বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

দুই মেগা প্রকল্পে ঘুম হারাম চট্টগ্রামবাসীর

রড নেই বাঁশও নেই সমুদ্রের লোনা বালুতে নির্মাণ

রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, চট্টগ্রাম

দুই মেগা প্রকল্পে ঘুম হারাম চট্টগ্রামবাসীর

রিং রোডের ধস আর জলাবদ্ধতার দুর্ভোগে ব্যাপক সমালোচনার মুখে অস্থির অসন্তুষ্ট বিব্রত চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ। বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগের মাঠের কর্মী-সমর্থকরাই বেশি সোচ্চার এই দুই প্রকল্প কাজ নিয়ে। মেগা প্রকল্প হিসেবে জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ নিয়ে শুরু থেকেই চউকের ঢিলেমি আর ‘একলা চল নীতি’ এবং রিং রোড প্রকল্পে কাজ শেষ হওয়ার আগেই ভাঙনের কারণে উদ্বিগ্ন অসন্তুষ্ট চট্টগ্রামবাসী। আর এ জন্য অভিযোগের আঙ্গুল উঠেছে চট্টগ্রাম উনয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক)-এর সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালামের বিরুদ্ধে। মাঠের কর্মী সমর্থকরা তার বিরুদ্ধে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি ক্ষুণেœর অভিযোগ তুলেছেন। দলীয় ফোরামেও তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে।

দলীয় ও প্রশাসনিক সূত্রগুলো জানায়, প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় চট্টগ্রামের প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার রিংরোড প্রকল্প ও পাঁচ হাজার কোটি টাকার জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প হাতে নেয় চউক। আবার চউকের জলাবদ্ধতা      নিরসন প্রকল্পটির সঙ্গে জলাবদ্ধতা বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্পেরও সংযোগ রয়েছে। অন্যদিকে, চসিকের সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের তাগাদা রয়েছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেখানে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অবলম্বন করছেন সেখানে তাঁর সরকারের কোনো প্রকল্প নিয়ে ‘নয় ছয়’ করা মানে দল ও সরকারের বিরুদ্ধেই কাজ করা। এমন তৎপরতা মেনে নেওয়া যায় না। এমন তৎপরতার বিরুদ্ধে সবার আগে দলেরই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এদিকে চউকের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। আলোচিত উন্নয়ন কাজ নিয়ে আওয়ামী লীগের মাঠের কর্মী-সমর্থকদের অসন্তুষ্টিকে ঘিরে দলীয় ফোরামে দায়িত্বশীল হিসেবে চউকের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়ার বিষয়টি উড়িয়ে না দিয়েই তিনি বলেন, দলীয় ফোরামে এমন ব্যাখ্যা চাওয়ার নজির রয়েছে।  চউক চেয়ারম্যান জানান, চলতি মাস থেকেই জলাবদ্ধতা প্রকল্পের মূল কাজ শুরু হয়েছে। যেহেতু সেনাবাহিনী এখন প্রকল্পটির দায়িত্ব নিয়েছে সেহেতু সামনে আর কোনো সংকট থাকবে না। রিং রোডের ধস নিয়ে তদন্ত করতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি হচ্ছে বলে জানান তিনি।

মানুষের দুর্ভোগে রীতিমতো উদ্বিগ্ন বিব্রত অসন্তুষ্ট ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম মহানগর সাধারণ সম্পাদক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। দীর্ঘ নীরবতা ভেঙে তিনি চউক প্রকল্পের কাজ নিয়ে মুখ খুললেন গতকাল। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে মেয়র বলেন, ‘রিং রোড প্রকল্পের পুরো কাজ গভীরভাবে খতিয়ে দেখা দরকার। জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রকল্পে সামনের দিনগুলোতে চউক এবং সেনাবাহিনীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিতে চসিক প্রস্তুত বলেও জানান মেয়র। দলীয় ফোরামে চউকের সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান ও সংগঠনের কোষাধ্যক্ষের কাছে ব্যাখ্যা চাইবেন বলেও জানান তিনি।

মেয়র বলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়নের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী, দলীয় প্রধান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও সরকারের ভাবমূর্র্তি জড়িত। প্রধানমন্ত্রীর উদারতার সুযোগ নিয়ে কারো ‘নয় ছয়’ সহ্য করা হবে না।

মেয়র জানান, সমুদ্রের বালু তুলে সেই লবণাক্ত বালু দিয়েই রিং রোডে ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে প্রকল্প কাজ টেকসই হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই।

নগর পরিকল্পনাবিদ ও চউক সদস্য স্থপতি আশিক ইমরান এক প্রশ্নের জবাবে রিং রোড প্রকল্পে সমুদ্রের লবণাক্ত বালু ব্যবহারের অভিযোগ লোকমুখে শুনেছেন বলে জানান। তিনি ধসে পড়ার ঘটনা তদন্তে চুয়েটের বিশেষজ্ঞকেও সংযুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে বলেন, প্রকল্পটি চট্টগ্রামের উন্নয়নে অত্যন্ত তাতপর্যপূর্ণ। তাই এটির আদ্যপান্ত রিভিউ করা দরকার, যাতে সরকারের সুনাম ক্ষুণœ না হয়।

অন্যদিকে, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে চসিক পাউবোসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বয় তাগিদ দেন এই পরিকল্পনাবিদ।

অন্যদিকে চউকের সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, সমুদ্রের বালু ব্যবহার হলো কি হলো না তা বিষয়ই নয়। হঠাৎ বৃষ্টিতে রিং রোডওয়ার্ক ওয়ের বালু সরে যাওয়ায় ধসে পড়ার মূল কারণ।

তিনি বলেন, মোট সাড়ে চার কিলোমিটার ব্যাপ্তির মধ্যে তার দায়িত্বকালে এক থেকে দেড় কিলোমিটার কাজ হয়। তাতে ভেঙে পড়া অংশটি নেই বলে জানান তিনি। অন্যদিকে জলাবদ্ধতা প্রকল্প বিষয়ে তিনি বলেন, প্রকল্পটির এ বিষয়ে যা কিছু প্রশ্ন তার জবাব দেবে সেনাবাহিনী। সিডিএ বা চউক মূলত প্রকল্প অনুমোদন করে এনেছে। শুরু থেকেই শেষ পর্যন্ত সেনাবাহিনীই এই কাজ করছে। প্রকল্প কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এর সুফল পাওয়া যাবে না। ধৈর্য ধরতে হবে। অন্যদিকে দলীয় ফোরামে ব্যাখ্যা চাওয়া হলে অভিন্ন ব্যাখ্যাই দেবেন বলেও জানান তিনি।

এদিকে, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নগরবাসী বলেছেন, বৃষ্টির জলেই যদি রিং রোডের ওয়াকওয়ে ধসে পড়ে তবে বুঝতে হবে প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানকে চউকের দায়িত্বশীলরা আমলে নেননি। বৃষ্টির পানিতে বালি সরে যাওয়ার মতো অপরিণামদর্শী প্রকল্প কাজ চায় না চট্টগ্রামবাসী। তারা এক্ষেত্রে জোর মনিটরিং এবং সংশ্লিষ্টদের দায়বদ্ধতা প্রত্যাশা করেন। অভিন্নভাবেই জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পেও সমন্বয় ও স্বচ্চতা চান সেনাবাহিনীর কাজে ব্যাপক আস্থা রাখা চট্টগ্রামবাসী।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর