১১ আগস্ট, ২০২২ ২১:১৬
পাঁচ শতাধিক ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি থেকে টার্গেট এক কোটি টাকা উত্তোলন

সিদ্ধিরগঞ্জে শোক দিবস পালনের নামে নূর হোসেনের ভাইয়ের চাঁদাবাজি

নারায়ণগঞ্জ ও সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি

সিদ্ধিরগঞ্জে শোক দিবস পালনের নামে নূর হোসেনের ভাইয়ের চাঁদাবাজি

১৫ আগস্ট শোক দিবস পালনের জন্য নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নূর হোসেনের ছোট ভাই নুরুজ্জামান ওরফে জজ মিয়া শিমরাইল প্রতিটি ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিকদের ডেকে নিয়ে হুমকি দিয়ে ৫০ হাজার টাকা করে চাঁদা তুলছেন। শোক দিবসকে পুঁজি করে পাঁচ শতাধিক ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিকদের কাছ থেকে কোটি টাকা চাঁদাবাজির মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছেন তিনি। এরই মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সড়কের শিমরাইল মোড়ে বিশাল আকৃতির একটি প্যান্ডেল করা হয়েছে, যেখানে শোক দিবসের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।

সহযোগিরা ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ীদের জজ মিয়ার অফিসে ডেকে নিয়ে বলেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান সাহেবের নির্দেশ বড় করে ১৫ আগস্ট শোক দিবস অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে। আর এজন্য ৩৬৫ ডেক বিরিয়ানির আয়োজন করা হবে। এ আয়োজনে খরচ করা হবে উত্তোলিত অর্থ থেকে।

জজ মিয়া আন্তঃজেলা ট্রাক চালক ইউনিয়ন শিমরাইল শাখার সভাপতি। ঐ ট্রাক চালক ইউনিয়নে দীর্ঘদিন সভাপতি ছিলেন সাত খুন মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নূর হোসেন।

গত ৫ আগস্ট থেকে শিমরাইল ট্রাক টার্মিনালের পাশে বিভিন্ন ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিকদের জজ মিয়ার সহযোগিরা ফোন করে তার অফিসে (অন্তঃজেলা ট্রাক চালক ইউনিয়ন কার্যালয়) ডেকে নিয়ে ভয়-ভীতি ও হুমকি-ধমকি দিয়ে শোক দিবসের নামে এ চাঁদা উত্তোলন করা হচ্ছে।

শিমরাইল এলাকায় প্রায় পাঁচ শতাধিক ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি রয়েছে। ব্যবসায়ীরা আদমজী ইপিজেডসহ শিল্পাঞ্চলের শিল্প কারখানা পণ্য চট্টগ্রাম পোর্টসহ বিভিন্ন স্থানে পণ্য পরিবহন করে আসছে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রশিদ জানান, ৮ আগস্ট দুপুরে জজ মিয়ার সহযোগিরা ফোন করে আন্তঃজেলা মালিক সমিতির অফিসে যেতে বলেন। আমি তার অফিসে না যাওয়ায় বিপুল সংখ্যক লোকজন নিয়ে আমার অফিসে জজ মিয়া যায়। তখন আমার অফিসের বাইরে দশ পনের জন ছিল। চার-পাঁচজনের সাথে জজ মিয়া আমার অফিসে প্রবেশ করেই বলেন, এখানে ব্যবসা করবেন না চলে যাবেন। এখানে ব্যবসা করতে হলে আমি যেভাবে বলবো, সেভাবে আপনাকে চলতে হবে। কাল লোকজন ফোন করে আপনাকে ডেকেছিল আপনি আমার অফিসে কেন যাননি। এ ঘটনার পর সামগ্র ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান বলেন, আমার কাছে এখনও কেউ এমন অভিযোগ নিয়ে আসেনি। তবে আমি শুনেছি নুরুজ্জামান ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির মালিকদের কাছ থেকে ২০ হাজার, ৫০ হাজার এমন টাকা চেয়েছে। এ বিষয়ে জানতে আমি কয়েকবার তাকে ফোন করলেও সে আমার ফোন রিসিভ করেনি।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি হাজী ইয়াসিন মিয়া বলেন, আমার কাছে এমন কোন অভিযোগ আসেনি। বিষয়টি আমি জানি না। 

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান বলেন, কয়েক জায়গায় এমন চাঁদা দাবির ঘটনা ঘটেছে। তবে কেউ টাকা দেয়নি। আমরাও বিষয়টি শুনেছি এবং তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের একটি টিম সেখানে পাঠাই। তবে এ বিষয়ে আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত কেউ কোন অভিযোগ জানায়নি।

এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার নূর হোসেনের ভাই জজ মিয়ার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

সাধারণ ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির কয়েকজন মালিকের সাথে কথা হলে নাম প্রকাশ না করা শর্তে তারা বলেন, গত নাসিক নির্বাচনে নূর হোসেনের অপর ছোট ভাই নুরুদ্দিন মিয়া কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পরপরই আন্তঃজেলা ট্রাকচালক ইউনিয়নের কার্যালয়ের অফিস নির্মাণ করেন জজ মিয়া। এসময় বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় চাঁদাবাজির আশঙ্কা প্রকাশ করে সংবাদ প্রকাশ করা হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

বিডি প্রতিদিন/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর