রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যথাযথ মর্যাদায় মহান শিক্ষক দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি জাতীয় শিক্ষক দিবস ঘোষণার দাবিতে শতাধিক বিশিষ্টজন বিবৃতি দিয়েছেন। মঙ্গলবার দিবসটি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে 'জোহা স্মারক বক্তৃতা' অনুষ্ঠিত হয়।
এ অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, বাংলাদেশে জাতীয় শিক্ষক দিবস হিসেবে ১৮ ফেব্রুয়ারির চেয়ে উপযুক্ত দিন হতে পারে না। শহীদ জোহা শুধু এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নয় বরং সবার। তাকে জাতীয়ভাবে আলোচনার প্রয়োজন আছে। তার সবচেয়ে বড় লিগ্যাসি তিনি স্পষ্টত কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন না। তিনি ছিলেন ভীষণ রকম সততা, যোগ্যতা এবং কর্তব্যনিষ্ঠ শিক্ষক। তার ত্যাগ চিরস্মরণীয়। তবে সেটাকে সংকীর্ণ করে রাখা হয়েছে। অথচ ঊনসত্তরে শহিদ জোহা যেমন প্রাসঙ্গিক ছিলেন, তেমনি চব্বিশের অভ্যুত্থানেও ছিলেন। তাই অবিলম্বে দিবসটি জাতীয় শিক্ষক দিবস ঘোষণার দাবি জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তা ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশে উচ্চতর তত্ত্বজ্ঞান কেন্দ্রের পরিচালক ও লেখক অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান। তিনি 'শিক্ষার বাহন অথবা গণতান্ত্রিক জনশিক্ষা নীতির গোড়ার কথা' শীর্ষক আলোচনা করেন।
রসায়ন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক চৌধুরী জাকারিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যদ্বয় অধ্যাপক মাঈন উদ্দীন ও অধ্যাপক ফরিদ খান, শহিদ জোহার কন্যা সাবিনা জোহা খানসহ শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থীর।
এর আগে, সকালে শহিদ জোহা সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সাংবাদিক সংগঠন। তারাও দিবসটি জাতীয় শিক্ষক দিবস ঘোষণার দাবি জানান।
এদিকে শহিদ জোহা দিবসকে জাতীয় শিক্ষক দিবস ঘোষণার দাবি জানিয়ে লেখক, গবেষক, সাংস্কৃতিক ও সাংবাদিকসহ শতাধিক বিশিষ্টজন বিবৃতি দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে এ গণবিবৃতি স্বাক্ষর কর্মসূচি পালিত হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ শামসুজ্জোহার আত্মত্যাগ অবিস্মরণীয়। শিক্ষক সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে সেদিন তার আত্মত্যাগ সমগ্র দেশের মানুষকে একত্রিত করেছিল ও স্বৈরাচার আইয়ুব সরকারে পতন তরান্বিত করার পাশাপাশি একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করেছিল। শহীদ জোহার এ আত্মত্যাগ পরবর্তী সকল স্বাধিকার আন্দোলন-সংগ্রামে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণার রসদ জুগিয়েছে। অথচ স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও এ দেশে তার আত্মত্যাগের জাতীয় স্বীকৃতি মেলেনি। যা মহান এই শিক্ষকের আত্মত্যাগ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক অবদানের অবমূল্যায়ন। শিক্ষার্থীদের বিপদে প্রকৃত এ অভিভাবক বিশ্ববিদ্যালয়সহ সমগ্র দেশের শিক্ষক সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে। অবিলম্বে দিবসটি 'জাতীয় শিক্ষক দিবস' হিসেবে স্বীকৃতির দাবি জানাই।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী বিশিষ্টজনের অন্যতম হলেন লেখক ও বুদ্ধিজীবী ড. সলিমুল্লাহ খান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব, নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য বিধান চন্দ্র দাস, অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পান্ডে, রাজশাহী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুল খালেক, বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার উপসম্পাদক কামাল উদ্দিন মাহমুদ, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রাজশাহী জেলা সভাপতি আহমেদ শফি উদ্দিন।
এরআগে, ১৩ ফেব্রুয়ারি দিবসটি জাতীয় শিক্ষক দিবস ঘোষণার দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করেছে কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোট। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী, রিক্সাচালক বিভিন্ন স্তরের মানুষ স্বাক্ষর করেছে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল