বরিশাল নগরীর আলেকান্দা ব্যাপ্টিস্ট মিশন রোড থেকে নিখোঁজ হওয়ার ১১দিন পর ৫ম শ্রেণির ছাত্র জিহাদকে (১১) ফিরিয়ে দিতে তিন লাখ টাকা মুক্তিপন চেয়েছে একটি চক্র। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টা থেকে শুক্রবার পর্যন্ত বিভিন্ন মুঠোফোন নম্বর থেকে শিশু জিহাদের মা-বাবার কাছে ফোন করে এই মুক্তিপন দাবি করা হয়। এছাড়াও শিশু জিহাদের চিকিৎসার জন্য শুক্রবার সকালে ফরিদপুর হাইওয়ে পুলিশের কনস্টেবল হায়দার পরিচয়ে এক ব্যক্তি জিহাদের বাবার কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে ২ হাজার টাকা নেয় বলে জানিয়েছেন তার মা নুরুন্নাহার বেগম।
জিহাদ নগরীর পুলিশ লাইনের সামনের চা দোকানী এবং বাংলাবাজারের ডা. খাদেম হোসেন গলির বাসিন্দা মিজানুর রহমান ও নুরুন্নাহার দম্পতির দুই ছেলে-মেয়ের মধ্যে বড়। সে পুলিশ লাইনস্ দোহা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র।
নিখোঁজ জিহাদের মা নুরুন্নাহার বেগম জানান, প্রাইভেট পড়ার উদ্দেশ্যে গত ২৬ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে নিজ বাসা থেকে জিহাদ পার্শ্ববর্তী ব্যাপ্টিস্ট মিশন রোডের জাহিদ স্যারের বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। এরপর থেকে তার কোন সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুজি করেও জিহাদের কোন খোঁজ না পেয়ে গত ২৮ অক্টোবর কোতয়ালী মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তার বাবা মিজানুর রহমান। সাধারণ ডায়েরির অনুলিপি র্যাব-৮ কর্মকর্তাদের কাছে দেয়া হয় বলে জানান নুরুন্নাহার। র্যাব-পুলিশকে জানানোর পরও কোন অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েন তারা।
নুরুন্নাহার বেগম জানান, গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে অপরিচিত নম্বরের (০১৬৭৮৫৪৫৭৬৩) মুঠোফোন থেকে তার (নুরুন্নাহার) নম্বরে ফোন করে বলা হয় শিশু জিহাদ তাদের কাছে রয়েছে। তাকে ফেরত পেতে ৩ লাখ টাকা দিতে হবে। ওই রাতে কয়েক দফা ফোনের পর শুক্রবার সকালে ফরিদপুর হাইওয়ে পুলিশের কনস্টেবল হায়দার পরিচয়ে এক ব্যক্তি ফোন করে জিহাদের বাবা-মাকে জানায় একটি ট্রাকে বেনাপোল পাঁচারের সময় ফরিদপুর হাইওয়ে পুলিশ শিশু জিহাদকে উদ্ধার করে। তার একটি কিডনী কেটে নেয়া হয়েছে। ক্ষত স্থান থেকে রক্ত পড়ছে। এ জন্য টাকা দরকার। তাৎক্ষনিক চিকিৎসার জন্য জিহাদের বাবা মিজানুর রহমান কথিত পুলিশ কনস্টেবল হায়দারের নম্বরে (০১৭২৫৪৪২১১১) বিকাশের মাধ্যমে ২ হাজার টাকা পাঠান। পরে মিজান তার ছেলেকে আনতে ফরিদপুর গেলেও ওই নম্বরের ব্যক্তি টাকা চাওয়া-পাওয়ার কথা অস্বীকার করে। হতাশ হয়ে ফরিদপুর থেকে শুক্রবার সন্ধ্যায় বরিশাল ফিরে আসেন মিজান।
শুক্রবার দুপুরে আরেকটি নম্বর থেকে ফোন দিয়ে এক ব্যক্তি নিজেকে বেনাপোল থানার এসআই শরীফ পরিচয় দিয়ে জিহাদের মাকে জানায়, ভারতে পাঁচারের সময় জিহাদকে বেনাপোল স্থল বন্দর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। জিহাদকে হাসপাতালে ভর্তির জন্য এবারও বিকাশ করে টাকা পাঠাতে বলা হয় ওই নম্বর থেকে। কিন্তু প্রতারিত হওয়ার আশংকায় দ্বিতীয় দফায় বিকাশে টাকা পাঠায়নি তার পরিবার।
এছাড়া এদিন বিকেলে আরেকটি ফোন থেকে (০১৭৩৫৮১১৮৮১) শিশু জিহাদের মুক্তির জন্য ৩ লাখ টাকা পন চাওয়া হয়। দর কষাকষির পর সব শেষ দাবি করা হয় ২০ হাজার টাকা। এর মধ্যে ১০ হাজার টাকা নির্দিষ্ট বিকাশ নম্বরে দেয়ার পর জিহাদের সাথে তার মা-বাবাকে কথা বলিয়ে দেয়া হবে। এরপর বাকী ১০ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে পরিশোধের ২০ মিনিট পর শিশু জিহাদকে মুক্তি দেয়া হবে বলে ওই নম্বর থেকে জানানো হয়। তবে এসব বিষয়ে র্যাব-পুলিশকে কিছু না জানাতে হুশিয়ারী দেয় তারা।
কোতয়ালী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আতাউর রহমান জানান, শিশু জিহাদের বাবার দায়ের করা জিডি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
র্যাব-৮ কর্মকর্তা মেজর হাসিব জানান, জিহাদের বাবা-মা জিডির কপি নিয়ে র্যাবের কাছে গিয়েছিলেন। তারা পুরো বিষয়টি গুরুত্বের সাথে খতিয়ে দেখছেন।
বিডি-প্রতিদিন/০৬ নভেম্বর ২০১৫/ এস আহমেদ