চট্টগ্রাম-১০ উপনির্বাচনে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের প্রার্থী রশিদ মিয়া। বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে। দলীয় প্রতীক ‘ছড়ি’ নিয়ে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। চট্টগ্রামে দলটির তেমন নেতাকমী নেই। তাই নিজেই লিফলেট নিয়ে প্রচারণায় নেমেছেন রশিদ। এর আগে কয়েকবার চট্টগ্রামে এলেও নির্বাচনী এলাকার পথঘাট ভালো করে চেনেন না। কিন্তু স্থানীয়দের সাথে নিয়ে প্রচারণায় কমতি রাখছেন না এই প্রার্থী।
এই উপনির্বাচনে অন্য প্রার্থীরা কর্মী সমর্থকদের সাথে নিয়ে প্রচারণা চালালেও রশিদ একা হাঁটছেন ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে। ভিন্ন জেলা থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে আসা এই প্রার্থীকে নিয়ে ভোটারদের আগ্রহের কমতি নেই। প্রত্যেক ভোটারের কাছে অন্তত দুইবার করে পৌঁছাতে চান রশিদ। অলিগলি, চায়ের দোকান কিংবা ঘরবাড়ি সব জায়গায় প্রচারণায় ব্যস্ত রশিদ। প্রচার চালাতে গিয়ে কাউকে কাউকে জুস, চকোলেটও কিনে দিচ্ছেন এই প্রার্থী।
গত শুক্র ও শনিবার নয়াবাজার, পাহাড়তলী, আগ্রাবাদসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রচারণা চালিয়েছেন রশিদ। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানকার (চট্টগ্রাম) মানুষ অনেক ভালো। আমাকে সহজে আপন করে নিয়েছে। আমি অনেকদূর থেকে এখানে এসেছি। ঘুরে ঘুরে ভোট চাইছি। মানুষ এলাকার সমস্যার কথা বলছে। আমি পাস করবো, এটা আমার বিশ্বাস। আর সংসদে যেহেতু একা যেতে হবে, তাহলে ভোট চাইতে একা যাওয়া দোষের কিছু না।’
আলাপকালে এই প্রার্থী জানান, তিনি দিরাই উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের হাজী আব্দুল করিমের ছেলে। ২০২০ সালে দিরাই পৌরসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করে ১৩৫ ভোট পেয়েছিলেন তিনি। ঢাকা-১৭ আসনেও তার প্রার্থী হওয়ার কথা ছিলো। তবে দল চায়নি বলে হননি। আগের নির্বাচনে কম ভোট পাওয়া নিয়ে তিনি মোটেও চিন্তিত নন তিনি। বরং দেশের তরুণ ও সুশীল সমাজের মধ্যে নির্বাচন ও রাজনীতি নিয়ে যে অনিহা সৃষ্টি হয়েছে, সেই ধারণাকে বদলে দিতেই তিনি চট্টগ্রামে নির্বাচন করতে এসেছেন বলে দাবি তার।
রশিদ মিয়া নির্বাচন উপলক্ষে চট্টগ্রামের নিউ মার্কেট এলাকার একটি আবাসিক হোটেলে উঠেছেন। সেখান থেকে প্রতিদিন তিনি প্রচারণা চালাতে যান। তার হলফনামা অনুযায়ী, তিনি একজন স্বশিক্ষিত। বর্তমানে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরিক্ষা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এক সময়ের প্রবাসী রশিদ মিয়ার কৃষিখাত থেকে বছরে আয় দুই লাখ টাকা। এমপি নির্বাচিত হলে স্থায়ীভাবে চট্টগ্রামে থাকতে চান তিনি।
রশিদ জানান, তিনি দীর্ঘদিন মধ্যপ্রাচ্যে ছিলেন। বিদেশে চলে যাওয়ার কারণে পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি। দেশে ফিরে মানুষের জন্য কাজ করার ইচ্ছে নিয়ে রাজনীতিতে নেমেছেন। ভবিষ্যতের লক্ষ্য আইনমন্ত্রী হওয়া। তাই আবার স্কুলে ভর্তি হয়েছেন।
নির্বাচনী খরচের বিষয়ে জানতে চাইলে রশিদ বলেন, ‘আমি যেহেতু সমাজসেবা করি তাই আমার অনেক শুভাকাঙ্খী আমাকে টাকা দেয়। নির্বাচনের ঘোষণা দেয়ার পর বন্ধুবান্ধব ও স্বজনরা দুই লাখ টাকার মতো দিয়েছে। লাগলে আরো খরচ পাঠাবে তারা।’
এদিকে রশিদ মিয়ার প্রার্থীতা নিয়ে ভোটারদের কেউ কেউ সমালোচনা এবং হাস্যরসে মেতেছেন। শহিদ চৌধুরী নামের হালিশহরের এক বাসিন্দা বলেন, ‘অন্য জেলা থেকে এখানে নির্বাচন করতে আসা হাস্যকর। তবে তার পরিচিতি থাকলে সমস্যা ছিলোনা।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের পরিচালনা বোর্ডের প্রধান আবু লায়স মুন্না বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের বেশি সময় নেই। এ কারণে চট্টগ্রামের কেউ প্রার্থী হতে আগ্রহ দেখাননি। তাই পরিচিতির জন্য রশিদ সাহেবকে প্রার্থী করা হয়েছে।’
গত ২ জুন এই আসনের এমপি ডা. আফছারুল আমীনের মৃত্যুর পর শূণ্য হওয়া আগামী ৩০ জুলাই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে প্রত্যেক কেন্দ্রে সিসিটিভি বসিয়ে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট নেওয়া হবে। নির্বাচনে রশিদ ছাড়াও আওয়ামী লীগ মনোনিত মো. মহিউদ্দিন বাচ্চু ‘নৌকা’, জাতীয় পার্টির মো. সামসুল আলম ‘লাঙ্গল’, তৃণমূল বিএনপির দীপক কুমার পালিত ‘সোনালী আঁশ’ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মনজুরুল ইসলাম ভূঁইয়া ‘রকেট’ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল