‘ভাই আপনার হেলমেড কই। এভাবে হেলমেড ছাড়া মোটরসাইকেল চালালে দুর্ঘটনার শিকার হবেন।’ ‘ভাই মোটর রিক্সা নিয়ে ফ্লাইওভারে ওঠবেন না। সড়ক দিয়ে চালান।’
এভাবে শিক্ষার্থীরা সড়কে সড়কে চালক, যাত্রী, পথচারিসহ সকলকে সতর্ক ও হুশিয়ারি করছেন। মঙ্গলবার এবং বুধবার সকাল থেকে রাত অবধি শিক্ষার্থীরা সড়ক ব্যবস্থাপনা ও সড়কের আশপাশের বর্জ্য পরিস্কারের কাজটি করে যাচ্ছেন। আজ যোগ হয়েছে গ্রাফিতির মত ব্যতিক্রমী কর্মসূচি। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও।
শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা অনিন্দ্য সুন্দর, পরিচ্ছন্ন, স্বাস্থ্যসম্মত ও নান্দনিক শহর গড়তে চাই।
জানা যায়, গত সোমবার দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলে সড়কে নেমে আসে জনতা। ওই দিন নগরের সড়কে সড়কে জমে যায় নানা বর্জ্য। গত মঙ্গলবার সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা নিজ উদ্যোগে বর্জ্য পরিস্কারের কাজ শুরু করেন। তাছাড়া, এসময় সড়কে দায়িত্বপালনকারী ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় সড়কে তৈরি হয় বিশৃঙ্খলা। শিক্ষার্থীরা সড়কের মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে থেকে বাঁশির ফুৎকার দিয়ে পালন করেছেন সড়ক ব্যবস্থাপনার কাজ। ফলে নগরে কোথাও কোনো যানজট দেখা যায়নি। শিক্ষার্থীরা আজ নগরের জামালখান, আগ্রাবাদ, চকবাজার, নিউ মার্কেট, জিইসি, ২নং গেইট, মুরাদপুর, প্রবর্তক, নতুন ব্রিজ, লালখান বাজার, কাজীর দেউড়িসহ সকল গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সড়ক ব্যবস্থাপনার কাজ করেছেন। এ সময় তারা গাড়ির সিটবেল্ট বাঁধা, ভুল দিকে গাড়ি না চালানো, হেলমেটবিহীন বাইক না চালানো, যানজট নিয়ন্ত্রণ, রাস্তা গাড়ির পার্কিংমুক্ত রাখার কাজ করেছেন। এ কাজে প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। তাছাড়া, নগরীর বিভিন্ন স্থানের দেয়াল, স্থাপনা, ম্যুরালসহ বিভিন্ন জায়গায় লেকা কটুক্তি পরিস্কার করে সে সব দেয়ালে নান্দনিক চিত্র ও উক্তি লিখেছেন শিক্ষার্থীরা। এ কাজে ছিলেন প্রায় ৪০০ শিক্ষার্থী। একই সঙ্গে রাস্তা ও বিভিন্ন জায়গায় প্লাস্টিক, বর্জ্য ও নানা রকম ময়লা-আবর্জনাগুলো পরিস্কারে নিয়োজিত ছিলেন প্রায় এক হাজার ভলান্টিয়ার।
সোশ্যাল এক্টিভিস্ট ও স্বাধীন বাংলা (ট্রাফিক বিভাগ) এর সমন্বয়ক সাইদ খান সাগর বলেন, একটি বিপ্লবের পর সাধারণত রাষ্ট্রের অনেক অঙ্গপ্রতিষ্ঠান কিছুটা থমকে যায়। এবারও তাই হয়েছে। জনগণের স্বাভাবিক জনজীবন ফিরিয়ে দিতে আমরা শিক্ষার্থীরা একত্র হয়েছি। চট্টগ্রামকে আবার তার স্বরূপে ফিরাতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজ করেছি। কেউ গ্রাফিতি করছেন, কেউ শহর পরিস্কার করছেন এবং কেউ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করেছেন। নতুন এক বাংলাদেশ বিনির্মাণে সর্বস্তরের মানুষ এভাবেই এগিয়ে আসবে। এসব কাজে সর্বস্তরের মানুষ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। কেউ খাবার, কেউ টুপি, কেউ ছাতা, কেউবা হোটেলে ফ্রি খাবারের ব্যবস্থা করছেন। সবার সহযোগিতায় অনিন্দ্য একটা শহর বাস্তবায়নের প্রত্যাশা নিয়ে কাজ করছি।
কমিউনিটি রেসকিউ স্টেশনের সমন্বয়ক প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম নেসার বলেন, নগরের বিভিন্ন বড় বড় মোড়ে ‘কমিউনিটি রেসকিউ স্টেশনের’ কর্মীরা সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা এবং বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সড়ক ব্যবস্থাপনার কাজ করছেন। আমরা পরিচ্ছন্ন নগর চাই।
বিডি প্রতিদিন/এএম