ঘূর্ণিঝড় আম্ফান মোকাবিলায় চট্টগ্রাম প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছে। প্রস্তুত করা হয়েছে চার হাজার ৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্র। গঠন করা হয়েছে ২৮৪টি মেডিক্যাল টিম। সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে উপকূলীয় এলাকার মানুষদের, চলছে মাইকিং। সম্ভাব্য দুর্যোগে মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে ত্রাণ কার্যক্রমের। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) যেকোনো তথ্য ও সহযোগিতার প্রয়োজনে চালু করেছে কন্ট্রোল রুম। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে এসব আশ্রয়কেন্দ্রে সামাজিক দূরত্ব মেনে উপকূলীয় এলাকার লোকজনকে রাখা হচ্ছে।
পতেঙ্গার আবহাওয়া অফিস মোংলা ও পাযরা সমুদ্র বন্দরের জন্য ৭ নম্বর বিপদ সংকেত এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরের জন্য ৬ নম্বর বিপদ সংকেত জারি করেছে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগেই চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকার মানুষদের সরিয়ে নিতে চার হাজার ৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করার নির্দেশনা দিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। এর মধ্যে বিদ্যমান আশ্রয়কেন্দ্র ৫২৭টি এবং প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কলেজ মিলে তিন হাজার ৫১৯টি। এরই মধ্যে এক হাজার ৭৭০টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচীর (সিপিপি) ৬ হাজার ৬৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক, ৮ হাজার রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবক ও ৩৬০ জন স্কাউট স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মাধ্যমে ২৮৪টি মেডিক্যাল টিম, ২ লাখ পিস পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, দেড় লাখ খাবার স্যালাইনসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। অন্যদিকে, সম্ভাব্য দুর্যোগে ত্রাণকার্যক্রম পরিচালনায় প্রায় ২৯ মেট্রিক টন চাল, ২ লাখ ২০ হাজার নগদ টাকা, ১৩৩ বান্ডিল ঢেউটিন, ৩০০ প্যাকেট শুকনো খাবার এবং ৫০০টি তাঁবু মজুদ রয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় আরও ১ হাজার মেট্রিক টন চাল, ৫০ লাখ টাকা, ২০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার এবং ৫০০ বান্ডিল ঢেউটিন বরাদ্দ চেয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগও ১ লাখ ৪০ হাজার পিস পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ২ লাখ ৪০ হাজার ওয়াটার পিউরিফায়ার, ১ হাজার ৪০০ পিস হাইজিন কিটস, ৬৫০ পিস স্কোয়াটিং প্লেন্ট, ৩ হাজার ৩৬০ পিস ওয়াটার বাকেট, ৫০০ কেজি বিøচিং পাউডার, ১ হাজার ২০০ পিস তারপুলিন এবং ৫০০টি অস্থায়ী টিউবঅয়েল মজুদ রেখেছে।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় আম্পান মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুতি, মেটিকেল টিম গঠন, ত্রাণ কার্যক্রমসহ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। তাছাড়া স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সেবা সংস্থা, আইনশৃঙ্খলাবাহিনী, সশস্ত্র বাহিনীসহ সব পক্ষের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ আছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি কন্ট্রোল রুমও চালু করা হয়েছে।’
জানা যায়, মাঠে থাকা ফসল যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরকে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিতে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কৃষকের পাকা ধান দ্রুত কেটে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
উপকূলীয় এলাকায় সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও) লোকজনকে ঘর-বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিতে মাইকিং শুরু করেছেন। নগরেও ৬টি সার্কেলের সহকারী কমিশনাররা (ভূমি) লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিতে মাইকিং ও প্রচারণা চালান।
চসিকের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ
চসিক ঘূর্ণিঝড় আম্পান সম্পর্কিত যেকোনো তথ্য ও সহযোগিতার প্রয়োজনে নগরবাসীকে সেবা দিতে একটি নিয়ন্ত্রণল কক্ষ খুলেছে। গত সোমাবর থেকে এটি চালু করা হয়। চসিকের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ফোন নম্বরগুলো হলো- ০৩১-৬৩০৭৩৯, ০৩১-৬৩৩৬৪৯। এ ছাড়া দুর্যোগ পূর্ববর্তী, দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে অবস্থানের জন্য উপকূলীয় এলাকায় চসিক পরিচালিত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সর্বদা প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া চসিকের ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে মোহরা, উত্তর কাট্টলী, দক্ষিণ কাট্টলী, র উত্তর মধ্যম হালিশহর, দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর, দক্ষিণ হালিশহর, উত্তর পতেঙ্গা, দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ড ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসের ঝুঁকিতে আছে। এছাড়া ভারী বর্ষণ হলে পাহাড়ধস-ভূমিধসের আশঙ্কা আছে কিছু ওয়ার্ডে। এসব ওয়ার্ডের লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে মাইকিং করা হচ্ছে।
চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে নগরের উপকূলবাসীকে নিরাপদে সরিয়ে আনতে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। উপকূলীয় এবং পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থানরত জনসাধারণের মাঝে সচেতনতার জন্য মাইকিং, দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে শুকনো খাবার, পর্যাপ্ত সুপেয় পানির ব্যবস্থা এবং চিকিৎসা সেবাদানের জন্য মেডিক্যাল টিম ও পর্যাপ্ত ওষুধ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে লোক আনার জন্য প্রস্তুত রাখা হয় যানবাহন।’
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার