রাজাকারের তালিকা প্রকাশ নিয়ে গতকাল জাতীয় সংসদে তোপের মুখে পড়েন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে এ ঘটনায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায় অস্বীকার করে কেবল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওপর চাপিয়ে দিলে সম্পূরক প্রশ্নে জর্জরিত হন মন্ত্রী। এক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন সরকারি ও বিরোধীদলীয় সদস্যরা।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের গতকালের অধিবেশনে মন্ত্রীদের জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু হয়। মো. ফরিদুল হক খান দুলালের লিখিত প্রশ্নের জবাবের পর এ ঘটনা ঘটে। এ সময় সম্পূরক প্রশ্ন করেন সরকারি দলের সদস্য মেজর অব. রফিকুল ইসলাম, গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ এবং সরকারি দলের মোয়াজ্জেম হোসেন রতন।
মেজর অব. রফিকুল ইসলাম মন্ত্রীর জবাবে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, রাজাকারের তালিকা করার প্রশ্নেই ভুল আছে। আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল, আমরা কোনো তালিকা তৈরি করব না। আমাদের লক্ষ্য ছিল, যারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে, তাদের যে তালিকা বিদ্যমান আছে, সেই তালিকা প্রকাশ করা হবে। সংসদীয় কমিটিতেও সেই সিদ্ধান্ত ছিল। মন্ত্রী বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় করেনি, করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই কথার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কী দিয়েছে, সেটা আমরা জানি না। যেহেতু মালিক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তাই তারাই তো প্রকাশ করতে পারত। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী কেন সেটা প্রকাশ করলেন? উনি সঠিক তালিকা প্রকাশ করতে পারেননি, উনি পারবেনও না। গত পাঁচ বছর ধরে রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করতে পারেননি। সম্পূরক প্রশ্নে গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ বলেন, বিভক্তি সৃষ্টি না করলেই ভালো হতো। জবাবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী বলেন, ভুলভ্রান্তি ছিল বলেই দুঃখ প্রকাশ করে তালিকা প্রত্যাহার করেছি। রাজাকারের তালিকায় যাদের নাম দিয়েছে, তারা সক্রিয় ছিল কি না তা শুধু যাচাই করার ব্যাপার। সমস্ত প্রমাণাদি আছে, আমরা চেক করব। সমস্যাটা হচ্ছে, তখনকার মেম্বার-চেয়ারম্যান সাহেবদের কাছে নাম চাওয়া হয়েছিল। তারা সমানে অর্থাৎ যাচাই-বাছাই না করে অনেকের নাম দিয়ে দিয়েছে হয়তো। সে জন্যই এই বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে আর ভুলত্রুটির পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য আমরা সবার সহযোগিতা নিয়ে এবং সম্পূর্ণরূপে যাচাই-বাছাই করেই ভবিষ্যতে তালিকা প্রকাশ করব।এদিকে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারদলীয় এমপিরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর খুনি মোশতাক ও জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচারের জন্য সংসদে একটি বিল পাসের দাবি জানিয়েছেন। তারা বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড হচ্ছেন খুনি মোশতাক ও জিয়াউর রহমান গং। তার দল বিএনপি নেত্রী এতিমের টাকা আত্মসাতের দায়ে কারাগারে, আর দুর্নীতিবাজ তারেক পালিয়ে এখন লন্ডনে। দেশের মানুষ কোনো দিন আর তাদের মেনে নেবে না। তারা এখন পরাজিত পাকিস্তানের স্বপ্ন দেখেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল জাতীয় সংসদের ষষ্ঠ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে এ দাবি জানান সরকারদলীয় সংসদ সদস্যরা। আলোচনায় অংশ নেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, পঙ্কজ দেবনাথ, জাফর আলম, রুবিনা আখতার ও ওয়ার্কার্স পার্টির লুৎফুন্নেসা খান।
ডা. মুরাদ হাসান বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড হচ্ছেন খুনি মোশতাক ও জিয়াউর রহমান গং। বিএনপি চেয়ারম্যান এতিমের টাকা আত্মসাৎ করে কারাগারে সাজা খাটছেন। আর খুনি জিয়ার পুত্র তারেক রহমান দেশের একজন মহাদুর্নীতিবাজ। তিনি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে বঙ্গবন্ধুর কন্যাসহ আওয়ামী লীগের সব জাতীয় নেতাকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন। এই মামলার আসামি তারেক রহমান লন্ডন থেকে স্কাইপির মাধ্যমে দেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছেন। যারা জাতির পিতাকে নিয়ে কটু কথা বলবে তাদের বিরুদ্ধে এই সংসদের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার। তিনি খুনি মোশতাক ও জিয়ার মরণোত্তর বিচারের জন্য সংসদে একটি বিল পাসের দাবি জানান।
বিমানে সেবার মান বেড়েছে : অন্যদিকে বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মাহবুব আলী জানিয়েছেন, বিমানে সেবার মান বেড়েছে। আগে যাত্রীদের বিমানবন্দরে ব্যাগেজ পেতে সময় লাগত আড়াই ঘণ্টা থেকে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত।
এখন ব্যাগেজ এরিয়া ইউনিটির মাধ্যমে কেপিআই নির্ধারণের মাধ্যমে প্রথম ব্যাগেজ ১৮ মিনিট ও শেষ লাগেজ ৬০ মিনিটে প্রদান করা হচ্ছে।