সিলেট নগরীর টিলাগড়ের শাপলাবাগে ‘কম্পিউটার প্রশিক্ষণ সেন্টার’ খোলার কথা কথা বলে মালিকের কাছ থেকে বাসা ভাড়া নিয়েছিলো নব্য জেএমপির সদস্যরা। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। ধরা পড়তে হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে।
সিলেটে গত দুইদিনের অভিযানে গ্রেফতার হওয়া ৫ জঙ্গির মধ্যে নাইম ও সায়েমকে নিয়ে মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) রাত সাড়ে নয়টায় নগরীর টিলাগড়ের শাপলাবাগ আবাসিক এলাকার ৪০/এ ‘শাহ ভিলা’ নামের বাসায় অভিযান চালায় র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা। অভিযানে জঙ্গি তৎপরতায় ব্যবহৃত কয়েকটি কম্পিউটার উদ্ধার করা হয়।
‘শাহ ভিলা’র মালিক শাহ মো. শামদ আলী জানান, দুই মাস আগে জঙ্গি নাইম ও সায়েম তার কাছে এসে বাসা ভাড়া নেওয়ার ব্যাপারে আলাপ করে। ওই সময় তারা এক মাসের ভাড়া অগ্রিম দিয়ে দেয়। এসময় নাইম ও সায়েম বলেন, ‘আমরা এখানে একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ সেন্টার করতে চাই। চুক্তিপত্র রেডি করে কয়েকদিন পরে আসবো। তারপর আমরা বাসায় উঠবো।’ কিন্তু মাসখানেক তারা আর আমার সঙ্গে যোগযোগ করেননি। হঠাৎ গত মাসের ২ তারিখে তারা এসে আরও একমাসের ভাড়া দিয়ে যায়।’
শামদ আলী আরও জানান, ‘শাহ ভিলা’ নতুন বাসা। প্রায় সব ফ্ল্যাটই খালি। প্রথম আলোচনায় তারা বলে- ৪-৫ জন এমসি কলেজের শিক্ষার্থী মিলে একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ সেন্টার খুলবে। এ কথা বলেই চারতলা বাসার এক তলায় একটি ইউনিট ভাড়া নেয় জঙ্গি নাইম ও সায়েম।
উল্লেখ্য, নগরীর জালালাবাদ ও টিলাগড়ের শাপলাবাগ আবাসিক এলাকার পৃথক দুটি বাসায় অভিযান চালিয়ে বোমা, বোমা তৈরির সরঞ্জাম ও জঙ্গি তৎপরতায় ব্যবহৃত কম্পিউটার উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) রাতে অভিযান চালিয়ে এসব উদ্ধার করা হয়। গত রবিবার রাত থেকে পৃথক অভিযানে গ্রেফতার হওয়া ৫ নব্য জেএমবির দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ অভিযান চালানো হয়।
মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) রাত সাড়ে ৮টায় নগরীর জালালাবাদ আবাসিক এলাকার ৪৫/১০নং বাসার মুক্তিযোদ্ধা মইনুল আহমদের বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। এসময় বাসা থেকে বোমা, বোমা তৈরির এবং কিছু কম্পিউটার সরঞ্জাম উদ্ধার করে নিয়ে যায় পুলিশ। উদ্ধারকৃত কম্পিউটারে বোমা তৈরির বেশকিছু ভিডিও ছিলো।
অপরদিকে, গত দুইদিনের অভিযানে গ্রেফতার হওয়া ৫ জঙ্গির মধ্যে আটক জঙ্গি নাইম ও সায়েমকে নিয়ে রাত সাড়ে নয়টায় নগরীর টিলাগড়ের শাপলাবাগ আবাসিক এলাকার ৪০/এ ‘শাহ ভিলা’ নামের বাসায় অভিযান চালিয়ে র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা জঙ্গি তৎপরতায় ব্যবহৃত কয়েকটি কম্পিউটার উদ্ধার করে।
সর্বশেষ এই দুই স্থানে অভিযান শেষে গ্রেফতারকৃত ৫ জঙ্গিকে নিয়ে মঙ্গলবার রাতেই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিছে পুলিশ। এর আগে গত রবিবার (৯ আগস্ট) থেকে সিলেট নগরী এবং আশেপাশের কয়েকটি এলাকায় জঙ্গি ধরতে অভিযান চালায় পুলিশ। এসময় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ বা নব্য জেএমবির পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট (সিটিটিসি)।
ওইদিন সিলেট নগরীর মিরাবাজার উদ্দীপন-৫১ নম্বর বাসা থেকে নাইমুজ্জামান নাইমকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি নব্য জেএমবির ‘সিলেট আঞ্চলিক কমান্ডার’ বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে। নাইমের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে সোমবার রাতে ও মঙ্গলবার ভোরে পৃথক দুটি অভিযানে গ্রেফতার করা হয় আরো চারজনকে। তন্মধ্যে জালালাবাদ আবাসিক এলাকা থেকে সানাউল ইসলাম সাদীকে গ্রেফতার করে সিটিটিসি।
এছাড়া টুকেরবাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় তিনজনকে। নাইম ও সাদী শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তবে তারা কোন বিভাগের শিক্ষার্থী, তা জানা যায়নি। গ্রেফতারকৃত বাকি তিনজনের মধ্যে দুজন কলেজ শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে।
এই পাঁচ ‘জঙ্গি’ সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজারে হামলার পরিকল্পনা করছিল বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে। এই পাঁচজনের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতেই সিলেট নগরীর জালালবাদ আবাসিক এলাকা ও টিলাগড়ের শাপলাবাগে অভিযানে চালায় পুলিশ ও র্যাব।
বিডি-প্রতিদিন/সিফাত আব্দুল্লাহ