এক প্রেম ছেড়ে আরেক প্রেম। দ্বিতীয় প্রেম চলতে চলতে ফিরে আসে পুরনো প্রেমিকও। ত্রিভুজ প্রেমের এক পর্যায়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন প্রেমিকা। বিয়ে করেন দ্বিতীয়জনকে।
নবজাতকের পিতা হিসেবে স্ত্রীর প্রেমিককে সন্দেহ স্বামীর। ভেতরে ভেতরে ক্ষোভ। পরিকল্পনা করে স্ত্রীর প্রেমিককে বুড়িগঙ্গার তীরে নিয়ে খুনের পর ভাসিয়ে দেওয়া হয় মরদেহ। একটি নিখোঁজ সাধারণ ডায়েরির তদন্তে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর এই জীবনগল্প।
ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে অনলাইন ফুড ডেলিভারির ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম রিমনের প্রতিষ্ঠানে প্রায় দু’বছর আগে কাজ নেন মিম। দ্রুতই গড়ে ওঠে দু’জনের প্রেম। ব্যবসায় সহায়তার জন্য প্রেমিককে বিশ হাজার টাকা ধার দেন প্রেমিকা। সাত মাস পর ভেঙে যায় দু’জনের সম্পর্ক।
এরপর মোটর মেকানিক শুভ’র সঙ্গে পরিচয় থেকে প্রেম মিমের। ক’দিন বাদে ফিরে আসে পুরনো প্রেমিকও। ত্রিভুজ প্রেমের এক পর্যায়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন মিম। কিছুদিন পর বিয়ে করেন দ্বিতীয় প্রেমিক শুভকে। প্রথম প্রেমিক রিমনের সঙ্গেও অটুট সম্পর্ক। ছ’ মাস আগে জন্ম নেয় নবজাতক। মিমের অন্য সম্পর্ক জেনে যাওয়ায় সন্তানের পিতা হিসেবে স্ত্রীর প্রেমিককে সন্দেহ শুভ’র।
মিমের দেওয়া বিশ হাজার টাকার মধ্যে দুই দফায় ঊনিশ হাজার টাকা তুলে নেয় শুভ। এই দেনা-পাওনা মেটানোর মধ্য দিয়ে দু’জনের মধ্যে গড়ে ওঠে ভাল সম্পর্ক। মাঝে মাঝে তারা একসঙ্গে ঘোরাঘুরিও করেন। কিন্তু স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়ায় রিমনকে হত্যার পথ খুঁজতে থাকেন শুভ।
এ মাসের ৭ তারিখে কামরাঙ্গীরচর থেকে রিমনকে সিএনজি অটোরিকশায় তুলে কেরানীগঞ্জের আঁটিবাজারের দিকে রওনা দেন শুভ। পথে ইয়ামিন নামে আরেকজনকে তুলে নেন নিজের সুরক্ষার জন্য। তারপর তিনজন মিলে চলে যান বুড়িগঙ্গার তীরে। স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে রিমনের সঙ্গে কথা বলেন শুভ। ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চান রিমন। তখনই কোমরে লুকিয়ে রাখা হাতুড়ি বের করে পিটিয়ে স্ত্রীর প্রেমিককে খুন করে মরদেহ নদীতে ভাসিয়ে দেন শুভ। চব্বিশ ঘণ্টারও বেশি সময় পর শৈলমাছি ঘাটের কাছে ভেসে ওঠে মরদেহ। উদ্ধারের পর সাভার থানায় মামলা করে নৌ পুলিশ।
পরদিন কামরাঙ্গীরচর থানায় নিখোঁজ সাধারণ ডায়েরি করেন রিমনের স্বজন। রিমনের সঙ্গে থাকা মোবাইল উদ্ধারের সূত্রে শুভকে ধরে পুলিশ। বেরিয়ে আসে খুনের তথ্য।
ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, “তাকে (শুভ) জিজ্ঞাসাবাদ করতে করতে এক সময় সে বলে রিমনকে সে মেরে ফেলেছে। তার বউয়ের সাথে রিমনের সম্পর্ক ছিল। এটা সে সহ্য করতে পারেনি। তার বউও স্বীকার করেছে রিমনের সাথে তার সম্পর্ক ছিল এবং তারা একসাথে ব্যবসাও করতো।”
অজ্ঞাত মরদেহ হিসেবে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে থাকা রিমনের মরদেহ দেখাতে স্বজনদের নিয়ে যায় পুলিশ। খুনের ষোলো দিন পর শনাক্ত হন রিমন।
বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, “জানা যায় মামলায় রজু হয়েছে যে- মামলার ভিকটিমকে নদীতে পাওয়া গেছে। আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারি মরদেহটি সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলের মর্গে রাখা আছে।”
রিমন হত্যা মামলায় শুভ ছাড়া অন্য কেউ জড়িত আছে কি না তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
ভিডিও: সৌজন্য ডিবিসি
বিডি প্রতিদিন/কালাম