সকলেই মেডিকেল শিক্ষার্থী। কেউ তৃতীয় বর্ষ, কেউ চতুর্থ, কেউ শেষ বর্ষ। করোনাকালে বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তদুপরি, করোনার প্রভাবে বিপর্যস্ত সামগ্রিক খাত। নাজুক অবস্থা স্বাস্থ্যসেবার। করোনা শনাক্তে নমুনা পরীক্ষায় চরম ভোগান্তি। দুর্ভোগ মাড়িয়ে পরীক্ষা করার পর রিপোর্ট প্রাপ্তিতে নাভিশ্বাস অবস্থা।
এমন দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে মেডিকেল শিক্ষার্থী ও চিকিৎসকদের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ইয়াং সোশ্যাল এক্টিভিজম বোর্ড-ওয়াইস্যাব’র ২৬ জন তরুণ-তরুণীর স্বেচ্ছাশ্রমে তৈরি হচ্ছে নমুনার রিপোর্ট।
চট্টগ্রাম ও আশপাশের জেলাসমুহের কোভিড-১৯ রিপোর্ট www.ysab.info/Coronactg লিংখে এখন মোবাইলেই পাওয়া যাচ্ছে।
জানা যায়, চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বির নির্দেশনা ও ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আসিফ খানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ওয়াইস্যাব’র কারিগরি ও স্বেচ্ছাসেবী সহায়তায় করোনার রিপোর্ট পেতে তৈরিকৃত ওয়েবসাইটটি গত ২১ জুন আনুষ্ঠাকিভাবে উদ্বোধন করা হয়। এখন কাউকে রিপোর্ট পেতে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে ফোন দিতে হচ্ছে না।
ওয়াইস্যাব’র ফাউন্ডার প্রেসিডেন্ট ডা. হামিদ হোছাইন আজাদের তত্ত্বাবধানে ওয়েবসাইটটি তৈরি করেন সংগঠনের আইটি হেড মো. কাইছার হামিদ। প্রজেক্ট কোঅর্ডিনেটরের দায়িত্বপালন করছেন এমবিবিএস শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ধ্রব ধর। দলনেতার দায়িত্ব পালন করছেন ডা. অনিক পালিত, ডা. সায়মা সাদিয়া ও ডা. অদিতি ব্যানার্জি।
এ টিমের অন্য সদস্যদের মধ্যে আছেন ইমাম হোসাইন, ডা. ইশরাত শাহরিন আরাফাত ও ডা. হাসান রাব্বি। টিমের সদস্যরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ইউএসটিসি, চট্টগ্রাম মা ও শিশু মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল ডেন্টাল কলেজ ও সাউদার্ন মেডিকেল কলেজের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থী।
ওয়াইস্যাব’র ফাউন্ডার প্রেসিডেন্ট ডা. হামিদ হোছাইন আজাদ বলেন, ‘নির্দিষ্ট ছয়টি ল্যাব থেকে প্রতিদিনের রিপোর্টগুলো সিভিল সার্জন (সিএস) কার্যালয়ে পাঠানো হয়। এরপর সিএস অফিস থেকে ওয়াইস্যাবের তিনজন টিম লিডারের কাছে পাঠানো হয়। দলনেতারা রিপোর্টগুলো টিমের সদ্যস্যদের মধ্যে বিতরণ করেন। এরপর সদস্যরা রিপোর্ট তৈরি করে দলনেতার কাছে পাঠিয়ে দেন। দলনেতারা তা চেক করে প্রজেক্ট কোঅর্ডিনেটরের কাছে পাঠান। তিনি চূড়ান্তভাবে রিপোর্টগুলো ওয়েবসাইটে আপলোড করেন।’
অনলাইনে রিপোর্ট পাওয়া ব্যাংক কর্মকর্তা আবদুল মোমিন বলেন ‘আমি দুইবার নমুনা দিয়েছি। প্রথমবার ১৫ দিন পর রিপোর্ট পেয়েছি। দ্বিতীয়বার ওয়াইস্যাবের ওয়েবসাইটে কোনো ভোগান্তি ছাড়াই রিপোর্ট পেয়েছি।’
টিমের সদস্য ইউএসটিসি চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আনামতা সেলিম বলেন, ‘করোনার রিপোর্ট প্রাপ্তিতে এটি একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ। এর মাধ্যমে রোগীরা কোনো দুর্ভোগ ছাড়াই মোবাইল নম্বর দিয়ে রিপোর্ট পাচ্ছেন।’
টিমের সদস্য সাউদার্ন মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী সাখওয়াত মোস্তাফা সাকি বলেন, ‘করোনাকালে যুগান্তকারী কাজটির সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারাটা ভাগ্যের।’
জানা যায়, করোনাভাইরাস শনাক্তে নমুনা দেওয়ার পর রিপোর্ট না আসা, ১০ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করা, রিপোর্ট না আসায় কর্মজীবীদের নানা সমস্যা-ভোগান্তিতে পড়া, দিনের পর দিন রোগ নিয়ে আতঙ্কে থাকা, রিপোর্ট প্রাপ্তি নিয়ে ধুয়াশায় থাকা-এমন সব হতাশা, শঙ্কা, দুর্ভোগ ও অনিশ্চয়তা ছিল করোনার নমুনা প্রদানকারীদের সঙ্গী। কিন্তু অনলাইনে রিপোর্ট দেওয়ার মত সুষ্ঠু, সুন্দর, পরিকল্পিত ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সব ভোগান্তি নিরসন হয়েছে। ফলে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট প্রাপ্তিতে মাইলফলক হয়েছে চট্টগ্রামের ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগ।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন