চট্টগ্রামে বাড়ছেই করোনার সংক্রমণ। দিন দিন এই করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়লেও সাধারণ মানুষের মাঝে এখনও মাস্ক বা সচেতনতা বাড়াতে অনীহা দেখা যাচ্ছে। মাত্র ৫ থেকে ১০ টাকায় মিলছে ১০ থেকে ২০টা মাস্ক। মানহীন এসব মাস্কে সয়লাব বাজার-ফুটপাতও। এসব দেখার কেউই নেই। চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ড ও নমুনা পরীক্ষার বুথের সামনেও অনেকেই ঘুরছেন মাস্ক ছাড়াই। মাস্ক না পরতে ‘অজুহাতের’ শেষ নেই অসচেতন মানুষদের। জরিমানা, মুচলেখা নিয়েও সাধারণ মানুষকে মাস্ক পরতে বাধ্য করতে কষ্ট হচ্ছে প্রশাসনের দায়িত্বশীলদের। তারপরও জনসচেতনতায় কঠোরভাবে মাঠে রয়েছেন জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দায়িত্বশীলরা। এমন বিষয়টি উদ্বেগেরও বলছেন সচেতনমহল।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন সূত্রে জানা গেছে, টানা কয়েকমাস করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকার পর আবারও বেড়ে গেছে করোনাভাইরাস। ক্রমেই বাড়ছে সংক্রমণের হার, বাড়ছে মৃত্যুর মিছিলও। প্রশাসনের এতো সর্তকতাসহ উদ্যোগ নেয়া হলেও এখনো উদাসীন চট্টগ্রামের বেশিরভাগ মানুষ। করোনার সংক্রমণ রোধে সরকার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মুখে মাস্ক পরার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। অথচ এখনো মাস্ক পরতেই যত ‘অনীহা’ মানুষদের।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চট্টগ্রামে হঠাৎ করেই করোনার প্রকোপ বেড়ে গেছে, সেই তুলনায় বাড়েনি জনসচেতনতা। বেশিরভাগই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। সরকার ও স্বাস্থ্য প্রশাসন মাস্ক পরার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। তবে প্রশাসনের দায়িত্বশীলরা সাধারণ মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য মাঠে কাজ করছেন। তিনটা প্রবেশ পথ ছাড়া ১০টি বিশেষ টীমও কাজ করছেন বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রাম জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক বলেন, চট্টগ্রাম মহানগর এলাকায় গণ-পরিবহন চলাচল করার কথা থাকলেও সরজমিনে দেখা যায় কিছু চালক সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে মহানগরীর বাইরে বিভিন্ন জেলা উপজেলায় যাত্রী পরিবহন করছে। এবং গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন করছে। যার ফলে ৫ বাস চালক ও এক মিনি বাস চালককে অর্থদন্ড করা হয়। পাশাপাশি মাস্ক না পরার কারনে ১০ জন যাত্রীকে অর্থদন্ড করা হয়। তবে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিতকরণে ও স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে জেলা প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
হাটহাজারী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রুহুল আমীন বলেন, নগরীর বাইরে জেলাতেও করোনা সচেতনতায় প্রশাসন কাজ করছেন। প্রতিদিনই সাধারণ মানুষরা কোন না কোন জায়গায় মাস্ক বিহীন চলাফেরা করছেন। তাদেরকে বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণের মাধ্যমে সচেতনতা বজায় রাখতে বলা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রাম রিডার্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের চেয়ারম্যান ও সংগঠক মঈনুদ্দিন কাদের লাভলু বলেন, নগরীর পাশাপাশি গ্রামেও বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে খুবই উদাসীন। মাস্ক না পরা ব্যক্তিটি মাস্ক পরা অনেক ব্যক্তির জন্য হুমকির। বিষয়টি উদ্বেগের। কিছুদিন ধরে সংক্রমণের হার উর্ধ্বগতি হওয়ায় নতুন করে বাড়ছে দুশ্চিন্তা। একই কথা বললেন মোস্তফা মুনির পেয়ারুও।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়া বলেন, চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত করোনা শনাক্তের সংখ্যা ৪২ হাজার ছাড়িয়েছে। এদের মধ্যে করোনা মারা গেছেন গতকাল বুধবার পর্যন্ত ৩৯৯ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় তিনজন মারা গেছেন। বুধবার নতুন আক্রান্ত ৪১৪ জন। এর মধ্যে নগরে ৩৭৩ জন এবং উপজেলায় ৪১ জন। গত মঙ্গলবার আক্রান্ত ছিল ৪৯৪ জন, সোমবার ছিল ৪৫৮জন। এ নিয়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৪’শ জনের উপরে। আর আক্রান্তের সংখ্যা ৪২ হাজারের উপরে রয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার সবাইকে মাস্ক পরতে নির্দেশনা দিয়েছেন। শুরু থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও বিষয়টির দিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আসছে। কিন্তু এসবের কিছুই তোয়াক্কা করছেন না বেশিরভাগ মানুষ। ফলে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ।
সরেজমিনে জানা গেছে, চট্টগ্রামে জ্যামিতিক হারে করোনা সংক্রমণ বাড়লেও মার্কেট, বাজার, রাস্তা-ঘাট, গণপরিবহন, শপিংমল, বিনোদন কেন্দ্রসহ জনাকীর্ণ স্থানে মাস্ক ছাড়াই চলাফেরা করছে শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বয়স্করাও-সরেজমিন ঘুরে এমন চিত্রই উঠে এসেছে। করোনাকে পুঁজি করে মানহীন মাস্কে সয়লাব হয়ে গেছে চট্টগ্রামের অলি-গলিও। সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণে উন্মুক্ত স্থানে সব ধরণের সভা নিষিদ্ধ করাসহ নেওয়া হয়েছে আরও বেশকিছু কঠোর সিদ্ধান্ত। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ড ও বুথে বেশিরভাগ মানুষকে মাস্ক ছাড়াই ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। বিপদজনক এসব এলাকায় একে অপরের ঘা ঘেঁষে বসে দিচ্ছেন আড্ডাও। চট্টগ্রামের রেল স্টেশন, বাসষ্টেশন, দামপাড়া বাসস্টেশন, শাহ আমানত সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা যায় দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আসা যাত্রীদের অধিকাংশের মুখে নেই মাস্ক। এই অবস্থায় এক গাড়ি থেকে নেমে ছড়িয়ে পড়ছেন নগরের বিভিন্ন স্থানে। গণপরিবহনের চালক ও হেলপারের অধিকাংশই ব্যবহার করে না মাস্ক।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার