেছে বেসরকারি ছাত্র ও ছাত্রী হোস্টেল। এসব হোস্টেলে প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মাসে ক্ষেত্রভেদে ৬/৭ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে। অথচ সরকারি কলেজের হোস্টেলে খরচ মাত্র ১২শ’ টাকা। ছাত্ররা নানা উপায়ে থাকার ব্যবস্থা করলেও চট্টগ্রামে যে ছাত্রীদের কোনো আত্মীয়-স্বজন নেই তাদের চরম সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
জানা যায়, ১৯৮০ সাল থেকে এই কলেজে ছাত্রশিবির একক আধিপত্য ছিল। ২০১৫ সালে ছাত্রলীগ চট্টগ্রাম কলেজকে ছাত্রশিবিরের আধিপত্য মুক্ত করে একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। পরে ছাত্রলীগের দাবির মুখে কলেজ কর্তৃপক্ষ ৬টি ছাত্রাবাস বন্ধ করে দেয়। এর মধ্যে ৪টি ছাত্রদের ও ২টি ছাত্রীদের। এসব হোস্টেলে প্রায় ৭০০ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা ছিল। তবে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় এগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কোনো কাজ না থাকলেও হোস্টেলের কর্মচারীরা বেতন ভাতা ভোগ করে যাচ্ছেন। এই প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১৮ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। পাশাপাশি বন্ধ রয়েছে মহসিন কলেজের দুইটি ছাত্রবাসও।
বর্তমানে দুই কলেজে ছাত্রলীগের একক আধিপত্য চলছে। বিভিন্ন সময়ে ছাত্রলীগের গ্রুপ, উপ-গ্রুপ নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে আসছে। ফলে প্রশাসন আশঙ্কা করছে, হোস্টেল খুললেই হল দখলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের মধ্যে নিয়মিত সংঘর্ষ হতে পারে। তবে ছাত্রলীগ নেতারা সে আশঙ্কা ওড়িয়ে দিয়ে বলছেন, শিবির হল দখল করার আশঙ্কা রয়েছে। যার কারণে হল খুলছে না প্রশাসন।
সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, কোনো রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে বা তদবিরে নয় মেধার ভিত্তিতে যাছাই করে শিক্ষার্থীদের হল দিতে হবে। তাহলে কোন ধরণের সমস্যা হবে না। এখন আমাদের ব্যাচেলার বাসা ও বেসরকারি হোস্টেলে থাকলে প্রচুর খরচ হচ্ছে। অনেক পরিবারের পক্ষে সে খরচ বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে বন্ধ হোস্টেল চালু করার অত্যন্ত জরুরী।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল