শুক্রবার, ৩ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

প্রতারণার মাধ্যমে ২০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ, গ্রেফতার ১৫

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব

নিজস্ব প্রতিবেদক

ম্যাগনেটিক কয়েন, ম্যাগনেটিক পিলার, তক্ষক, শার্টিং ফেব্রিক্স, জাহাজের স্ক্র্যাব ও লোহার গর্দা কম দামে বিক্রির কথা বলে প্রতারণা করে গত কয়েক বছরে ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। রাজধানীর আনাচে-কানাচে ভুয়া অফিস খুলে গত ২০ বছরে এই টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। অবশেষে এক ভুক্তভোগীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চক্রের ১৫ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। তারা হলো- নুরুল ইসলাম, মিনার মিয়া, মিজান, তোফাজ্জল করিম ওরফে তানভীর,  আক্তার ফারুক, রাজু, গোলাম মোস্তফা শাকিল,    শাকিল খান, জাহাঙ্গীরুল আবেদীন, আজগর আলী হাওলাদার, সিরাজুল ইসলাম, শামিম মিয়া, অজয় চাকী, হারুন উর রশিদ ও তুষার আহমেদ। বুধবার সন্ধ্যা থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত রাজধানীর কাফরুল থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির। তিনি বলেন, গ্রেফতার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একাধিক প্রতারণার মামলা রয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চক্রটির প্রতারণার অফিস রয়েছে। কয়েক স্তরে প্রতারক চক্রটি সক্রিয় ছিল।

আসাদ এন্টারপ্রাইজের মালিক বাশার। তানভীর নামে একজনের মাধ্যমে তিনি বিদেশি শার্টিং ফেব্রিক্স কিনতে রাজি হন। নিজে গাজীপুরে একটি গোডাউনে মালামালও দেখে আসেন। এরপর মহাখালীর ডিওএইচএস এলাকার একটি অফিসে গত ৭ ফেব্রুয়ারি প্রথম কিস্তিতে ১০ লাখ টাকার চেক দেন। দুই দিন পর হোটেল ওয়েস্টিনে বসে আরও ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেন। কিন্তু মালামাল আনতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন- ওই মালামালের মালিক অন্য কেউ। তানভীরের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাকে প্রাণনাশ ও মামলার হুমকি দেওয়া হয়। সাড়ে ৩০ লাখ টাকা দিয়ে প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়ার পর মো. বাশার অভিযোগ করেন র‌্যাবের কাছে। এরপর বুধবার রাতে রাজধানীর কাফরুল এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের এই ১৫ সদস্যকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৪। এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন নথিপত্র ও ৩২টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। স্থানীয় ব্রোকাররাও প্রতারক চক্রের সংক্রিয় সদস্য। টার্গেট গ্রাহকদের মালামাল দেখানোর জন্য এজেন্ট নিয়ে গেলে স্থানীয় ব্রোকাররা নিজেদের সরকারি দলের নেতা অথবা কোনো রাজনৈতিক নেতার ভাই, নিকটাত্মীয় বলে পরিচয় দেয়। ব্রোকার গ্রাহকদের সঙ্গে পরিচয়ের পর মালামাল কেনা-বেচার বিষয়ে কথা বলে। চক্রের মালামালকে নিজেদের মালামাল উল্লেখ করে তা বিক্রির কথা জানায়। মালামাল ক্রয়ে চুক্তির জন্য চক্রের অফিস রাজধানীর মহাখালী ডিওএইচএস এলাকায় নিয়ে যায় গ্রাহকদের। অফিসের অভ্যর্থনা কক্ষে সুন্দরী ও স্মার্ট নারীদের বসিয়ে টার্গেটদের প্রভাবিত করা হয়। ম্যানেজার প্রতারণা চক্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

টার্গেট গ্রাহকরা অফিসে আসার পর ম্যানেজার সুকৌশলে প্রভাবিত করে মালামাল ক্রয়-বিক্রয়ের ভুয়া চুক্তিনামা তৈরি, অগ্রিম টাকা গ্রহণ করে কথিত কোম্পানির পক্ষে মানি রিসিট দেয়। এমডি বা চেয়ারম্যান এ চক্রের অন্যতম হোতা। রাজধানীর বিভিন্ন নামি-দামি এলাকায় অফিস ভাড়া নেয় চক্রটি। গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম বাবদ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেয়। পরিস্থিতি বুঝে কখনো অফিস পরিবর্তন করে।

প্রতারক চক্রটি তক্ষক বিক্রির নামেও প্রতারণা করে। ১৫ ইঞ্চির বড় ও কমপক্ষে ২৫৩ গ্রাম ওজনের তক্ষকের মূল্য কোটি কোটি টাকা। কম দামে তারা তক্ষক সরবরাহ করবে এবং বিক্রির জন্য বিদেশি গ্রাহকও সংগ্রহ করে দেওয়ার কথা বলে রাজি করে ভিকটিমদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়। চক্রটির প্রতারণার আরেক ফাঁদ হলো বিশেষ ধরনের কয়েন। পুরনো যুগের বিশেষ ধরনের কয়েন মহামূল্যবান, যার মূল্য কোটি টাকা বলে প্রচার করে। কয়েনগুলো বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন, প্রমাণস্বরূপ তারা ভুয়া রিপোর্ট দেখায়।

কয়েনের ওপর তারা বিশেষ ধরনের কেমিক্যাল প্রয়োগ করে তার ওপর ২৪-২৫টি ধান রেখে বিভিন্ন রং ধারণ করে একপর্যায়ে ধুলায় পরিণত করে দেখায়। কয়েনের ক্ষমতা দেখে প্রভাবিত হয় গ্রাহক। আরেক কথিত বিশেষজ্ঞকে ডেকে সাধারণ ও অসাধারণ কয়েন চিহ্নিত করে দেখায় চক্রটি। কয়েন বিদেশি গ্রাহকের কাছে বিক্রি করতে গিয়ে বুঝতে পারেন তাও ভুয়া। পাওয়ার কয়েনের মতো প্রায় একই প্রক্রিয়ায় টার্গেটদের কাছে ম্যাগনেটিক পিলার কম দামে বিক্রি করে প্রতারণা করে চক্রটি।

সর্বশেষ খবর