চট্টগ্রাম অঞ্চলে গত ১৪ বছরের মধ্যে চলতি বছরে অর্ধেকে নেমে এসেছে আউশ আবাদ। জুনের বৃষ্টিকে অবলম্বন করে আউশের বীজ রোপণ করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি বৃষ্টিপাত না হওয়া, তীব্র তাপদাহের কারণে আউশ আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন কৃষকরা। পাশাপাশি কৃষি প্রণোদনা পাওয়া নিয়েও রয়েছে সংশয়। তবে ১৪ বছরে এভাবে আউশের আবাদ অর্ধেকে নেমে আসাকে কৃষির জন্য শুভ লক্ষণ নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক ড. অরবিন্দ কুমার রায় বলেন, এ বছর আউশের আবাদ কম হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে আউশ মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টিপাত হয়নি। আউশ চাষাবাদ বৃষ্টির উপর নির্ভর করে, বৃষ্টি যে বছর কম হবে, সে বছর আউশের আবাদও কম হবে। তারপরও আমরা উৎসাহ দিয়ে থাকি আউশ চাষাবাদের বিষয়ে। এছাড়াও তিন ফসলি জমিতে আমন যেখানে ভালো হয় সেখানে আউশ রোপণ করে না অনেকে। আউশে খরচ কম থাকে বৃষ্টি হলে, তাই এটা করা হয়।
কৃষকরা বলছেন, আউশ আবাদের সময় বৃষ্টিপাত হলে আর আমাদের সেচ দিয়ে পানি আনতে হয় না। কিন্তু চলতি মৌসুমে বৃষ্টি না হওয়ার কারণে জমিতে পানি ছিল না। সেচ দিয়ে যদি পানি এনে রোপণ করলেও যে পরিমাণে গরম তাতে তা মারা যেত। এছাড়াও সারের দাম বৃদ্ধি, কৃষি প্রণোদনা পাওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে। যার কারণে কয়েকজন কৃষক আউশ চাষ করার চিন্তা করলেও মৌসুম ভালো না হওয়ার কারণে করেনি।
কৃষি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চলতি ২০২৩-২৪ বছরের আউশের চূড়ান্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৫ জেলা নোয়াখালী, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী ও লক্ষীপুর নিয়ে এবার আউশ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৩৮ হাজার ৩৫ হেক্টর। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছে মাত্র ৯৫ হাজার ১৭৪ হেক্টর জমিতে। তার মধ্যে চট্টগ্রামে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০ হাজার ২৩৪ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ৩৩ হাজার ৭১৯ হেক্টর। কক্সবাজারে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ২৯৭ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৭১৩ হেক্টর। নোয়াখালীতে ৪৭ হাজার ৮৯ হেক্টর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল, আবাদ হয়েছে ৩৪ হাজার ১৭৫ হেক্টর। ফেনীতে ১০ হাজার ৮১০ হেক্টর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল, আবাদ হয়েছে ৬ হাজার ৭০২ হেক্টর। লক্ষীপুরে ৩৫ হাজার ৬০৫ হেক্টর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল, আবাদ হয়েছে ১৬ হাজার ৮৬৫ হেক্টর। যা গত ১৪ বছরের তুলনায় সর্বনিম্ন আবাদ। ২০১০-১১ বছরে এ অঞ্চলে আবাদ হয়েছিল ১ লাখ ৭১ হাজার ৮৪০ হেক্টর।
গত ১৪ বছরের মধ্যে চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৫ জেলায় আউশের আবাদ হয়েছে ২০১০-১১ বছরে ১ লাখ ৭১ হাজার ৮৪০ হেক্টর, ১১-১২ বছরে ১ লাখ ৬৫ হাজার ১৩৫ হেক্টর, ১২-১৩ বছরে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৮৮০ হেক্টর, ১৩-১৪ বছরে ১ লাখ ৫২ হাজার ২৭৬ হেক্টর, ১৪-১৫ বছরে ১ লাখ ২৭ হাজার ৪৬৮ হেক্টর, ১৫-১৬ বছরে ১ লাখ ১৭ হাজার ৪৬ হেক্টর, ১৬-১৭ বছরে ১ লাখ ১৫ হাজার ৩৯০ হেক্টর, ১৭-১৮ বছরে ১ লাখ ১৪ হাজার ৫৭০ হেক্টর, ১৮-১৯ বছরে ১ লাখ ১৭ হাজার ৯১৩ হেক্টর, ১৯-২০ বছরে ৯৮ হাজার ৪১০ হেক্টর, ২০-২১ বছরে ১ লাখ ২৩ হাজার ৮৭৮ হেক্টর, ২১-২২ বছরে ১ লাখ ৬ হাজার ৩০২ হেক্টর, ২২-২৩ বছরে ১ লাখ ১২ হাজার ৯৩৩ হেক্টর আবাদ হয়েছিল।
বিডি প্রতিদিন/এমআই