২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ১৫:৩৬

অছাত্রদের কাছে আমি নিরুপায়: জাবি প্রাধ্যক্ষ

রুবেল হোসাইন, জাবি

অছাত্রদের কাছে আমি নিরুপায়: জাবি প্রাধ্যক্ষ

সংগৃহীত ছবি

‘অছাত্রদের কাছে আমি নিরুপায় ও অসহায়’ বলে মন্তব্য করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আল বেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মো. জুলকারনাইন। 

সম্প্রতি হলটিতে অবস্থানরত ছাত্রত্ব শেষ হওয়া শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এসব কথা বলেন। এসময়, তিনি ছাত্রত্ব শেষ হওয়া ৩ জন ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে হলের ক্যান্টিন দখল করে ভাড়া দেওয়ারও অভিযোগ করেন।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা হলেন জাবি শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মো. এনামুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক চিন্ময় সরকার, স্কুল ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন রকি। এদের মধ্যে এনামুল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেল্থ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের ৪৩ ব্যাচের, চিন্ময় পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ৪৪ ব্যাচের ও রকি অর্থনীতি বিভাগের ৪৫ ব্যাচের শিক্ষার্থী। 

ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার পরও এনামুল ও রকি আল বেরুনী হলের ২০১ নম্বর কক্ষ এবং চিন্ময় ২০৬ নম্বর কক্ষ দখল করে অবস্থান করছেন। তবে এনামুল হলে অনিয়মিত থাকেন বলে জানা গেছে। তিনি ওই কক্ষটিকে রাজনীতিক সভার জন্য ব্যবহার করেন বলে জানায় হলটির শিক্ষার্থীরা। তাদের তিন জনের বিরুদ্ধে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের হলের আসন থেকে নামিয়ে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে আল-বেরুনী হলের ক্যান্টিনটি মো. রেহান নামে একজন পরিচালনা করতেন। তবে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ফাও খাওয়া ও বাকির পরিমাণ অত্যধিক বেশি হওয়ায় প্রায় দেড় মাস আগে ক্যান্টিন চালানো বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। এতে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে পুনরায় ক্যান্টিন চালুর জন্য গত ২০ ফেব্রুয়ারি ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে হল প্রশাসন। ওই কমিটি ২২ ফেব্রুয়ারি ক্যান্টিন পরিচালনার আহ্বান জানিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। তবে ২০ ফেব্রুয়ারি বিকেলে প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে ক্যান্টিনের তালা ভেঙে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলার একটি হোটেলের এক কর্মচারিকে ক্যান্টিন পরিচালনার দায়িত্ব দেন হলটির ছাত্রলীগ নেতারা। হলটিতে অবৈধভাবে অবস্থানরত শাখা ছাত্রলীগ নেতা মো. এনামুল হক, চিন্ময় সরকার ও আনোয়ার হোসেন রকির নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ক্যান্টিনের তালা ভেঙেছেন বলে জানা গেছে। 

তবে হলটির ছাত্রলীগ নেতাদের অভিযোগ, ব্যবসায় লোকসান এবং ঋণগ্রস্ত হওয়ায় আগের ক্যান্টিন মালিক খাবার বিক্রি বন্ধ করে দেন। পরে একাধিকবার শিক্ষার্থীদের খাবারের ভোগান্তির কথা জানালেও ক্যান্টিন চালু করেনি হল প্রশাসন। ফলে বাধ্য হয়ে আবাসিক শিক্ষার্থীরা তালা ভেঙে আরেকজনকে ক্যান্টিন চালানোর দায়িত্ব দিয়েছে।

এবিষয়ে জাবি শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মো. এনামুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অনেকদিন ধরে ক্যান্টিন বন্ধ থাকায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের খাবারের সমস্যা হচ্ছিল। যার কারণে ছাত্ররা তালা ভেঙে ক্যান্টিন চালু করে। এ ঘটনায় আমি ছিলাম না। বরং হল প্রভোস্ট তার নিজের লোককে বরাদ্দ দেওয়ার জন্য ক্যান্টিন চালু করতে বিলম্ব করছিল।

ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার পরও হলে অবস্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে এনামুল বলেন, আমি হলে নিয়মিত থাকি না। মাঝেমধ্যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য হলে থাকা লাগে। হলের ২০১ নং কক্ষ থেকে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

