রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) শ্রেণিকক্ষে নারী শিক্ষার্থীদের হিজাব-নিকাব খুলতে বাধ্য করা ও ফোনে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হাফিজুর রহমানকে একাডেমিক কার্যক্রম থেকে পাঁচ বছর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার বিভাগের একাডেমিক কাউন্সিল সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
এ ব্যাপারে বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আশরাফ-উজ-জামান বলেন, শিক্ষার্থীদের অভিযোগের পর ঘটনা যাচাই-বাছাই করে ড. হাফিজুর রহমানকে একাডেমিক যাবতীয় কার্যক্রম থেকে পাঁচ বছরের জন্য অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এটা বিভাগের একাডেমিক কাউন্সিল সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরবর্তী কার্যক্রম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুসারে হবে।
এর আগে, গত ১১ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক হাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে নারী শিক্ষার্থীদের শরীর নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য, ক্লাসে হিজাব খুলতে বাধ্য করা, রাতে ফোন কল ও মেসেজ করে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ তোলে আন্দোলন করেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। পরে সভাপতির নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়ে ১০ বছরের জন্য একাডেমিক কার্যক্রম থেকে তার বহিষ্কার দাবি জানান।
মানববন্ধনে ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী ফাতেমাতুস্ সানিহা বলেন, আমরা তিনদিন মাত্র ক্লাস করেছি। একদিন ক্লাসে আমি একটা ছোট কাগজ দিয়ে বাতাস করছিলাম, তখন আমাকে বলেন, ‘এটা কি করছো’। তখন আমি জানাই, ‘গরমের জন্য বাতাস করছি স্যার’। এটা শুনে তিনি বলেন, ‘এটাতো খুবই দৃষ্টিকটু। এই রকম পোশাক পরে আসলে তো গরম লাগবেই। তোমার গরম তোমার কাছে রাখো’।
তিনি বলেন, আমার বান্ধবী মিমি একদিন জোড়ে প্রেজেন্ট দিয়েছে। কিন্তু স্যার বলে হয়নি, তোমার নেকাব খুলে তারপর দাও। আমার বান্ধবী তাহেরাকে বলেছে, এটা কেমন পোশাক? তিনি শুধু নিকাব নিয়ে কটূক্তি করেননি, ইসলামী সংস্কৃতি নিয়ে কটূক্তি করেছে। ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী হিসেবে এসব বিষয় খুবই দুঃখজনক।
এ ছাড়া ফোনে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের ডকুমেন্টস তুলে ধরে এ শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। এদিকে ১২ মার্চ দুপুরে একই দাবিতে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠন স্টুডেন্ট রাইটস অ্যাসোসিয়েশন।
সংগঠনের সভাপতি মেহেদী সজীব বলেন, শিক্ষক হিসেবে তার এমন আচরণ খুবই ন্যক্কারজনক। ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক হয়ে এমন আচরণ প্রত্যাশিত নয়। পর্দা একজন নারীর সম্মান। সে বিষয়ে কেউ হস্তক্ষেপ করার অধিকার রাখে না। ড. হাফিজুর রহমানের মতো গুটিকয়েক শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ক্ষুণ্ন করছে। অবিলম্বে তাকে শাস্তির আওতায় আনার জোর দাবি জানান তিনি।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে ড. হাফিজুর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সেটা সম্ভব হয়নি।
বিডি প্রতিদিন/এমআই