শনিবার, ৯ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বগুড়ায় ঝুঁকিপূর্ণ সেতুতে চলছে ট্রেন

আয়ুষ্কাল পেরিয়ে গেছে ৬০ বছর আগে

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

বগুড়ার সান্তাহার-বোনারপাড়া রেলপথে ৪৬টি ছোট বড় সেতুর মধ্যে দুটি গুরুতর ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এগুলো হলো- বগুড়া শহর লাগোয়া করতোয়া নদীর চেলোপাড়া সেতু ও সোনাতলার বাঙ্গালী নদীর ওপর দিঘলকান্দী চকচকিয়া সেতু। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত সেতু দুটির মেয়াদ অনেক আগে শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু অদ্যাবধি নতুন করে তৈরির কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। চুন আর সুরকির মিশ্রণযুক্ত ইটের গাঁথুনি দিয়ে নির্মিত সেতুগুলোর মেয়াদকাল সর্বোচ্চ ৬০ বছর ধরা হয়েছে। এগুলো ১২০ বছর পেরিয়ে গেছে। এতে প্রতিনিয়তই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে ট্রেন ও হাজারো যাত্রী। খোদ রেলওয়ের কর্মকর্তারাই বলছেন, সেতু দুটির গার্ডার দুর্বল হয়ে পড়েছে কিন্তু তার পরেও সেগুলো মেরামত করা হচ্ছে না। কেবলমাত্র যখন পিলারের নিচ থেকে মাটি সরে যাওয়ার মতো ভয়াবহ ঘটনা জনগণের চোখে পড়ছে তখনই শুধু সেতুগুলো মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বগুড়ায় ট্রেনের যাত্রীরা বলছেন, একশ বছরের বেশি আগে ব্রিটিশ শাসনামলে নির্মিত সেতুগুলোর বেশিরভাগই ঝুঁকিপূর্ণ। দ্রুতগামী আন্তনগর ট্রেন চলাচলের সময় সেতুগুলো কাঁপতে থাকে। যে কোনো সময় গুরুতর দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, শত বছরের প্রাচীন সেতুগুলো ট্রেন চলাচলের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কারণ আগে চুনের সঙ্গে সুরকি মিশিয়ে ইট গেঁথে তার ওপর লোহার গার্ডার যুক্ত করে সেতুগুলো নির্মাণ করা হয়। যার মধ্যে দুটি সেতু গুরুতর হুমকিতে রয়েছে। মাঝে মাঝেই সেতুগুলোর পিলার দেবে যাচ্ছে নয়তো গার্ডার দুর্বল হয়ে ট্রেন চলাচলে বিঘœ ঘটছে। সর্বশেষ গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর চকচকিয়া সেতুর একটি পিলার দেবে যায়। সেটি মেরামতে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যায়। ওই সময় ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখতে হয়। একইভাবে এর আগে বাঙালি নদীর ওপর রেলসেতুটি মেরামত ও সংস্কার করতে হয়েছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গার্ডার দুর্বল হয়ে পড়েছে বগুড়া রেলওয়ে স্টেশনের পূর্ব দিকে করতোয়া নদীর ওপর শত বছর আগে নির্মিত রেল সেতুর। বগুড়ার সোনাতলা স্টেশন মাস্টার আবদুল হামিদ জানান, দীর্ঘ এই রেলপথে আন্তনগর, মেইল ও লোকাল মিলে ৮ জোড়া ট্রেন চলাচল করে। যা উত্তরবঙ্গের লালমনিরহাট, রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা ও বগুড়াসহ ৫টি জেলার মানুষ ট্রেনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে থাকেন। ঢাকা-লালমনিরহাটগামী লালমনি এক্সপ্রেসের চালক মিঠু মিয়া জানান, সেতুর অবস্থা যাই হোক না কেন ট্রেনের গতি কমানোর সুযোগ নেই। তিনি বলেন, আমাদের যে গতিসীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।’ নিয়ম মেনেই আমাদের ট্রেন চালাতে হয়। রেলওয়ের বগুড়ার সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী আবু মাসুদ জানান, বগুড়ার সান্তাহার-বোনারপাড়া রুটে প্রায় ৭২ কিলোমিটার রেলপথে ছোট বড় ৪৬টি রেলসেতু আছে। এর মধ্যে বগুড়ার করতোয়া নদীর ওপর নির্মিত চেলোপাড়া সেতুর পশ্চিমপাশের গার্ডারটি খুবই নাজুক অবস্থায় আছে। কারণ ফতেহ আলী ও রাজাবাজারের বর্জ্য ওই সেতুর কাছে ফেলা হয়। এতে সেতুর গার্ডার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেতুটি পরিদর্শনও করেছেন। সেতু দুটির বর্তমান অবস্থা জানিয়ে রেলের প্রধান প্রকৌশলী বরাবরে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। দিক নির্দেশনা এলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর