শনিবার, ২৩ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

অনুন্নয়ন ব্যয়ের চাপ বাজেটে

ঋণ ও সুদ পরিশোধে ব্যয় করতে হচ্ছে প্রচুর অর্থ

মানিক মুনতাসির

জাতীয় বাজেটে উন্নয়ন ব্যয়ের তুলনায় অনুন্নয়ন ব্যয়ের চাপ ক্রমাগত বাড়ছে। প্রতিবছর প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার বাইরে ঋণ ও সুদ পরিশোধেও প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে বাজেট থেকে। ফলে প্রতি বাজেটেই পরিচালন ব্যয় বাড়ছে। কিন্তু সেই তুলনায় কমছে উন্নয়ন ব্যয়ের প্রবৃদ্ধি। বিশ্লেষকরা বলছেন, অনুন্নয়ন ব্যয় বাড়ায় উন্নয়নে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে কিনা তা নজর দেওয়ার সময় এসেছে। বিশেষ করে দেশি-বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধের পরিমাণ যে হারে বাড়ছে তা উদ্বেগজনক বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। 

প্রস্তাবিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে মোট ২ লাখ ৮২ হাজার ৪১৫ কোটি টাকার পরিচালন ব্যয়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধে যাবে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা। আর অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় হবে ৪৮ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা। অন্যদিকে বিদেশি ঋণের সুদ হিসেবে ২ হাজার ৯৬৩ কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অথচ উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে মোট ১ লাখ ৭৯ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা। ফলে বাজেটের এই বিশাল আকারের অনুন্নয়ন ব্যয় সামাল দিতে অভ্যন্তরীণ খাতের ওপর চাপ বাড়ছে। এতে বাজেট ঘাটতি বাড়ছে, যা পূরণ করতে হয় অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ নিয়ে। এতে বিনিয়োগও কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকার উন্নয়ন বাজেটের বিরাট লক্ষ্য ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি অনুন্নয়ন বাজেটেরও একটা বিরাট অঙ্ক এখন আমাদের সামনে। আর এর পরিমাণটা প্রতিবছরই বাড়ছে। বৈদেশিক ঋণের সুদের চেয়ে অভ্যন্তরীণ ঋণ পরিশোধে সরকারকে বেশি টাকা খরচ করতে হবে। এটা কমাতে হলে সরকারের আয় বাড়াতে হবে। তাহলে ঋণ কম করতে হবে। আর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন তো দিতেই হবে। ফলে বাজেটে এই চাপ কমাতে হলে আয় বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই বলে তিনি মনে করেন।

চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটেও সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও ঋণের সুদ পরিশোধ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে প্রায় ৯৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি বছর অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় হচ্ছে ৩৯ হাজার কোটি টাকা। আর আগামী বছর এটা বেড়ে দাঁড়াবে ৪৮ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকায়।

সরকারি তথ্যমতে, বর্তমানে প্রায় ২১ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে প্রজাতন্ত্রের। এর মধ্যে সক্রিয় রয়েছে ১৪ লাখের মতো। ত্রিবার্ষিক বাজেট পরিকল্পনা ও মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামোর আওতায় আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য এ খাতে বরাদ্দের প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ৮০ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা। আর ২০২০-২১ অর্থবছরে এ খাতে ব্যয়ের পরিমাণ ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর