প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে রুটিন করে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় ধসে দুর্ঘটনা ঘটে। হয় প্রাণহানি। ২০০৭ সালের ১১ জুন বিপর্যয়ের একটি সকালই কেড়ে নিয়েছিল ১২৯ জনের প্রাণ। জেলা প্রশাসন প্রতিবছর আগাম উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে থাকে। কিন্তু এবার বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের চাপে পড়েছিল। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের পাদদেশে থেকেই যায় লোকজন।
তবে বৈরি আবহাওয়ায় বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও পুলিশ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষদের নিরাপদে সরে যেতে মাইকিং করে। তাছাড়া ভারী বর্ষণে দুর্যোগ মোকাবেলায় নগরের সহকারি কমিশনার (ভূমি) চাঁন্দগাও, বাকলিয়া, আগ্রাবাদ এবং কাট্টলী সার্কেলের অধীনে খোলা হয়েছে ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র। আজ বায়েজিদ থেকে ফৌজদারহাট সিডিএ লিংক রোড এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বৈরি আহবাওয়ায় নগরের ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় থেকে অন্যত্র সরে যেতে মাইকিং করা হয়েছে। তাছাড়া তিনটি ভূমি সার্কেলের অধীনে ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আমরা চাই, ঝুঁকিতে থাকা পরিবারগুলো নিরাপদে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকুক।’
আশ্রয়কেন্দ্রগুলো হলো- পাহাড়তলি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বিশ্ব কলোনীর কৈবল্যধাম কোয়াড পি ব্লক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফিরোজ শাহ হাউজিং এস্টেট এলাকার ফিরোজ শাহ কলোনী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফিরোজ শাহ হাউজিং এস্টেট এইচ ব্লকে বায়তুল ফালাহ আদর্শ মাদ্রাসা, চট্টগ্রাম মডেল স্কুল এন্ড কলেজ, জালালাবাদ বাজার সংলগ্ন শেড, রউফাবাদ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, রশিদিয়া রউফাবাদ আলিম মাদ্রাসা, মহানগর পাবলিক স্কুল, আলহেরা মাদ্রাসা, আমিন জুট মিল ওয়ার্কার্স ক্লাব, আমিন জুট মিলস নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, লালখানবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এবাদ উল্লাহ পন্ডিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শহীদ নগর সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কলিম উল্লাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ওয়াই ডব্লিউসিএ কার্যালয়, শেখ রাসেল প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মতিঝর্ণা ইউসেফ স্কুল।
অভিযোগ আছে, ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে জেলা প্রশাসন উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে থাকে। কিন্তু পাহাড়ের মালিক সরকারি সংস্থাগুলোর নীরবতায় স্থানীয় প্রভাবশালীরা নিজের ইচ্ছামত পাহাড় কেটে বসত গড়ে তুলে ভাড়া দেয়। এখানে থাকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের ছত্রছায়া। পাহাড়ে যত মৃত্যু হয় তার জন্য সিংহভাগ দায়ি পাহাড়খেকোরা।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামে ২৮টি পাহাড়ের মধ্যে অতি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় আছে ১৭টি। এর মধ্যে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মালিকানাধীন সাতটিতে ৩০৪ পরিবার এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন ১০ পাহাড়ে ৫৩১টি পরিবার বাস করছে। সরকারি পাহাড়গুলোর মালিক হলো চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, রেলওয়ে, ওয়াসা এবং গণপূর্ত ও জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ। ১৭ পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবৈধভাবে বসবাস করা ৮৩৫ পরিবারের মধ্যে রেলওয়ের লেকসিটি আবাসিক এলাকা সংলগ্ন পাহাড়ে ২২ পরিবার, পূর্ব ফিরোজ শাহ এক নাম্বার ঝিল সংলগ্ন পাহাড়ে ২৮ পরিবার, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের মালিনাকানাধীন কৈবল্যধাম বিশ্ব কলোনি পাহাড়ে ২৮টি পরিবার, পরিবেশ অধিদপ্তর সংলগ্ন সিটি কর্পোরেশন পাহাড়ে ১০ পরিবার, রেলওয়ে, সওজ, গণপূর্ত অধিদপ্তর ও ওয়াসার মালিকানাধীন মতিঝর্ণা ও বাটালি হিল পাহাড়ে ১৬২ পরিবার, ব্যক্তি মালিকানাধীন একে খান পাহাড়ে ২৬ পরিবার, হারুন খানের পাহাড়ে ৩৩ পরিবার, পলিটেকনিক কলেজ সংলগ্ন পাহাড়ে ৪৩ পরিবার, মধুশাহ পাহাড়ে ৩৪ পরিবার, ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট সংলগ্ন পাহাড়ে ৩৩ পরিবার, মিয়ার পাহাড়ে ৩২ পরিবার, আকবর শাহ আবাসিক এলাকা সংলগ্ন পাহাড়ে ২৮ পরিবার, আামিন কলোনি সংলগ্ন ট্যাংকির পাহাড়ে ১৬ পরিবার, লালখান বাজার জামেয়াতুল উলুম মাদ্রাসা সংলগ্ন পাহাড়ে ১১ পরিবার, ভেড়া ফকিরের পাহাড়ে ১১ পরিবার, ফয়েজলেক আবাসিক এলাকা সংলগ্ন পাহাড়ে ৯ পরিবার এবং এম আর সিদ্দিকী পাহাড়ে আটটি পরিবার বসবাস করছে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার