বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আরও বেড়েছে।
বুধবারের তথ্য অনুযায়ী গত মঙ্গলবার হাসপাতালের ৪টি মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিলেন ৪৭ জন ডেঙ্গু রোগী। যা চলতি মৌসুবে সর্বোচ্চ। এর আগে সোমবার চিকিৎসাধীন ছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৬ জন। মেডিসিন ওয়ার্ডে সাধারণ রোগীর পাশের ডেঙ্গু রোগী থাকায় ভীতির মধ্যে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে তাদের। ডেঙ্গু রোগীদের মশারির ব্যবস্থা না করায় তাদের শরীরে বসা মশা অন্য কারো শরীরে বসলে ডেঙ্গু আরও ছড়িয়ে পরতে পারে বলে আতংক দেখা দিয়েছে।
সব শেষ বুধবারের রেজিস্ট্রার অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার হাসপাতালের দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম তলার ৪টি মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিল ৪৬ জন রোগী। ওইদিন ডেঙ্গুর উপসর্গ নিয়ে ১৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছে ১৪ জন। সে হিসাবে মঙ্গলবার দিনের শেষভাগ পর্যন্ত ৪টি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিল ৪৭ জন ডেঙ্গু রোগী। যাদের বেশীরভাগ ঢাকায় জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পর গ্রামে ফিরে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এর আগে গত সোমবার ৪৬ জন, রবিবার ৪১ জন, শনিবার ২৭ জন, শুক্রবার ৩৭ জন, বৃহস্পতিবার ৩০ জন এবং গত বুধবার চিকিৎসাধীন ছিলেন ৩০ জন ডেঙ্গু রোগী।
ওয়ার্ডগুলো ঘুরে দেখা গেছে, মেডিসিন ওয়ার্ডের সাধারণ রোগীদের পাশে ডেঙ্গু রোগীদের কেউ শয্যায় আবার কেউ মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ওয়ার্ডগুলোতে পা ফেলার জায়গা নেই। একেজন রোগীর সাথে ২ থেকে ৪ জন স্বজন থাকায় বাজারের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে মেডিসিন ওয়ার্ডে। ময়লা, নোংরা দুর্গন্ধের মধ্যে চিকিৎসা নিচ্ছেন ডেঙ্গু আক্রান্তরা। ডেঙ্গু রোগীদের কেউ কেউ মশারি পেলেও অনেকে মশারিবিহীন চিকিৎসা নিচ্ছেন।
মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগী ও তাদের স্বজনরা জানান, ডেঙ্গু মশাবহিত রোগ। ডেঙ্গু আক্রান্তদের মেডিসিন ওয়ার্ডে অন্য রোগীর পাশে রাখা হচ্ছে। তাদের মশারিও দেয়া হয়নি। তাদের শরীরে বসা মশা অন্য কোন সুস্থ মানুষের শরীরে বসলে তারও ডেঙ্গু আক্রান্তের ঝুঁকি থাকে। ডেঙ্গু আক্রান্তদের আলাদা স্থানে রেখে চিকিৎসা দিলে অন্য রোগীরা স্বস্তিতে চিকিৎসা নিতে পারে বলে জানান তারা।
হাসপাতালের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ৪টি মেডিসিন ওয়ার্ডে ৪৮টি করে শয্যা রয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে সর্বনিম্ন ১২০ জন থেকে সর্বোচ্চ ১৭৫ জন রোগী রয়েছে। একেক জন রোগীর সাথে ৪-৫ জন করে ভিজিটর থাকে। এতকুটু একটি কক্ষে ৪ থেকে ৫শ’ মানুষ থাকলে ওয়ার্ডগুলোতে হাসপাতালের পরিবেশ থাকে না। হাটবাজারের মতো ক্রাউড (শোরগোল) চলতে থাকে। ওয়ার্ডগুলোতে শয্যা ছাড়িয়ে মেঝে, বারান্দায় এমনকি করিডোরেও বিছানা পেতে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। কোন ওয়ার্ডে পা ফেলার জায়গা নেই। এতে সেবা দিতে নার্স-ডাক্তারদেরও বেগ পেতে হয়। ওয়ার্ডগুলোতে ভিজিটর নিয়ন্ত্রণ করা গেলে পরিবেশ কিছুটা উন্নত হতে পারে বলে ধারণা করছেন দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মো. মনিরুজ্জামান বলেন, বুধবার মেডিসিন ওয়ার্ড রাউন্ড দেয়ার সময় সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের সাথে বসেছিলাম। ডেঙ্গু চিকিৎসায় কি করণীয় এবং রোগীর কি প্রয়োজন তার বিস্তারিত জেনেছি। সেভাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিচ্ছে।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু চিকিৎসায় শুধু বেড বাড়ালে হবে না। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-জেলা হাসপাতালেও বেড বাড়িয়ে ডেঙ্গুর চিকিৎসা করা যায়। ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ‘সেল সেপারেটর’ যন্ত্র নেই। বরিশাল বিভাগের কোন সরকারি হাসপাতালে সেল সেপারেটর নেই। অথচ গুরুতর ডেঙ্গু রোগীর রক্তের প্লাটিলেট ভেঙে গেলে সেল সেপারেটর প্রয়োজন।
তিনি কতৃৃপক্ষের কাছে ডেঙ্গুর চিকিৎসায় জরুরি ভিত্তিতে একটি ‘সেল সেপারেটর’ যন্ত্র দাবি করেন।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত