রাজধানীর বাড্ডায় ছেলেধরা সন্দেহে তাছলিমা বেগম রেণুকে পিটিয়ে হত্যার প্রধান আসামি হৃদয় মঙ্গলবার রাতে গ্রেফতার নারায়ণগঞ্জের ভুলতা থেকে গ্রেফতার হয়েছেন। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকারও করেছেন তিনি।
গ্রেফতার এড়াতে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে আত্মগোপনে থাকার লক্ষ্যে ন্যাড়া হয়েছিলেন বলে পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান হৃদয়। সেইসঙ্গে রেনুকে হত্যার দিন পরা পোশাকও পুড়িয়ে ফেলেছেন তিনি।
আজ বুধবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন। তিনি জানান, হৃদয় দায় স্বীকারের পাশাপাশি এ ঘটনায় জড়িত বেশ কয়েকজনের নামও বলেছেন।
রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন আব্দুল বাতেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হৃদয় জানিয়েছে ঘটনার দিন রেনু স্কুলে প্রবেশ করার সময় গেটে থাকা অন্য এক নারী অভিভাবক তার পরিচয় এবং বাসার ঠিকানা জানতে চান। এর পরিপ্রেক্ষিতে রেনু ওই নারীকে তার নাম-ঠিকানা জানান। সে সময় ওই নারী রেনুকে দেখিয়ে ছেলেধরা বলে চিৎকার করেন। এর মধ্যে রেনুকে স্কুলের একটি কক্ষে বন্দি করা হয়। ছেলেধরার গুজবটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তে কয়েকশ মানুষ ভিড় জমায় স্কুলের আশপাশে। এদের মধ্যে উৎসুক জনতা স্কুলের ভেতরে প্রবেশ করে রেনুকে বের করে পিটুনি দেয়। হৃদয়ও তাদের সঙ্গে অংশ নেয়।
হৃদয় জানান, তিনি স্কুলের পাশে একটি দোকানে সবজি বিক্রি করেন। ওইদিন সবজি বিক্রি শেষে তিনি স্কুলের কাছে দাঁড়িয়েছিলেন। রেনুকে স্কুলে প্রবেশ করতে দেখেছিলেন তিনি। ঘটনার পর তিনি (হৃদয়) যখন বুঝতে পারলেন পুলিশ তাকে গ্রেফতার করবে তখন নারায়ণগঞ্জে পালিয়ে যান।
সংবাদ সম্মেলনে আবদুল বাতেন বলেন, রেনু এবং ওই নারী (যে চিৎকার দেয়) পূর্বপরিচিত কিনা সেটি খতিয়ে দেখতে হবে। ঘটনাটি পরিকল্পিত কিনা তা ওই নারীকে জিজ্ঞাসাবাদের পর বলা যাবে। কারণ রেনুকে দেখে তিনিই প্রথম ‘ছেলেধরা’ বলে চিৎকার করেছিলেন।
মামলার সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (২০ জুলাই) সকালে উত্তর বাড্ডায় ছেলেধরা সন্দেহে ওই নারীকে পিটিয়ে আহত করে বিক্ষুব্ধ জনতা। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় শনিবার বাড্ডা থানায় নিহতের ভাগনে নাসির উদ্দিন অজ্ঞাত ৪০০-৫০০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।
মামলায় বলা হয়, অতর্কিতভাবে ওই নারীকে স্কুলের অভিভাবক, উৎসুক জনতাসহ অনেকে গণপিটুনি দেয়। এতে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৪০০-৫০০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তি জড়িত।
জানা গেছে, নিহত তাসলিমা বেগম রেনুর ১১ বছরের এক ছেলে ও চার বছর বয়সী এক মেয়ে রয়েছে। আড়াই বছর আগে স্বামী তসলিম উদ্দিনের সঙ্গে তার বিবাহবিচ্ছেদ হয়।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম