ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে বাচ্চা বদলের অভিযোগ উঠেছে। নবজাতক জন্মের পর ধাত্রী পরিবারের সদস্যদের কাছে ছেলে বলে পরিচয় দেন। একই সঙ্গে তার চিকিৎসাপত্রেও ছেলে লেখা হয়। কিন্তু অবজারভেশনে যাওয়ার পর চিকিৎসক বলছেন ছেলে নয়, মেয়ে হয়েছে। যদিও বাচ্চা বদলের ব্যাপারটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন ঢামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এমনই এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের শিশু বিভাগের ২১২ নম্বর ওয়ার্ডে। এ ঘটনা নিয়ে পুরো হাসপাতাল এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে তোলপাড়। আর এমন পরিস্থিতিতে কী করবেন অার ডাক্তারকেই বা কী বলবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না সদ্য পিতা হওয়া মো. শরিফ। কারণ তিনি শুনেছেন তার ছেলে হয়েছে এবং চিকিৎসাপত্রেও ছেলে লেখা হয়েছে। অথচ অবজারভেশন চিকিৎসক বলছেন মেয়ে হয়েছে। পরে ভালো করে খেয়াল করে দেখেন অাসলেই তার কোলের বাচ্চাটি মেয়ে শিশু। এতক্ষণে তার মনে হলো সন্তান বদল হয়ে গেছে।
সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে খুকি নামে একজন সন্তান-সম্ভাবা নারীকে ভর্তি করা হয় ঢামেকের ২১২ ওয়ার্ডের ১৯ নম্বর বেডে। দিবাগত রাত ৩টা ২৭ মিনিটে একটি সন্তান জন্ম দেন তিনি। কিন্তুু সন্তানটি ছেলে না মেয়ে তা নিয়ে ভোর ৪টা থেকেই শুরু হয় তোলপাড়। মাত্র অাধা ঘণ্টার মধ্যেই শুরু হয় সন্তানটিকে নিয়ে হইচই। কারণ খুকি সন্তান জন্ম দেয়ার পর সেখানে থাকা ধাত্রী স্বজনদের কোলে বাচ্চাটি তুলে দিয়ে বললেন তাদের ছেলে হয়েছে। এজন্য টাকাও দাবি করেন সন্তানের বাবা শরিফের কাছে। ২০০ টাকা নিতে রাজি না হওয়ায় ৫০০ টাকা দিয়ে তাদের খুশি করেন। এরপর টাকা নিয়ে বাচ্চাটিকে গোসল করাতে তাদের কাছ থেকে অাবার নিয়ে যায় ওই ধাত্রী। অাধা ঘণ্টা পর গোসল করিয়ে এনে বাচ্চাটিকে তাদের কাছে দিয়ে চলে যায় ওই ধাত্রী।
সদ্য পিতা হওয়া শরিফ অভিযোগ করে বলেন, ধাত্রী বাচ্চাটাকে গোসল করিয়ে অামার কাছে দিয়ে বললেন, ২১৪ নম্বর রুমে নিয়ে যেতে অবজারভেশন করাতে। সঙ্গে একটা কাগজ (ডেসক্রিপশন) দিলেন ডাক্তারকে দেয়ার জন্য। ওই কাগজ ডেলিভারির সময় যে ডাক্তার ছিলেন তাদের লেখা কাগজ। সেই কাগজ নিয়ে যখন ২১৪ নম্বর রুমে গিয়ে ডাক্তারকে দিলাম তখন তিনি বললেন, এটা তো ছেলের কাগজ কিন্তু অাপনার কোলে তো মেয়ে বাচ্চা। এটা কোথায় থেকে এনেছেন। যান অাপনার বাচ্চা নিয়ে অাসেন অার এটা দিয়ে অাসেন।
শরিফ জানায়, ডাক্তারের এমন কথায় সে দ্রুত ওই রুম থেকে বের হয়ে অাবারও ২১২ নম্বর রুমে গিয়ে নার্সদের কাছে জানতে চান তাদের বাচ্চা কোথায়? কোলের শিশুটি তাদের বাচ্চা নয়। এমন কথা শুনে নার্সরা তাকে কোনো জবাব দিচ্ছিলেন না। পরে সে চিকিৎসকের কাছে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে বলছেন, ওই মেয়ে শিশুটাই তার। চিকিৎসকরা ভুল করে ছেলে লিখে ফেলেছে। কিন্তু এত বড় ভুল হবার কথা নয় বলে জানান শরিফ।
তিনি অারও জানান, তার স্ত্রীকে ঢামেকে অানার অাগে সোহারাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়েছিলেন। সেখানে চিকিৎসকরা অাল্ট্রাসনোগ্রাফি করে দেখেন পেটের বাচ্চার অবস্থা ক্রিটিক্যাল। তাই তারা ঢামেকে রেফার করেন। শরিফের অভিযোগ, ওই হাসপাতালের পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাগজগুলোও এখানকার নার্সরা টানাটানি করে ছিঁড়ে ফেলেছে। ওই কাগজপত্রগুলো তাকে দেয়নি। সবগুলো লুকিয়ে ফেলেছে। তার অভিযোগ, যদি তার ছেলে সন্তান না হয় তবে কেনো তার কাগজপত্রগুলো তাকে দেয়া হলো না? সেগুলো কেন ছিঁড়ে ফেলা হলো।
তবে বাচ্চা বদলের ব্যাপারটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন ঢামেকের উপ-পরিচালক শাহ অালম তালুকদান। তিনি বলেন, এমন একটা অভিযোগ অামরা পেয়ে সকাল থেকে বিভিন্নভাবে তদন্ত করলাম। কোনোভাবেই অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হয়নি। তিনি দাবি করেন, চিকিৎকরা হয়তো ভুল করে মেয়ের জায়গায় ছেলে লিখে ফেলেছেন।
সূত্র: জাগো নিউজ
বিডি-প্রতিদিন/০২ মে, ২০১৮/মাহবুব