কখনো মামলার আইনী মারপ্যাচ, কখনো রেলওয়ে শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের তদবির বাণিজ্য, কখনো পছন্দের লোক নিতে রেলের দায়িত্বশীলদের কাছে সুপারিশ, কখনো দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের নিয়োগ কমিটিতে থাকার অনীহাসহ নানা ধরণের মেরুকরণে ঘুরপাক খাচ্ছে রেলওয়ের নিয়োগ প্রক্রিয়া। এর সঙ্গে আছে নিয়োগপ্রাপ্তদের কাগজপত্র যাছাই-বাছাইয়ে দুদক ভীতিও।
দুদক ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য পরিচয়ে কৌশলী তদবিরসহ নানাবিধ কারণে রেলের নিয়োগগুলো ধীরগতিতেই চলছে বলে রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা জানান। তবে স্বচ্ছতার মাধ্যমে নিয়োগ শেষ করতে রেলপথ মন্ত্রী মো. মুজিবুল হক এমপির কঠোর নির্দেশনা ও মনিটরিং থাকলেও উক্ত সমস্যাগুলোর কারণে লোকবল সংকটে রেলের বিভিন্ন সেক্টর ভূগতে হচ্ছে বলেও জানান তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলওয়ে অধিকাংশ কর্মকচারি ক্ষোভের সাথে বলেন, রেলের চলমান নিয়োগে চলছে ব্যাপক তদবির। সুপারিশ করে রেল শ্রমিক সংগঠনগুলোর নেতারা, রাজনৈতিক নেতাদের সুপারিশ। সাথে দুদক ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য পরিচয়ে সুপারিশ বা জোর তদবির লেগেই রয়েছে। তাদের লোকবল নিয়োগ না হলে অতীতের বিষয় টেনে কৌশলী অন্যভাবে হয়রানী করারও চেষ্টা চলে রীতিমতো। এতে করে উর্ধতন কর্মকর্তারা ও নিয়োগ কমিটির সদস্যরা সম্মানের কারণে নিয়োগে কাজ করতে অনীহা প্রকাশ করছে অনেকেই।
পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) প্রকৌশলী মো. আবদুল হাই বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রেলপথ মন্ত্রীর নির্দেশনা স্বচ্ছ এবং জবাবদিহীতার মধ্যেই রেলের সকল প্রকার নিয়োগ শেষ করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েকপি পদের পরীক্ষা শেষও হয়েছে। ৮০ শতাংশ হরিজন সম্প্রদায়কে নিশ্চিত করার নির্দেশনাও রয়েছে। সকল নির্দেশনা মেনেই দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করবেন বলে জানান তিনি।
রেলওয়ে শ্রমিকলীগের নেতা কামাল পারভেজ বাদল বলেন, রেলে দীর্ঘদিন ধরেই লোকবল সংকট রয়েছে। এ সংকটের মাঝেই চলছে রেল প্রশাসন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা এবং রেলপথ মন্ত্রী মুজিবুল হক এমপি ও রেলওয়ে সংসদীয় কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর প্রচেষ্টায় চট্টগ্রামসহ সারাদেশে রেলের অনেক পরিবর্তন এসেছে। এতে দ্রুত রেলের নিয়োগ শেষ হলে কাজের গতি আরো বাড়বে বলে জানান তিনি।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, রেলের চলমান নিয়োগের খালাসীর ৮৬৫টি পদের নিয়োগটি মো. শরিফ উদ্দিন নামের এক চাকুরী প্রার্থীর মামলার কারণে হাইকোর্ট ৬ মাসের জন্য স্থগিত (ডিসেম্বর পর্যন্ত) করেছে। তার আগেও ৬ মাসের জন্য স্থগিত ছিল। ইতিমধ্যে ২’১২টি পদের পরিচ্ছন্ন কর্মী, ১৮০টি পদে ট্রেন এ্যাপ্রেন্টিস, ১৮টি পদের মেটারিয়াল চেকার, ১৭টি পদের সাটঁ মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর, ২১টি পদের নিরাপত্তা প্রহরী, ৬৬টি পদের অফিস সহকারি কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক এবং অস্থায়ীভাবে সৃজনকৃত ১ হাজার ৩৮পি পদের গেইট কিপার নিয়োগ পরীক্ষা ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। তাছাড়া বর্তমানে চলমান আছে ১২৬টি পদের আরো একটি খালাসী পদের নিয়োগ পরীক্ষা।
জানা গেছে, পরীচ্ছন্ন কর্মী নিয়োগ শেষ পর্যায়ে থাকলেও নানাবিধ জটিলতায় এসব পদের নিয়োগ প্রায় বাধার সৃষ্টি হয়ে পড়েছে। এখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ৮০ শতাংশ জাত হরিজন (সুইপার) নিয়োগের নির্দেশনা রয়েছে। এ হরিজন নিয়োগ নিয়ে বিভিন্ন জাত হরিজন দেখানোর জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্টানের সনদ সংযুক্তি করা হয়েছে। এতে কেন্দ্রীয় হরিজন ঐক্য পরিষদ, হরিজন ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম জেলা শাখা, হরিজন মানবাধিকার ফেডারেশন এবং সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন পৌরসভার সংযুক্তি করা হয়েছে। এতে ইস্যুকৃত সনদগুলোর মধ্যে কোনটি গ্রহণযোগ্য সে বিষয়ে কোন ধরণের সুস্পষ্ট সরকারি নির্দেশনা না থাকায় হিমশিম খেতে হচ্ছে রেল প্রশাসনের। এতে আবার অনেকেই ভুয়া সনদ দিয়েও জাত সুইপার প্রার্থী হতে কাগজপত্র সংযুক্তি করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে রেল সূত্রে জানা গেছে।
বিডি প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন