চট্টগ্রামে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন ও মানুষ বিপরীতমুখি অবস্থান গ্রহণ করেছে। প্রশাসন ও পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থানে। নিয়মিত পরিচালনা করছেন অভিযান। কিন্তু সাধারণ মানুষ মানছেই না কোনো নিয়ম, নির্দেশনা ও লকডাইন। অনেক এলাকায় চলছে ঈদ বাজার। চট্টগ্রাম নগরের মার্কেটগুলো প্রায় বন্ধ থাকলেও উপজেলার মার্কেটগুলো প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে চলছে ঈদ বিকিকিনি। এমনকি দোকানের বাইরে থেকে তালা মেরে ভেতরে ক্রয়বিক্রয় চলার ঘটনাও ঘটেছে।
জানা যায়, চট্টগ্রামের হাটহাজারী পৌরসভার ইছাপুর বাজার মার্কেটের দোকানগুলোতে বাইরে থেকে তালা ভেতরে জনসমুদ্র। অভিন্ন চিত্র পাশের কাচারি রোডের দোকানগুলোতেও। পটিয়া উপজেলার সবুর রোডের দোকান ও বিভিন্ন মার্কেটেও চলছে ব্যবসা। চট্টগ্রামে করোনা ক্রমেই জটিল-কঠিন আকার ধারণ করলেও এ নিয়ে অনেক মানুষের মধ্যে কোনো অনুভূতি নেই। বরং অনেকেই স্বাভাবিক সময়ের মত আচরণ করছে। ঈদ মার্কেটিং করার প্রবণতাও দেখা গেছে।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল আমীন বলেন, ‘এত অভিযান, এত জরিমানার পরও দোকান খোলা রাখছে। অবাক লাগার মত বিষয়। কিন্তু ক্রেতারা কেমন মানসিকতার। তারা কেন শপিং করতে যাবেন। আজ দেখলাম দোকানের বাইরে থেকে তালা, ভেতরে চলছে বিকিকিনি। মনে হয় এবারই শেষ ঈদ। শেষ ঈদের জন্য বাজার করছে। এক মার্কেটেই সাতটি দোকানে তালা লাগানো হয়েছে।’
পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারাহান জাহান বলেন, ‘গত এক মাস ধরে পটিয়ার বিভিন্ন মার্কেটে প্রতিদিনই অভিযান পরিচালনা করেছি। তবুও খোলা রাখছে দোকান। কিন্তু ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা যতদিন পর্যন্ত করোনার ভয়বহতার বিষয়টি অনুভব করবে না, ততদিন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে। আমরা অভিযান করি এক ঘণ্টা। কিন্তু সারাদিন-রাত তো তারা ইচ্ছামত চলে। প্রশাসনের পক্ষে কি দিনরাত পাহারা দেওয়া সম্ভব?’
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের স্টাফ অফিসার মাসুদুর রহমান বলেন, ‘প্রতিদিন চার থেকে ছয়জন ম্যাজিস্ট্রেট নগরে অভিযান পরিচালনা করছেন। তবুও মানুষ বাইরে ঘুরাফেরা করছেন।’
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামে করোনা পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করছে। গত রবিবার একদিনেই আক্রান্ত হয়েছে ৭৩ জন। মোট আক্রান্ত হন ৭৮৯ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ১০০ জন ও আইসোলেশনে আছেন ১৫৯ জন। এ নিয়ে চট্টগ্রামে করোনায় মারা যান ৩৬ জন ও করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যান ২০ জন। সর্বশেষ গত রবিবার একদিনেই জেনারেল হাসপাতাল ও বিআইটিআইডি’র আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন পাঁচজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে একজনের করোনা পজেটিভ ও চারজনের করোনা উপসর্গ ছিল।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘গত রবিবার একদিনেই ৭৩ জন আক্রান্ত হন। বুঝাই যাচ্ছে চট্টগ্রামে করোনা পরিস্থিতি দিন দিন কঠিন ও জটিল আকার ধারণ করছে। তাই সাধারণ মানুষ সচেতন ও সতর্ক না হলে কোনো মতেই ঠেকানো যাবে না।’
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার