শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

সবুজ সঞ্জীবনী টাঙ্গাইলের মধুপুর জাতীয় উদ্যান

মোস্তফা কাজল, মধুপুরের গড় (টাঙ্গাইল) থেকে ফিরে

সবুজ সঞ্জীবনী টাঙ্গাইলের মধুপুর জাতীয় উদ্যান

টাঙ্গাইলের মধুপুর জাতীয় উদ্যান। লালমাটির এ বনের পথ শিহরিত করে যে কাউকে। শুধু সবুজ আর সবুজ। প্রাকৃতিক এ সমারোহ সঞ্জীবনী শক্তিতে রূপ নিয়েছে।

টাঙ্গাইল বন বিভাগের আওতাভুক্ত মধুপুর জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের প্রাচীনতম জাতীয় উদ্যানের মধ্যে একটি। ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি বনাঞ্চলের পর বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক বন এটি। এ বনের আয়তন ৮ হাজার ৪৩৬ হেক্টর। ঢাকা মহানগরী থেকে ১২৫ কিলোমিটার উত্তরে ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে এর অবস্থান। এ বনকে দেশের মধ্যাঞ্চলীয় বনভূমি হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়। এ বনের বিস্তৃতি গাজীপুর টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ জেলার অংশজুড়ে। দুই জেলার অংশটুকু মধুপুর গড় বা শালবন নামেও পরিচিত। শাল গাছের শিকড় থেকে গজানো চারায় গাছ হয় বলে স্থানীয়রা একে গজারি বনও বলে থাকেন। ইতিহাসের তথ্য অনুযায়ী, কখনো এটি ছিল রাজাদের আয়ত্তে, কখনো-বা ছিল জমিদারদের দখলে। এটি বন বিভাগের অধীনে আসে ১৯৬২ সালে। ১৯৭৪ সালের বন্যপ্রাণী আইনের আওতায় ১৯৮২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০ হাজার ৮৩৭ একর বনভূমিকে জাতীয় উদ্যানের মর্যাদা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে তৎকালীন কৃষি মন্ত্রণালয়। বিশাল আনারসের ভাস্কর্যখচিত মধুপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে রসুলপুর মাজার এলাকায় মহাসড়কের বাম পাশে মধুপুর জাতীয় উদ্যানের প্রধান প্রবেশপথ। বনের ইট বিছানো পথের প্রধান যানবাহন গাড়িতে করে ঘোরার সময় সড়কের দুই ধারে সবুজ বন-বনানীর দৃশ্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। মন হারিয়ে যায় কোলাহলমুক্ত একটি নীরব-নিথর বনবিথীর মাঝে। অনন্য জীববৈচিত্র্য এবং মনোমুগ্ধকর নিসর্গের কারণে এ উদ্যান ইকো-ট্যুরিজমের জন্য উপযোগী। উদ্যানে বিশ্রামাগার, পিকনিক স্পট ও কৃত্রিম লেকসহ বিভিন্ন ধরনের বিনোদনমূলক সুযোগ-সুবিধা আছে।

জীববৈচিত্র্য বনটির প্রধান বৃক্ষ শালসহ বনটিতে ১৭৬ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। এর মধ্যে আছে ৭৩ প্রজাতির বৃক্ষ, ২২ প্রজাতির গুল্ম। এক প্রজাতির পামগাছ, ৮ প্রজাতির ঘাস, ২৭ প্রজাতির ক্লাইম্বার ও ৪৫ প্রজাতির ঔষধি উদ্ভিদ রয়েছে। এর বাইরেও কিছু বিদেশি প্রজাতির উদ্ভিদ উদ্যান এলাকার বিভিন্ন স্থানে রোপণ করা হয়েছে। বনের অভ্যন্তরে আগত সবার দৃষ্টি কাড়ে বহেড়া, আমলকী, হলুদ, আমড়া, জিগা, ভাদি, অশ্বথ, বট সর্পগন্ধা, শতমূলী, জয়না, বিধা, আজুকি/ হারগাজা, বেহুলা, বিভিন্ন প্রজাতির পাহাড়ি আলু, শটি ও নাম না জানা বিচিত্র ধরনের লতাগুল্ম। বনের একটি অংশে রয়েছে ৭ হাজার একরের সরকারি রাবার বন। বিভিন্ন ঋতুতে এ বন ধারণ করে নতুন নতুন চেহারা। বিশেষ করে মে মাসে শালের জীর্ণ পাতা ঝরে পড়ে। এরপর নতুন পত্রপুষ্পে সুশোভিত হয়।

বনের অভ্যন্তরে গজিয়ে ওঠা বিভিন্ন প্রজাতির চারা ও লতাগুল্ম মন ভরিয়ে দেয়। তখন বনের মধ্যে এখানে-সেখানে থাকে বেগুনি রঙের জারুল বৃক্ষের মনকাড়া ফুলের বাহার। আবার জুন মাস এলেই সেই দৃশ্যপট পাল্টিয়ে শালবনটি ঘন জঙ্গলে রূপ নেয়। এক সময় হাতি, বাঘ, চিতা, ময়ূর ইত্যাদি বন্য জীবজন্তু থাকলেও এগুলোর অধিকাংশই এখন বিলুপ্ত।

বন বিভাগ সূত্র বলছে, টাঙ্গাইলের মধুপুর জাতীয় উদ্যানে এখন ১১ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, চার প্রজাতির উভচর, সাত প্রজাতির সরীসৃপ ও ৩৮ প্রজাতির পাখি আছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মুখপোড়া হনুমান, লালমুখ বানর, মায়া হরিণ, চিত্রা হরিণ, বনবিড়াল, বাগডাসা, শজারু, বুনো শূকর, মাছরাঙা, খয়রা গেছো পেঁচা, কাঠ ময়ূর, বন মোরগ, মুরগি ইত্যাদি। আরও আছে ছোট-বড় গাছে  মৌমাছির চাক।

মধুপুর বনের মধু থেকেই এ অঞ্চলের নামকরণ মধুপুর হয়েছে। বনের ঠিক মাঝখানে আছে একটি হরিণ প্রজনন কেন্দ্র। ১৯৮২ সালে জাতীয় উদ্যানের ভিতর লহুরিয়া বিটে ২৬ একর বনভূমির চারপাশে বেড়া দিয়ে গড়ে তোলা হয় এ হরিণ প্রজনন কেন্দ্র। লহুরিয়া বিটে একটি মিনি চিড়িয়াখানা রয়েছে। বৃক্ষরাজির সবুজ শ্যামলিমা প্রত্যক্ষ করার জন্য লহুরিয়ায় একটি সুউচ্চ টাওয়ার রয়েছে। টাওয়ারে উঠলে বনের সবুজ বৃক্ষরাজি দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। দোখলা ভিআইপি বাংলোর সামনে একটি মিনি শিশুপার্ক রয়েছে। উদ্যানের বৃক্ষরাজির সবুজ শ্যামলিমা প্রত্যক্ষ করার জন্য এখানেও রয়েছে একটি সুউচ্চ টাওয়ার।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর