বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আমিনুল ইসলাম বলেছেন, ডিম নিয়ে আমাদের মধ্যে ভুল ধারণা আছে। অনেকে মনে করেন ডিম খেলে মুটিয়ে যাবেন। কিন্তু ঘটে ঠিক উল্টোটা। ডিম ওজন কমায়। খারাপ কোলেস্টেরল ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় ডিম ও মুরগীর মাংস। চোখের ছানি ও ত্বকের সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। খাবার হিসেবে শুধু ডিমেই প্রাকৃতিকভাবে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। সপ্তাহে একজন নারী ছয়টি ডিম খেলে তার স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি প্রায় ৪০ ভাগ কমে যায়।
বাংলাদেশ প্রতিদিন আয়োজিত 'পোলট্রি শিল্পের সমস্যা: সম্ভাবনা ও করণীয়' শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে ওয়ার্ল্ড পোলট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সভাপতি শামছুল আরেফিন খালেদ এ কথা বলেন। বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজামের স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে ইডব্লিউএমজিএল কনফারেন্স রুমে শনিবার সকালে বৈঠকটি শুরু হয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ প্রতিদিন'র বার্তা সম্পাদক লুৎফর রহমান হিমেল।
পোলট্রি শিল্পকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ড. আমিনুল বলেন, এ শিল্পের চেয়ে সম্ভাবনাময় শিল্প দ্বিতীয়টি আছে বলে মনে হয় না। সারা বিশ্বে প্রাণীজ আমিষের ঘাটতি পূরণে পোলট্রি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। বাংলাদেশে জমি সীমিত, জনসংখ্যা দ্রুতগতিতে বাড়ছে। এই বর্ধিত জনসংখ্যার পুষ্টি পূরণে পোলট্রির বিকল্প নেই। অল্প সময়ে, কম জায়গায়, অল্প পুজিতে এ ব্যবসা সম্ভব।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ২০১২ সালের এক রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, প্রতিটি মানুষের বছরে মাংসের চাহিদা ৫৬ কেজি। সেখানে আমরা গড়ে খাই মাত্র ১১ দশমিক ২৭ কেজি। একমাত্র পোলট্রি দিয়েই দ্রুত এ চাহিদা পূরণ সম্ভব।
কৃষিবিদ ড. আমিনুল বলেন, এদেশে ৬০ লাখ মানুষ পোলট্রি শিল্পের সঙ্গে জড়িত। তাদের রুটি-রুজির ব্যবস্থা হয় এই খাত থেকে। এতে মুনাফাও খুব দ্রুত আসে। একমাসের মধ্যেই বিনিয়োগ লাভসহ উঠে আসে। অন্য কোন শিল্পে সেটা হয় না। প্রাকৃতিক দুর্যোগেও এ শিল্প দ্রুত পুষিয়ে নিতে পারে। সম্প্রতি আমরা পোলট্রি শিল্পের সঙ্গে বায়োগ্যাস উৎপাদন প্রযুক্তি যুক্ত করেছি। ক্ষুদ্র খামারিরা প্লান্ট বসিয়ে নিজেদের জ্বালানি চাহিদা পূরণ করছে। বিদ্যুৎও উৎপাদন করছে অনেকে। এই খাতের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল। তাই এটাকে এগিয়ে নিতে হবে।
তিনি বলেন, সম্ভাবনাময় হলেও পোলট্রি শিল্পের বিকাশে নানা বাধা আছে। আমরা উন্নত বাচ্চা উৎপাদন করতে পারছি না। অনেকে বিদেশ থেকে বাচ্চা আনছেন। দেশের ভেতর থেকে উন্নত বাচ্চা সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া মানসম্মত খাদ্য ও খাদ্যমূল্য একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেকে মাংস খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন ভয়ে। কিছু মানুষ খাদ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত গ্রোথ হরমোন মেশাচ্ছেন। ট্যানারির বিষাক্ত বর্জ্য খাদ্যে ব্যবহার করছেন। এতে লাঞ্চ, কিডনি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। গুটিকয় মানুষের এ কাজের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পুরো সেক্টরে। এটা প্রতিরোধ করা দরকার। সরকারকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
পোলট্রি খাতে গবেষণার তাগিদ দিয়ে অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম বলেন, ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে সমন্বয় করে এ খাতে আমাদের গবেষণা হচ্ছে না। এটা দরকার। বাংলাদেশের আবহাওয়ার উপযোগী, এদেশের মানুষের জন্য উপযোগী জাত উদ্ভাবন করতে হবে। আমরা চেষ্টা করছি। আশা করছি শীঘ্রই সফলতা আসবে।
তিনি বলেন, পোলট্রির খাদ্যমূল্য বেড়ে যাচ্ছে। খামারিরা মুনাফা কম পাওয়ায় ব্যবসা থেকে সরে যাচ্ছেন। এছাড়া গ্রামে-গঞ্জের খামারগুলোতে কিছু রোগ ঢুকে গেছে। এসব দিকে নজর দেওয়া দরকার।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক, জাতীয় রাজস্য বোর্ডের কর কমিশন বিভাগের সদস্য কালিপদ হালদার, বাংলাদেশ পোলট্রিশিল্প সমন্বয় কমিটির আহবায়ক মসিউর রহমান, ওয়ার্ল্ড পোলট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সভাপতি শামছুল আরেফিন খালেদ, বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ডা. মঞ্জুর মোর্শেদ, এনিমেল হেলথ কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ- এর সাধারণ সম্পাদক ডা. নজরুল ইসলাম, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অজয় কুমার রায়, ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ- এর সাইদুর রহমান বাবু, রেনেটার এনিমেল হেলথ ডিভিশনের প্রধান সিরাজুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূইয়া, অধ্যাপক নজরুল ইসলাম খান, র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার আলম প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে সমাপনি বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের যুগ্ম সম্পাদক আবু তাহের।
বিডি-প্রতিদিন/২৩ এপ্রিল ২০১৬/ এস আহমেদ