চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পে থাকবে একটি বায়োমেট্রিক মেশিন। হাসপাতালে অজ্ঞাত রোগী আসার পর প্রথমেই পুলিশ ওই রোগীর আঙ্গুলের ছাপ নিবেন। জাতীয় পরিচয়পত্রে আঙ্গুলের ছাপ থাকার কারণে বায়োমেট্রিক মেশিনের মাধ্যমে শনাক্ত করা হবে অজ্ঞাত রোগীর পরিচয়।
সড়ক দুর্ঘটনাসহ নানাভাবে আসা অজ্ঞাত রোগী ও অজ্ঞাত লাশের পরিচয় পাওয়া যাবে মাত্র দশ মিনিটে। ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলক পাঁচজন অজ্ঞাত রোগীর পরিচয় সফলভাবে শনাক্ত করা হয়েছে। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রক্রিয়াটি চালু করার কথা।
চমেক হাসপাতালের অজ্ঞাত রোগীর সেবক হিসাবে পরিচিত প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম নেসারের উদ্যোগ ও পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তত্ত্বাবধানে বায়োমেট্রিক ডিভাইসটি স্থাপনের প্রক্রিয়া করা হয়।
জানা যায়, সাড়ে তিন বছর আগে চমেক হাসপাতালে অজ্ঞাত রোগীর পরিচয় শনাক্তের জন্য ডিভাইসটি চালুর প্রক্রিয়া শুরু হয়। তখন সরকারি হাসপাতালে পদ্ধতিটি বাস্তবায়নের দাবিতে প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম নেসার ‘অজ্ঞাত রোগী ও লাশের পরিচয় শনাক্তে চমেক হাসপাতালসহ প্রতিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যের মাধ্যমে বায়োমেট্টিক সিস্টেম চালু’ শীর্ষক একটি আবেদন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবরে জমা দেন। পরে সেটি নানা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে স্থাপন প্রক্রিয়া শুরু হয়।
অজ্ঞাত রোগীর সেবক খ্যাত প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম নেসার বলেন, পিবিআইয়ের মাধ্যমে চমেক হাসপাতালে বায়োমেট্রিক মেশিনটি স্থাপন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে পাঁচজন অজ্ঞাত রোগীকে পরীক্ষামূলক টেস্ট করে সফলতা পাওয়া গেছে। আগামী মাসের শুরুতে প্রক্রিয়াটি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে।
এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রক্রিয়াটি শুরু হবে। তিনি বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অজ্ঞাত রোগী মানেই বাড়তি বিড়ম্বনা। হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসক, নার্স ও মেডিকেলে দায়িত্বরত পুলিশ বাহিনী সকলকেই অজ্ঞাত রোগী নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। তাছাড়া মর্গে আসা অজ্ঞাত লাশ নিয়ে জটিলতাও প্রতিদিনেরই চিত্র। কিন্তু বায়োমেট্রিক পদ্ধতিটি চালু হলে এ সমস্যা আর থাকবে না।’
জানা যায়, গত ১৫ বছর ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অজ্ঞাত রোগী নিয়ে কাজ করছেন নেসার। ইতোমধ্যে প্রায় ৯০০ অজ্ঞাত রোগীর সেবা এবং প্রায় ৪০০ জন অজ্ঞাত রোগীর পরিচয় শনাক্ত করে পরিবারের হাতে তুলে দেন। বর্তমানে প্রতিনিয়তই সরকারি হাসপাতালগুলোতে অজ্ঞাত রোগী ভর্তি হচ্ছে। চমেক হাসপাতালে প্রতিবছর ভর্তি হয় প্রায় ২৫০ অজ্ঞাত রোগী। প্রতিবছর এ হাসপাতাল থেকে আনুমানিক ৭০-৮০ জন অজ্ঞাত রোগী স্বজনের কাছে ফিরতে পারেন।
তাছাড়া প্রতিবছর ৪০-৫০ জন অজ্ঞাত রোগী চিকিৎসাধীন বা হাসপাতালে আনার পথে মারা যান। অজ্ঞাত রোগী মারা গেলে লাশ মর্গে রাখা হয়। এরপর বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন করা হয়। জ্ঞান ফিরলে কিছু অজ্ঞাত রোগী পরিচয় ও মোবাইল নাম্বার বলতে পারলেও অধিকাংশই নিজের পরিচয় বলতে পারেন না। কিন্তু হাসপাতালে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যের তত্ত্বাবধানে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালুর মাধ্যমে অজ্ঞাত রোগী নিয়ে এমন বিড়ম্বনা নিরসন সম্ভব বলে জানা যায়।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর