উত্তরের বরেন্দ্র জেলা নওগাঁ। দেশে গ্রীষ্মকালে তরমুজের চাষ হলেও ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে এবার নওগাঁ জেলায়। মাচায় ও মালচিং পদ্ধতিতে উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড মার্সেলো জাতের তরমুজ চাষে বেশ সফলতা পেয়েছেন চাষিরা। আর এই পদ্ধতিতে চাষ করা তরমুজের বাম্পার ফলনেও খুশি তারা। এসব তরমুজ অত্যন্ত সুস্বাদু ও সুমিষ্ট হওয়ায় বাজারে চাহিদা বেশি। সেই সাথে লাভও বেশি।
মার্সেলো জাতের প্রতিটি তরমুজের ওজন হয়ে থাকে ৩-৫ কেজি। আর প্রতি বিঘায় দেড় থেকে দুই হাজারটি তরমুজ পাওয়া যায়। জেলা কৃষি বিভাগের আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি প্রদর্শনী প্রকল্পের আওতায় জেলার ৪টি উপজেলায় উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড মার্সেলো জাতের কালো তরমুজ চাষ করা হয়েছে।
মাচার ওপরে সবুজ পাতা। নিচে ঝুলে আছে কালো রঙের তরমুজ। গাছ থেকে ছিঁড়ে না পড়ে তার জন্য প্রতিটি তরমুজে দেওয়া হয়েছে জালি। এমন দৃশ্য নওগাঁর পত্নীতলা, মহাদেবপুর, রাণীনগর ও নওগাঁ সদর উপজেলার মাঠে মাঠে। যেসব জমিতে আগে কৃষকরা পটল ও করলা চাষ হতো আর এখন ওইসব জমিতে বর্ষা মৌসুমে মার্সেলো জাতের তরমুজ চাষ করেছেন কৃষকরা। উচ্চ ফলনশীল মার্সেলো জাতের এই তরমুজ উচ্চমাত্রায় ভাইরাস সহনশীল। লম্বাটে ডিম্বাকৃতির এই তরমুজের ভিতরের অংশ গাঢ় লাল রঙের। প্রতিদিনই আগ্রহী চাষীরা এই বর্ষাকালীন তরমুজের ক্ষেত দেখতে ভিড় করছেন। গত জুন মাসে এই তরমুজের চারা রোপন করা হয়েছে। গাছ লাগানোর ৬৫-৭০ দিনের মধ্যে ফল উঠানো যায়।
নওগাঁর রাণীনগরের মার্সেলো জাতের বর্ষাকালীন তরমুজ চাষি নিরাঞ্জন চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, তিনি প্রতি বছর উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে নতুন নতুন ফসল চাষ করে থাকেন। তারই ধারাবাহিকতায় এবার কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতায় ২৫ শতক জমিতে তিনি রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার ছাড়াই বিষমুক্ত মার্সেলো জাতের তরমুজ চাষ করেছেন। বর্তমান বাজারে প্রতি কেজি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকায়। কিছু তরমুজ বিক্রি করেছেন দুইদিন আগে। লাভ হয়েছে বেশ ভালো। কম পরিশ্রম ও ভালো দাম পেয়ে খুশি তিনি। তিনি আরো বলেন, আমরা জানি তরমুজ চাষ হয়ে থাকে গ্রীষ্মকালে। কিন্তু আমাদের এ বরেন্দ্র জেলায় বর্ষাকালে তরমুজের চাষ করা দেখে প্রতিদিন তার তরমুজের ক্ষেত দেখতে এবং পরামর্শ নিতে আসছেন নতুন নতুন উদ্যক্তারা। আমিও তাদেরকে ভালো পরামর্শ ও সকল প্রকার সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি এবং করবো।
তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা কামাল মাহমুদ সিপন বলেন, নিরাঞ্জন দাদার তরমুজের খেত দেখে খুবই ভালো লাগছে। তার সাথে অনেক কথা হলো এই তরমুজের বিষয়ে। খেয়ে দেখলাম খুব স্বুসাদু ও মিষ্টি। তাই তিনি আগামী বছর তার দুই বিঘা জমিতে এই বর্ষাকালীন তরমুজ চাষ করবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন। দুটি তরমুজ কিনলাম ৫০ টাকা কেজি দরে। দুটি তরমুজের ওজন ৮ কেজি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, রাসায়নিক সার ও বিষমুক্ত তরমুজ চাষ করতে মাচায় ও মালচিং পদ্ধতিতে উচ্চ ফলনশীল মার্সেলো জাতের তরমুজ চাষ করা হয়েছে জেলার ৪টি উপজেলায়। আমি গত কয়েকদিন আগে তরমুজ খেয়েছি গাঢ় লাল রঙের আর স্বাদ খুব ভালো। কম খরচের পাশাপশি বর্ষাকালে এই তরমুজ চাষ হওয়ায় কৃষকরা বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তাই কৃষকরা বর্ষাকালীন তরমুজ চাষের দিকে ঝুঁকছেন। কৃষকরা যাতে আরও উৎসাহ পায় সেদিকে আমরা কাজ করছি আর তাদেরকে সার্বিক সহযোগিতা করছে কৃষি বিভাগ।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল