বুধবার, ১৭ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

ঘাতক দুই ভাইকে এখনো তোলা যায়নি বিচারের কাঠগড়ায়

চাষাঢ়া হত্যাকাণ্ডের উনিশ বছর

রোমান চৌধুরী সুমন, নারায়ণগঞ্জ

ঘাতক দুই ভাইকে এখনো তোলা যায়নি বিচারের কাঠগড়ায়

চাষাঢ়া হত্যাকান্ডে উনিশ বছর পূর্ণ হলো সোমবার (১৫ জুন)। নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় আওয়ামী লীগ অফিসে ২০০১ সালের ১৬ জুন রাত পৌনে ৮টায় সন্ত্রাসীদের বোমা হামলায় ২০ ব্যক্তি প্রাণ হারান। ঘটনাটি ‘চাষাঢ়া হত্যাকান্ড’ হিসেবে আলোচিত। ওই বোমা হামলায় গুরুতর আহত হন অর্ধ শতাধিক। এদেরই সংসদ সদস্য শামীম ওসমান (নারায়ণগঞ্জ-৪)। মূলত তাকে হত্যার লক্ষ্যেই বোমা বিস্ফোরণ করা হয়েছিল। ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও আজ শামীম ওসমান তার শরীরের বোমার ৭-৮টি স্পি­ন্টার বয়ে বেড়াচ্ছেন। সেদিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আজও শিউরে ওঠে শামীম ওসমানের স্ত্রী সালমা ওসমান লিপি। তিনি জানান, বোমায় স্বামী মারা গেছেন শুনে ঘটনাস্থলের দিকে দৌড়ে যান। রাস্তায় হতাহতদের রক্তাক্ত পড়ে থাকতে দেখেন। একপর্যায়ে তিনি মূর্ছা যান। বিচারের অবস্থা : চাঞ্চল্যকর চাষাঢ়া হত্যা মামলার বিচার কাজ চলছে ঢিমেতালে। এখন চলছে সাক্ষ্যগ্রহণের কাজ। এখনো জঙ্গি দুই ভাই-ঘাতক আনিসুল মোরসালিন ও মুহিবুল মোত্তাকিমকে কাঠগড়ায় তোলা যায়নি। তারা রয়েছে ভারতের কারাগারে। উবায়দুল কোথায়? : বিচার প্রসঙ্গে শামীম ওসমান এমপি বলেন, ‘আমি হতাশ। হামলার মূলে ছিল চাষাঢ়া এলাকার উবায়দুল নামে এক ব্যক্তি। উবায়দুল সেদিন ঘটনাস্থলে এসে আমার টেবিল চাপড়িয়ে বলেছিল, আমি  কেন তার কাগজে সই করব না। তার সঙ্গেই আসে হরকাতুল জিহাদের দুই জঙ্গি মোত্তাকিম ও মোরসালিন। এই উবায়দুলের কথা আমি মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে বারবার বলার পরও তাকে সরে যেতে সহায়তা করা হয়েছে।’

শামীম ওসমান বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে কত বন্দী বিনিময় হয়। কিন্তু চাষাঢ়ায় নৃশংস বোমা হামলায় জড়িত দুই জঙ্গি  মোত্তাকিন ও মোরসালিনকে কেন দেশে আনা হয় না?’

তিনি আরও বলেন, সেই দিন আহত অবস্থায় আমি যখন মৃত্যুর মুখোমুখি হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি, বলেছিলাম আপনার নেত্রী শেখ হাসনাকে বাঁচান। কারণ আমি জানতাম নেত্রীর ওপর হামলা আসবে। ২১ আগস্ট হয়েছিল সেই গ্রেনেড হামলা। 

এমপি শামীম ওসমান যখন জনগণের কথা শোনার জন্য সাক্ষাৎ দিচ্ছিলেন ঠিক তখনই বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। সেই হামলায় আওয়ামী লীগের ২০ নেতা-কর্মী সেদিন দুর্বৃত্তের বোমায় চিরতরে পঙ্গুত্ববরণ করেন, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির জেলার সভাপতি চন্দন শীল, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রতন দাসসহ আরও অনেকেই।

দুই মামলা : চাষাঢ়া হত্যাকান্ডের দিনই নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা দুটি মামলা (একটি বিস্ফোরক ও অন্যটি হত্যা) করেন। দুটি মামলায় ১৪ বছরে ৭ বার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন এবং ৮ম বার ১৩ বছর পর দুটি মামলায় ২০১৩ সালের ২  মে ৬ জনকে অভিযুক্ত ও ৩১ জনকে অব্যাহতি দিয়ে নারায়ণগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দুটি মামলার প্রত্যেকটির ৯৪৭ পাতার চার্জশিট দাখিল করা হয়। এতে মামলার চার্জশিট থেকে তৈমূর আলম খন্দকারসহ ৩১ জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। আর অভিযুক্ত ৬ জন হলেন নারায়ণগঞ্জে ক্রসফায়ারে নিহত যুবদল ক্যাডার মমিনউল্লাহ ডেভিডের ভোট ভাই শাহাদাতউল্লাহ জুয়েল, হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান, ওবায়দুল্লাহ রহমান, ভারতের দিল্লি কারাগারে আটক সহোদর আনিসুল মোরসালিন, মুহিবুল মুত্তাকিন এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকু।

২০১৭ সালের ১৮ অক্টোবর মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের দিন উপস্থিত হননি অনেক সাক্ষী। ওই সময় এমপি শামীম ওসমানসহ অপর সাক্ষীদের প্রথমবারের মতো সমন পাঠানো হয়। শুনানি ধার্য করা হয় ওই বছরের (২০১৭) নভেম্বরের ১৩ তারিখে। কিন্তু সেদিনও শামীম ওসমান হাজির হননি।

সবশেষ ২০২০ সালের ১১ মার্চ মামলায় পূর্ব নির্ধারিত সাক্ষ্য গ্রহণের ধার্য দিনে ৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। সেদিন সাক্ষ্যদাতারা হলেন তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের পিএ হুমায়ুন কবির, বাদল চন্দ্র রায়, তৎকালীন যুবলীগ নেতা খালিদ হাসান, সৈয়দ মো. লুৎফর রহমান, শফিকুজ্জামান, আ. স. ম মোকারম হোসেন আজম, সুলতান ফারুক, তানজিলুর রহমান, মো. হুমায়ুন কবির ও সরদার ফরিদ উদ্দিন।

নারায়ণগঞ্জ জেলা আদালতের পিপি ওয়াজেদ আলী খোকন বলেন, ‘এ মামলার সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভুক্তভোগী তিনজনের একজন সংসদ সদস্য শামীম ওসমান; তাকে আদালত সাক্ষ্য দেওয়ার জন্যই তিন বার সমন জারি করেন। শেষ সমনে গত ২৩ মার্চ সাক্ষ্য দেওয়ার নিধারিত তারিখ থাকলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে উপস্থিত হতে পারেননি। ফলে আবারও পিছিয়েছে মামলার প্রক্রিয়া। এখন করোনায় পরিস্থিতি শেষ না হওয়া পর্যন্ত মামলাটির কার্যক্রম থেমে আছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর