বুধবার, ২০ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

সিলেট কারাগারে করোনা আতঙ্ক

৮৩ কয়েদির ওয়ার্ড লকডাউন

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে বিরাজ করছে করোনা আতঙ্ক। কারান্তরীণ হত্যা মামলার এক আসামি করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পর বন্দী ও কর্মকর্তাদের মাঝে দেখা দিয়েছে এই আতঙ্ক। মারা যাওয়া ওই হাজতির ওয়ার্ড লকডাউন করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কারাগারের এক জেলারসহ ২৪ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে রাখা হয়েছে কোয়ারেন্টাইনে। কারান্তরীণ হওয়ার দুই মাস পর ওই বন্দীর করোনা সংক্রমণ নিয়েও দেখা দিয়েছে বিস্ময়। কারাগারের ভিতর তিনি কীভাবে সংক্রমিত হলেন তা খতিয়ে দেখছে কারা কর্তৃপক্ষ। কারাগার সূত্র জানায়, গত ৫ মার্চ একটি হত্যা মামলায় কারান্তরীণ হন সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার দক্ষিণ বাণীগ্রাম ইউনিয়নের ঘড়াই গ্রামের আহমদ হোসেন (৫৫)। মে মাসের শুরুর দিকে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রথমে তার জ্বর, সর্দি ও পরে কাশি ও শ^াসকষ্ট দেখা দেয়। শুরুতে তাকে কারা হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে ৮ মে তাকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর কর হয়। তার মাঝে করোনার উপসর্গ থাকায় তাকে ওসমানীতে ভর্তি না করে পাঠানো হয় শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ মে তিনি মারা যান। মারা যাওয়ার আগের দিন তার শরীরের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। আর মারা যাওয়ার পরের দিন অর্থাৎ ১১ মে সোমবার রাতে তার পরীক্ষার ফলাফল আসে পজিটিভ। আহমদ হোসেনের করোনা পজিটিভ ছিল এই খবর পাওয়ার পরই তিনি কারাগারের যে ওয়ার্ডে থাকতেন সেটি লকডাউন করে দেয় কারা কর্তৃপক্ষ। ওই ওয়ার্ডে ৮৩ জন বন্দী রয়েছেন। এ ছাড়া ওই ওয়ার্ডের বন্দীদের সংস্পর্শে আসা কারারক্ষী, কর্মকর্তা, কর্মচারীকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়। কারা হাসপাতালের চিকিৎসক ও জেলার মুজিবুর রহমানকেও রাখা হয় কোয়ারেন্টাইনে।

আহমদ হোসেন কারাগারে কীভাবে সংক্রমিত হলেন এটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, সাধারণত কেউ করোনাভাইরাস সংক্রমিত হলে ১৪ দিনের মধ্যেই উপসর্গগুলো প্রকাশ পায়। কিন্তু আহমদ হোসেন কারান্তরীণ হয়েছেন দুই মাস আগে। তাই বাইরে থেকে তিনি সংক্রমিত হয়ে আসার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তাহলে কী সিলেট কারাগারে কভিড-১৯ আক্রান্ত অন্য কেউ আছেন? নানা সতর্কতামূলক পদক্ষেপের পরও কারা অভ্যন্তরে কীভাবে ছোবল হানল করোনা? কারা কর্মকর্তারা এখন খুঁজছেন এসব প্রশ্নের উত্তর।

সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মুজিবুর রহমান বলেন, আহমদ হোসেন মারা যাওয়ার পর তিনি যে ওয়ার্ডে থাকতেন, সেটি লকডাউন করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে বন্দী আছেন ৮৩ জন। এর বাইরে কারা কর্মকর্তা, চিকিৎসক ও রক্ষীসহ ২৪ জনকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।

কারা কর্মকর্তারা জানান, বিশেষ সতর্কতা হিসেবে গত মার্চ মাস থেকেই সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে আসা নতুন বন্দীদের স্যানিটাইজ করে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় ‘আমদানি ভবনের’ আগমনী ওয়ার্ডে। সেখানে একরাত রেখে শরীরের তামপাত্রা পরিমাপ করা হয়। পরদিন তাদেরকে আরেকটি নতুন ওয়ার্ডে নিয়ে রাখা হয় ১৩ দিন। সবমিলিয়ে নতুন বন্দীদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে রাখার পর পুরনো বন্দীর সঙ্গে রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া গত এপ্রিল থেকে বন্দীদের সঙ্গে স্বজনদের সরাসরি সাক্ষাৎ কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। এত সতর্কতার পরও কারাবন্দী আহমদ হোসেন কীভাবে করোনা সংক্রমিত হলেন তা নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন।

সর্বশেষ খবর