হাজার কোটি টাকার হাইটেক পার্কসহ তিন মেগা প্রকল্প হুমকিতে পড়ায় রাজশাহীর দু’টি বালুঘাট বন্ধে জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের ওপর রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) বিচারপতি মোহাম্মদ আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দিয়েছেন।
হাইকোর্ট পরবর্তী চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে ভূমি ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঢাকা ও উত্তরাঞ্চলীয় প্রধান প্রকৌশলী, রাজশাহীর জেলা প্রশাসক, পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী ও পবা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশ দিয়েছেন।
রাজশাহীর নবগঙ্গা এলাকার বাবর আলীর করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট এই আদেশ দিয়েছেন।
অভিযোগের বিবরণ অনুযায়ী রাজশাহীর মহানগরীর মধ্যে পদ্মা নদীর তীরবর্তী হাড়ুপুর ও নবগঙ্গা নামের দু’টি বালুমহাল জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে আগামী পহেলা বৈশাখ বাংলা ১৪২৬ সালের জন্য মেসার্স রজব আলীকে ইজারা প্রদান করা হয়। কিন্তু ওই দু’টি বালুমহাল রাজশাহী মহানগরীতে বাস্তবায়নাধীন হাজার কোটি টাকার বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক এলাকার নিকটবর্তী স্থানে অবস্থিত। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড পদ্মার নদী তীরের ভাঙন রোধে সম্প্রতি ৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে হাড়ুপুর থেকে নবগঙ্গা এলাকা পর্যন্ত একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।
একই সঙ্গে পদ্মার উজানে নগরীর উপকণ্ঠ সোনাইকান্দি থেকে রাজশাহীর বুলনপুর পর্যন্ত এলাকায় আরও ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মায় ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু করেছে পাউবো। আলোচিত নবগঙ্গা ও হাড়ুপুর বালুমহাল দু’টি এসব মেগা প্রকল্পের আওতাধীন এলাকায় অবস্থিত।
পদ্মা নদী থেকে ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে বালু তুলে প্রথমে নৌকায় ভরা হচ্ছে এবং পরে মোটা পাইপের মাধ্যমে বাঁধের ওপর দিয়ে বালু বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক এলাকায় জমা করে রাখা হচ্ছে। এতে তীর সংরক্ষণ বাঁধের উপর দিয়ে পানি মিশ্রিত বালু নদীতে পড়ায় বাঁধের অবকাঠামো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কের মতো অতি গুরুত্বপুর্ণ প্রকল্পটিও বালুস্তুপের একেবারেই কাছে হওয়ায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বিভিন্ন সমস্যার উদ্ভব হচ্ছে। ফলে প্রকল্পের কাজের গতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ কারণে জনস্বার্থে এই দু’টি বালুমহালের ইজারা বাতিল করে বালুমহাল দু’টি বন্ধে বাদী বাবর আলী রিট করেন।
এদিকে রিটকারীর আইনজীবী ব্যারিস্টার খোরশেদ আলম খান আরো জানান, বালুমহাল ইজারা দিয়ে সামান্য কিছু রাজস্ব আয়ের কারণে হাজার কোটি টাকার তিনটি মেগা প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে-এমনটা হওয়া উচিতও নয় আবার যুক্তিযুক্তও নয়। জনস্বার্থে রিটকারী বালুমহাল দু’টি বন্ধের দাবি করেছেন। হাইকোর্ট এ কারণে রুল দিয়েছেন। এতে সরকারের প্রকল্পগুলো উপকৃত হবে।
এ ব্যাপারে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক এসএম আবদুল কাদের বলেন, রুলের অনুলিপি হাতে পাওয়ার পর পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
তিনি আরও জানান, মেগা প্রকল্প এলাকায় বালুমহালের উপস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায়
ইতোমধ্যেই তিনি পরিস্থিতি মূল্যায়নের জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছেন। জনস্বার্থে আদালত বালুমহাল বন্ধের আদেশ দিলে তা বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গত ১ এপ্রিল ‘রাজশাহীতে তিন মেগা প্রকল্প বিপন্ন করে তুলেছে বালুঘাট’ শিরোনামে বাংলাদেশ প্রতিদিন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন