যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে নিরাপদ পরিবহন হিসেবে সাধারণত রেলকেই বেছে নেন যাত্রীরা। কিন্তু সিলেটের যাত্রীদের জন্য এই রেল যোগাযোগ অনিরাপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে ভয়ংকর হয়ে দাঁড়িয়েছে সিলেট-আখাউড়া রেললাইন। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় রেলওয়ের এই সেকশনে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। ক্ষতি হচ্ছে জান-মালের। দুর্ঘটনার পর সিলেটের সাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সারাদেশের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকছে। ঘন ঘন দুর্ঘটনার কারণে দিন দিন যাত্রীরাও আগ্রহ হারাচ্ছেন রেল ভ্রমণে। ফলে দুর্ঘটনারোধ ও রেলকে আরও জনপ্রিয় করে তুলতে সিলেট-আখাউড়া রেল লাইনকে ডাবল লাইনে উন্নীত করার দাবি জোরাল হচ্ছে।
করোনাভাইরাসের কারণে পাঁচ মাস বন্ধ থাকার পর গত আগস্টের মাঝামাঝি শুরু হয় রেল যোগাযোগ। এরপর রেলওয়ের সিলেট-আখাউড়া সেকশনে ৭টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর আগের বছর ঘটে ২১টি দুর্ঘটনা। এর মধ্যে ৯টি ছিল ট্রেন লাইনচ্যুতির। বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনার পর গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। এসব কমিটি দুর্ঘটনার জন্য দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার কাজ না হওয়া, জরাজীর্ণ ও ত্রুটিপূর্ণ রেললাইন ও ঝুঁকিপূর্ণ রেলসেতুকে দায়ী করেছে।
সর্বশেষ দুর্ঘটনা ঘটে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত মধ্যরাতে। সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার মাইজগাঁও ও বিয়ালিবাজারের মধ্যবর্তী গুতিরগাঁও এলাকায় লাইনচ্যুত হয় জ্বালানি তেলবাহী ট্রেন। চট্টগ্রাম থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার লিটার ডিজেল নিয়ে ছেড়ে আসা সিলেটগামী ট্রেনটির ১০টি বগি লাইনচ্যুত হয়। এর মধ্যে ৮টি বগির তেল পড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, সিলেট-ঢাকা রুটে প্রতিদিন চার জোড়া আন্তঃনগর ও সিলেট-চট্টগ্রাম রুটে দুই জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। এর বাইরে কয়েকটি লোকাল ট্রেনও চলাচল করে এ দুটি রুটে। করোনার কারণে গত বছরের ২৪ মার্চ থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ৫ মাস সিলেট-ঢাকা ও সিলেট-চট্টগ্রাম রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। ১৬ আগস্ট থেকে প্রথমে সীমিত পরিসরে ও পরে স্বাভাবিক রেল যোগাযোগ শুরু হয়। এরপর গত বছরের ১১ নভেম্বর সিলেট ও মৌলভীবাজারের মধ্যবর্তী ভাটেরা নামক স্থানে মালবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। এর চারদিন আগে অর্থাৎ ৭ নভেম্বর মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের সাতগাঁও জংশনে তেলবাহী ট্রেনের সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এ দুর্ঘটনার পর প্রায় ২৩ ঘন্টা রেল যোগাযোগ বন্ধ ছিল। গেল বছরের ৩০ অক্টোবর সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে বেশ কয়েকঘণ্টা রেল চলাচল বন্ধ ছিল। ১৫ সেপ্টেম্বর ফেঞ্চুগঞ্জের মাইজগাঁওয়ে তেলবাহী ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়ে রেল যোগাযোগ বিঘ্নিত হয়। ২৩ আগস্ট কুলাউড়ায় লাইনচ্যূত হয় যাত্রীবাহী ট্রেন। চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি একই স্টেশনে ট্রেনের বগিতে আগুন ধরে যায়। এ ছাড়া ২০১৯ সালে ভয়াবহ দুটি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ২২ জন। ১৮ নভেম্বর সিলেট-আখাউড়া সেকশনের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় দুটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১৭ জন মারা যান। একই বছরের ২৩ জুন মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় সেতু ভেঙে পানিতে পড়ে যায় উপবন এক্সপ্রেস। এতে প্রাণ হারান ৫ জন।
প্রসঙ্গত, সিলেট-আখাউড়া রেললাইন ডুয়েল গেজ করার জন্য ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল একনেকে একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু নানা জটিলতায় এখনও এই প্রকল্প আলোর মুখ দেখেনি।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