চট্টগ্রাম-নাজিরহাট রুটে আগামী ৪ জুলাই উদ্বোধন হবে কমিউটার ট্রেন (ডেমু) সার্ভিস। প্রকল্পের অধীনে নাজিরহাট রুট সংস্কারের পর সার্ভিসটি চালুর উদ্যোগ নিয়েছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল কর্তৃপক্ষ। প্রথম পর্যায়ে প্রতিদিন দুটি ট্রেন (উভয়পথে) চলাচলের কথা রয়েছে। যাত্রীদের আগ্রহ থাকলে আগামীতে সর্বোচ্চ ছয়টি (উভয়পথে) চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে। ওই দিন চট্টগ্রাম রেল স্টেশন থেকে ডেমু ট্রেনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন রেলপথ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি। এসময় রেলওয়ের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) জোবেদা আকতার।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মোজাম্মেল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যাত্রীদের চাহিদা কথা বিবেচনা করে ৪ জুলাই থেকে নাজিরহাট রুটে ডেমু ট্রেন চালানো হবে। এতে করে যাত্রী সুবিধাসহ রেলের আয়ও বাড়বে। যাত্রীদের সাড়া পেলে এ রুটে ডেমু ট্রেনের সংখ্যা পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হবে। প্রকল্পের অধীনে নাজিরহাট রুটের সংস্কার হওয়ায় গন্তব্যে পৌঁছতে পূর্বের চেয়ে প্রায় দেড় থেকে দুই ঘন্টা সময় সাশ্রয় হবে বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, বর্তমানে নাজিরহাট রুটে প্রতিদিন দুই জোড়া (উভয়পথে) ট্রেন চলাচল করে। যাত্রী চাহিদা থাকলেও কোচ এবং ইঞ্জিন সঙ্কটে ট্রেন সার্ভিস কমিয়ে আনে রেলওয়ে। চলতি বছরের শুরুতে রাজনৈতিক অস্তিরতার কারণে শহরের সার্কুলার রুটের ট্রেন (ডেমু) সার্ভিসটি বন্ধ হয়ে যায়। সার্ভিসটি চালু করে এর সাথে নাজিরহাট রুটের ডেমু সার্ভিস যুক্ত করতে চাইছে রেলওয়ে। এতে ডেমু ট্রেন সার্ভিসে রেলের লোকসান কমে আসবে বলে মনে করছেন রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা। রেলওয়ে কর্মবকর্তা জানান, ইচ্ছা থাকলেও ইঞ্জিন ও কোচ সঙ্কটে এতোদিন রুটগুলোতে পর্যাপ্ত ট্রেন চালানো যাচ্ছে না। সরকার আগামীতে কোচ ও ট্রেন আমদানির পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। পর্যাপ্ত কোচ আসলে ডেমু ছাড়াও মেইল ও এক্সপ্রেস ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হবে।
রেলওয়ের পরিবহন বিভাগের তথ্যমতে, চীন থেকে আমদানি করা ডেমু ট্রেন রেলের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। আমদানি করা এসব ডেমু নিম্নমানের হওয়ার পাশাপাশি অপরিকল্পিত রুটে ডেমু সার্ভিস চালানোর কারণে লোকসানে রয়েছে ডেমু ট্রেনের সার্ভিসগুলো। এরই মধ্যে রেলওয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রুটে ডেমু ট্রেন চালানোর মাধ্যমে আয় বাড়ানোর চেষ্টা করছে। এরই অংশ হিসাবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সেট ডেমু চালানোর পর নাজিরহাট রুটেও ডেমু ট্রেন চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যাত্রী আগ্রহ বিবেচনা করে পরবর্তীতে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রুটেও ডেমু সার্ভিস বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা।
রেলের তথ্যমতে, আগামী ৪ জুলাই রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি ফজলে করিম চৌধুরী ‘নাজিরহাট কমিউটার’ নামের নতুন এ ট্রেন সার্ভিসটি উদ্বোধন করবেন। এরমধ্যে নাজিরহাট-১ সকাল ১০ টা ৩০ মিনিটে চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে ছেড়ে দুপুর ১২ টা ৩০ মিনিটে নাজিরহাট পৌঁছাবে। অন্যদিকে নাজিরহাট-২ বেলা একটায় নাজিরহাট থেকে ছেড়ে দুপুর তিন টায় চট্টগ্রাম স্টেশনে পৌঁছাবে। ডেমু ট্রেনটি মাত্র দুই ঘন্টায় চট্টগ্রাম থেকে নাজিরহাট স্টেশনে পৌঁছাবে। ট্রেনটি আপ ও ডাউনে ঝাউতলা, ষোলশহর, চট্টগ্রাম ক্যান্টনম্যান্ট, ফতেয়াবাদ, জোবরা, হাটহাজারী, চারিয়া মাদ্রাসা, সরকারহাট ও কাটিরহাট স্টেশন যাত্রা বিরতি নেবে।
রেলের পরিবহন শাখার তথ্যানুসারে, প্রকল্পের অধীনে নাজিরহাট রুটের কাজ শেষ হয়েছে। তবে এখনো রেললাইনের দুই পাশে পাথর বসানো হয়নি। এজন্য মাত্র ৩০ কিলোমিটার গতিবেগ রাখা হয়েছে। প্রকল্পের সম্পূর্ণ কাজ শেষ হলে এর গতিসীমা ৬০ কিলোমিটারে উন্নীত হবে। তখন মাত্র এক ঘন্টা ২০ মিনিটে নাজিরহাট পৌঁছানো যাবে। বর্তমানে চলাচলরত লোকাল ট্রেন মাত্র ১৬ কিলোমিটার গতিবেগে প্রায় তিন ঘন্টায় নাজিরহাট পৌঁছে। ৩৮ কিলোমিটার পথ তিন ঘন্টায় পৌঁছানোর কারণে ট্রেনটির জনপ্রিয়তা দিন দিন কমে আসছে। একসময় এ রুটে প্রতিদিন ছয় জোড়া ট্রেন চলাচল করলেও কোচ ও ইঞ্জিন সঙ্কটের কথা বলে রেলওয়ে ট্রেন সার্ভিস কমিয়ে এনেছে।
প্রসঙ্গত, ২০৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৪ সালে চট্টগ্রাম-দোহাজারী ও চট্টগ্রাম নাজিরহাট রেল লাইন আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয়। চলতি বছরের ৩০ জুনের মধ্যে এই দুটি লাইনের আধুনিকায়নের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে নাজিরহাট রুটের কাজ শেষ হলেও দোহাজারী রুটের কাজ এখনো শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
বিডি-প্রতিদিন/ ০১ জুলাই, ২০১৫/ রশিদা