তালা ভাঙার অভিযোগ অস্বীকার করে শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক চিন্ময় সরকার বলেন, হল প্রভোস্টকে একাধিকবার ক্যান্টিন চালু করতে বললেও করেননি। তিনি তার লোককে ভাড়া দেওয়ার জন্য কালক্ষেপণ করছিলেন। ভর্তি পরীক্ষাকে  কেন্দ্র করে ভোগান্তি লাঘবের জন্য হলের শিক্ষার্থীরা ক্যান্টিন চালু করেছে। 

অভিযোগ অস্বীকার করে একই কথা জানিয়েছেন ছাত্রলীগ নেতা আনোয়ার হোসেন রকি। 

বর্তমান ক্যান্টিন পরিচালক মো. ইয়াসিন বলেন, আল বেরুনী হলের কয়েকজন শিক্ষার্থী আমাকে ক্যান্টিন চালানোর অনুমতি দিয়েছে। তারা হল প্রশাসনের সাথে বুঝবে বলে জানিয়েছেন। তবে ওই শিক্ষার্থীদের নাম জিজ্ঞাসা করা হলেও বলতে রাজি হননি ইয়াসিন। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আল-বেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সিকদার মো. জুলকারনাইন বলেন, ‘আগের ক্যান্টিন পরিচালক চলে যাওয়ার কারণে ক্যান্টিন নতুন কাউকে বরাদ্দ দেওয়ার জন্য গত ২০ ফেব্রুয়ারি আমরা একটি কমিটি গঠন করি। কিন্তু কোন কিছু না বলেই ওইদিন বিকেলে হলের ক্যান্টিনের তালা ভেঙে ইয়াসিন নামে একজনকে দায়িত্ব দেয় সাবেক শিক্ষার্থী এনাম, চিন্ময় ও রকি। ওই ছাত্ররা অবৈধভাবে হলে অবস্থান করছে। আমি তাদের বিরুদ্ধে যতগুলো স্টেপ নেওয়ার নিয়েছি। একাধিকবার হল থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য বলেছি। বরং তারা উল্টো প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের বৈধ শিক্ষার্থীদের আসন থেকে নামিয়ে দিয়ে জোরপূর্বক কক্ষ দখল করে হলে থাকছে। অথচ, বৈধ শিক্ষার্থীরা মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।’

অছাত্রদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘যখনই আমি অছাত্রদের হল থেকে বের হওয়ার বিষয়ে কথা বলি তখনই তারা আমার বিরুদ্ধে নানা মিথ্যা অভিযোগ তোলে। এসব অছাত্রদের সাথে-তো আমি মারামারি করতে পারি না। আমি প্রাধ্যক্ষ কমিটি, প্রক্টর, উপাচার্যসহ সকলকে জানিয়েছি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে চিঠিও দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাইলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে। কারণ, হলের ক্যান্টিনের তালা ভাঙা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। এর বাইরে তো আমার কিছু করার নাই। আমরা হল প্রশাসন অসহায়। বলতে গেলে আমি অছাত্রদের কাছে নিরুপায়।’

এর আগে ২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর উন্নয়ন প্রকল্প থেকে টাকা না দেওয়ায় আল-বেরুনী হল সংলগ্ন খেলার মাঠ তৈরির কাজ বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে এনামুল হক, চিন্ময় সরকারসহ একাধিক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। সেসময়, টাকা ভাগবাটোয়ারা নিয়ে ছাত্রলীগের নেতারা প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। এরপর থেকে হল ছাত্রলীগ ও প্রাধ্যক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাড়তে থাকে বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা।

সর্বশেষ গতবছরের ১৫ নভেম্বর হলটিতে ইমাম ও নিরাপত্তা প্রহরী পদে পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগকে কেন্দ্র করে প্রাধ্যক্ষের কক্ষে তালা লাগিয়ে দেয় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা। এ ঘটনায় এখনো ওই নিয়োগ বোর্ড স্থগিত রয়েছে বলে জানিয়েছে হলটির এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা। যদিও সেসময় প্রাধ্যক্ষ সিকদার মো. জুলকারনাইনের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে গাফিলতিসহ একাধিক অভিযোগ তুলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে ছাত্রত্ব শেষ হওয়া কয়েকজন শিক্ষার্থীর নেতৃত্বে আল-বেরুনী হলের ক্যান্টিন চালু করার ঘটনাটি আমি শুনেছি। এ বিষয়ে শিগগিরই তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

বিডি প্রতিদিন/নাজমুল

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর