দেশের করোনা পরিস্থিতিতে প্রতিটি শ্রেণিপেশার মানুষ নানাভাবে করোনার উপসর্গ বা আক্রান্ত হচ্ছেন। বিভিন্ন চাকরিজীবীদের মতো টানা কর্মতৎপরতায় মাঠে কাজ করছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। এ সময়েও ট্রেনে নিত্যপণ্য মালামাল সরবরাহ করা, যাত্রী পরিবহণ, উন্নয়ন কাজসহ নানাভাবে দায়িত্বশীল কর্মকর্তা-কর্মচারিরা কাজ করে যাচ্ছেন। এতেই করোনার উপসর্গ এবং আক্রান্তও হয়েছেন অধিকাংশ রেলের স্টাফ। রেলওয়ে হাসপাতাল থাকা সত্বেও রেলের এসব স্টাফদের নেই চিকিৎসা সুবিধা, নেই টেষ্ট পরীক্ষা করার ব্যবস্থাও। এখনও পর্যন্ত রেলের হাসপাতালগুলো নেই সেন্ট্রাল অক্সিজেনসহ নানা চিকিৎসা সামগ্রীও।
তবে টানা করোনা পরিস্থিতিতে রেলওয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাসহ প্রায় ২শ জন কর্মকর্তা-কর্মচারি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত ও উপসর্গ দেখা দেয়া প্রত্যেকেই বর্তমানে হাসপাতাল ও আইসোলেশনে রয়েছেন বলে রেলওয়ে বিভিন্ন নিভর্রযোগ্যপ্রাপ্ত সূত্রে নিশ্চিত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে রেলওয়ে আক্রান্ত স্টাফদের জন্য ‘কুইক রেসপন্স টিমও’ গঠন করা হয়েছে। এটি সব বিভাগের সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করবেন বলেও দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।
রেলওয়ের সূত্রে জানা গেছে, পূর্বাঞ্চল রেলওয়েতে দায়িত্বরত প্রায় কর্মকর্তা-কর্মচারিসহ প্রায় ২শ জন উপসর্গসহ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন হাসপাতালেই রয়েছেন। কয়েকজন সুস্থ হওয়ার পথেও রয়েছেন। এদের মধ্যে পূর্বাঞ্চলের প্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রকৌশলী-ডিএন-১ (ঢাকা) মোস্তাফিজুর রহমান, ডিএন-১ ঢাকার প্রধান সহকারি, বিভাগীয় পরিবহণ কর্মকর্তা-ঢাকা মইনুদ্দিন, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) ইন্সপেক্টর সিরাজুদ্দিন, আরএনবির সিআই ফিরোজ মিয়া, আরএনবির সিআই মুজিবুল হক, ওয়েম্যান আনোয়ার, জেএলআই মঈনুদ্দিন, সিওপিএস, সিএমই, আরএনবি, সিএসটি, সিসিএস, বৈদ্যুতিক বিভাগ এবং রেলের আরো কয়েকটি দপ্তরের উর্ধতন ও কর্মচারিরা মিলে প্রায় ২শ জনের মতো আক্রান্ত হয়েছেন। এদের অধিকাংশের মধ্যে উপসর্গ নিয়ে আইসোলেশনে রয়েছেন।
পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী (সিই) মো. সুবক্তগীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রকৌশল বিভাগের বেশ কয়েকজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। এখন সুস্থ আছেন। তবে পুরো সুস্থ না হওয়া পযর্ন্ত ডাক্তারের পরার্মশে ঘরেই থাকার জন্য বলা হয়েছে। তাছাড়া রেলের দুটি হাসপাতালের সেন্ট্রাল অক্সিজেন দেয়ার জন্য ইতিমধ্যে মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা পেয়েছি। সে জন্য কর্মকান্ডও শুরু হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব করোনায় আক্রান্তদের সেবায় কাজগুলো শেষ করা হবে বলে জানান তিনি।
পূর্বাঞ্চলের প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী (সিএমই) ফকির মো. মহিউদ্দিন বলেন, আমার বিভাগের মধ্যে প্রায় ৫০ জন করোনায় উপসর্গ আছেন এমন স্টাফদের সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক অফিস করতে মানা করেছি। ঘরেই চিকিৎসা নিতে বলা হয়েছে। স্টাফদের নিয়মিত খোঁজ-খবরও নেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে অনেকেই সুস্থ হয়েছেন। বাকিরা দ্রুত সুস্থ হলেই আবারও কাজে যোগদান করবেন বলে জানান তিনি।
পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর চীফ কমান্ড্যান্ট (সিসিআরএনবি) মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, সিলেটের একজন ইন্সপেক্টর বেশী অসুস্থ ছিলেন। তিনি করোনায় পজেটিভ হওয়ায় চিকিৎসার জন্য হাসপাতালেই ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়াও আরো বেশ কয়েকজন করোনা পজেটিভ এবং উপসর্গ মিলে প্রায় ১’শ জনের মতো রয়েছেন। অনেকেই সুস্থ হয়ে কাজ যোগদানও করছেন। তবুও সম্পূর্ণ সুস্থ না হয়েই কাজে যোগদানের জন্য বরা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
রেলওয়ে শ্রমিকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, রেলের স্টাফরা নানাভাবে করোনায় আক্রান্তসহ নানাভাবেই অসুস্থ হচ্ছেন। রেলের হাসপাতাল থাকতে বাইরে চিকিৎসাসেবার কষ্ট পাচ্ছেন। অনেকেই কষ্টের বিষয়টা কারো সাথেও বলতে পারছেন না। এতে রেলওয়ের হাসপাতালগুলোতে করোনার পর্যাপ্ত চিকিৎসা সামগ্রী, সেন্ট্রাল অক্সিজেন এবং করোনা টেষ্ট করার ব্যবস্থার দাবি জানাচ্ছি। তবে আমরা এতোগুলো স্টাফ কোথায় যাবে? চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্টাফদের জন্য হাসাপাতাল নির্দিষ্ট করিয়ে দেয়, তাহলে আমাদেরও হাসপাতাল আছে। সেখানেই আমরা টেষ্টসহ নানাচিকিৎসাসেবা নেবেন বললেন তিনি।
করোনায় আক্রান্ত রেলওয়ের একজন স্টাফ ক্ষোভের সাথে বলেন, জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাকালীন সময়ে কোন ডাক্তারই সামনে আসেননি। ভাল করে কথাই বলেননি। হঠাৎ একজন নার্স এসেই বলেন, ডাক্তাররা সামনে আসবে না। আমাকেই বলেন। এভাবেই কয়েকদিন কাটিয়ে একটু ভালো হয়েই ঘরে ফিরে আসি। সেখানে নিজের মতো করে সব কিছু মেনেই চলেছি। তবে এখন সুস্থ আছি কিন্তু রেলের পক্ষ থেকে কেউ এসব নিয়ে চিন্তা নেই বললেই চলে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল