৫ মে, ২০২৩ ২২:১৯

সাত খুনের আসামি ইকবালকে পুরস্কৃত করল বিএনপি !

সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি

সাত খুনের আসামি ইকবালকে পুরস্কৃত করল বিএনপি !

নাসিক ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন

নারায়ণগঞ্জে সাত খুন মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ইকবাল হোসেনকে দলীয় পদ দিয়ে পুরস্কৃত করেছে বিএনপি। তাকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক করে গত ৪ মে কমিটি ঘোষণা করেছে জেলা বিএনপি। সারাদেশসহ বিশ্বব্যাপী সমালোচিত নারকীয় এ হত্যাকাণ্ডের ৯ বছর পার হয়েছে গত ২৭ এপ্রিল। 

ইকবাল শুধু সাত খুন নয় জেলা বিএনপির বর্তমান প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে হত্যাচেষ্টা মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামি। ইকবালসহ আরো দু’জনের পরিকল্পনা ও অর্থায়নে গত বছরের ২৫ এপ্রিল ঢাকার পল্টনে অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে হত্যার উদ্দেশে উপর্যপুরি ছুরিকাঘাত করা হয়। তিনি অবশ্য প্রাণে বেঁচে গেছেন।

এদিকে ইকবাল হোসেনকে এ পদ দেওয়ায় স্থানীয় বিএনপিতে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মী ও জনসাধারণের মাঝে ব্যাপক সমালোচনার পাশাপাশি প্রশ্ন উঠছে যে এমন জঘণ্য অপরাধের সাথে যার নাম জড়িয়ে আছে তাকে দিয়ে বিএনপি কী অর্জন করতে চায় ?

সাত খুনের ঘটনার পর ১৪ দিনের মাথায় ২০১৪ সালের ১২ মে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া নিহত নজরুল ইসলামের বাড়িতে এসে নিহতদের পরিবারকে সান্ত্বনা দেন এবং আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

অপরদিকে অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে হত্যাচেষ্টার পর বিএনপির মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় অনেক নেতা হাসপাতালে ছুটে যান অধ্যাপক মামুনকে দেখতে। সেখানেও তারা হত্যাচেষ্টাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।

রাজনৈতিক আধিপত্যের দ্বন্দ্বে ঘটে নৃশংস এই দুই ঘটনা। ইকবাল হোসেন ঘটনা দুটির একটিতে এজাহারভুক্ত এবং অপরটিতে চার্জশীটভুক্ত হওয়ার পরও বিএনপি তাকে গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করেছে। 

সাত খুনের এজাহারে ইকবাল: 
ঘটনার পরদিন ফতুল্লা থানায় নিহত নজরুলের স্ত্রী বিউটি ইসলাম ৬ জনকে এজাহারভুক্ত আসামি করে মামলা করেন। মামলায় থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নুর হোসেন, থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াছিন, থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক ভূঁইয়া রাজু, নুর হোসেনের ব্যবসায়ীক অংশীদার হাসমত আলী হাসু, ইকবাল হোসেন ও থানা শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন ছিলেন। 

সাত খুনের বেনিফিসিয়ারী ইকবাল: 
নজরুল হত্যা এবং এই ঘটনায় নুর হোসেনের ফাঁসির আদেশের মধ্যদিয়ে দুই পক্ষের প্রতিযোগিতার পর্ব শেষ হয়েছে। এরপর শুরু ইকবালের অপ্রতিরোধ্য উত্থান। ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ওই ওয়ার্ডে নজরুলের স্ত্রীকে পরাজিত করে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন ইকবাল হোসেন। তখন অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি পাওয়া ইকবাল ছাড়াও অন্য ৪ আসামি ছিলেন একই ওয়ার্ডের বাসিন্দা এবং প্রভাবশালী। তারা সকলেই আওয়ামী লীগ হলেও ইকবাল জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গিয়াস উদ্দিনের ঘনিষ্ঠজন হয়েও তাদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা পায়। এরপর থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীর ঘনিষ্ঠজন হয়ে উঠেন ইকবাল। ২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিউটি ইসলাম আর নির্বাচন করেননি। আবারো ইকবাল কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ইকবালও প্রতিদান হিসেবে মেয়র আইভীর নৌকার পক্ষে নির্বাচনে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন।

এসব বিষয়ে জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দলের জন্য আদর্শ ধারন করে নিবেদিত কর্মী হয়ে কাজ করছি ৪০ বছরের কাছাকাছি সময় হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে দলের এমন হাজারো কর্মী আছে। আমার মত তারাও বিশ্বাস করেন জীবন-মৃত্যু আল্লাহর হাতে। অপরাধীরা যারা আমাকে হত্যা করতে চেয়েছে তারা হয়তো বারবার এই চেষ্টা করবে। আল্লাহ-ই আমার ভরসা। আমি নিজের জীবন নিয়ে চিন্তা করি না। আমার ভাবনা হলো, জনগণের অধিকার আদায়ে নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে নিজেকে কতটুকু বিলিয়ে দিতে পারছি। এসকল বিষয়ে দলীয় ফোরামে কথা বলবো। দল যেটা ভালো মনে করবে সেটাই আমার কাজ হবে।

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর