রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ‘ছাত্র রাজনীতি সংস্কার প্রস্তাবে ছাত্র নেতৃবৃন্দের বোঝাপড়া’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা হয়েছে। এতে ক্যাম্পাসে নতুন ধারার ছাত্র রাজনীতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাশে থাকতে চায় ছাত্রদল।
এদিকে, ছাত্র রাজনীতি সংস্কারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দিষ্ট রূপরেখা দাবি করেছে শিবির।
শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে স্টুডেন্ট রাইটস অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত সভায় এসব কথা হয়।
সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ খান বলেন, সংস্কারের আগে ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি থাকাবে কি না, সেটা নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত। কেননা দেশজুড়ে শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন এখন এটাই। লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি না রাখার কথা বলছি। কিন্তু আমার তো মনে হয় এদেশের ছাত্র রাজনীতির জন্মই লেজুড়বৃত্তির জন্য। যার জন্ম থেকেই লেজুড়বৃত্তি, সেটা রেখে কীভাবে সংস্কার হবে? ছাত্র রাজনীতির এমন চিত্র ভারতীয় উপমহাদেশ ছাড়া বিশ্বের কোথাও দেখা যায় না। তবে আমাদের নতুন করে ভাবার সময় এসেছে।
বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র শিবিরের সভাপতি আব্দুল মোহাইমেন বলেন, গত ১৫ বছরের ছাত্র রাজনীতিতে সিট দখল, হলে প্রভাব বিস্তার, বিরোধী মত দমন ও নিপীড়ন, টেন্ডারবাজি এগুলোই দেখেছি। ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীর মতো আমরাও এই ধরনের ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ চাই। তবে ছাত্র রাজনীতির যদি একেবারেই না থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে দেশে নেতৃত্ব কারা দেবে? সেজন্যই ছাত্র রাজনীতি দরকার। তাই এখনই সময় একটি সুনির্দিষ্ট রূপরেখা তৈরি। তা নাহলে আবার যে দল ক্ষমতায় আসবে, তারা আগের মতই কাজ করবে। আমরা এমন ছাত্র রাজনীতি চাই, যেটা হবে শিক্ষা ও গবেষণামূলক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি ছাত্রদের জন্য কাজ করবে। নেতৃবৃন্দ সৎ গুণাবলি সম্পন্ন হবে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলেও এই নীতিমালার পরিবর্তন হবে না। এমন একটি রূপরেখা প্রণয়নে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, বিগত সময়ে ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে শিক্ষার্থীরা ভীতসন্ত্রস্ত। সেই জায়গা থেকে শিক্ষার্থীরা ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধদের দাবি তুলছে। আমরাও মনে করি সেটা যৌক্তিক। মূলত শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের সেই সন্ত্রাসী ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ চেয়েছে। ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখতে ছাত্র রাজনীতিতে একটি দানবীয় রূপ দিয়েছিল শেখ হাসিনা। বিশ্ববিদ্যালয়ে কেউ সন্ত্রাসী হয়ে আসে না। কিন্তু আওয়ামী লীগ ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলে তারা সন্ত্রাসে পরিণত করেছিল। বিগত ১৫ বছর দেশে ভোটাধিকার থাকলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন দানব সন্ত্রাসী তৈরি হতো না। কারণ প্রকৃত গণতন্ত্র থাকলে পাঁচ বছর পর জনগণের কাতারে দাঁড়াতে হতো। কিন্তু সেটা না থাকার কারণে এই চিত্র তৈরি হয়েছিল। আমি মনে করি, দেশে ভোটাধিকার, সাম্য ও মানবিক, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হলে ছাত্র রাজনীতিতে আগের চিত্র থাকবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে ক্যাম্পাসে নতুন ধারার ছাত্র রাজনীতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার কথা জানান ছাত্রদল আহ্বায়ক। যেখানে মানবিক ও শিক্ষার্থীবান্ধব কাজই প্রাধান্য পাবে। ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের মতো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছাত্রদলের করার সুযোগ নেই। ছাত্রদল সন্ত্রাসী রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না।
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন স্টুডেন্ট রাইটস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী সজীব। এতে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম রেজার সঞ্চালনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক আখতার হোসেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিশ্ববিদ্যালয় সমন্বয়ক তাসিন খানসহ শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
বিডি প্রতিদিন/এমআই