বৃহস্পতিবার, ৬ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

দুই বছরেও খোঁজ মেলেনি সেই কান্তার

মাহবুব মমতাজী

তিন বছর আগে শহিদুল ইসলাম সাগরের (৩৮) সঙ্গে বিয়ে হয় মার্জিয়া সুলতানা কান্তার (২৬)। কান্তা ছিলেন বিউটিশিয়ান। থাকতেন ঢাকার আশুলিয়ায়। বিয়ের বছরখানেক পর স্বামী সাগর তাকে বেড়ানোর কথা বলে শরীয়তপুরে নিয়ে যান। সেখানে ওঠেন একটি হোটেলে। এরপর থেকে কান্তা উধাও। তার স্বামীও এ বিষয়ে সঠিক কোনো তথ্য দেননি। তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনও প্রায় দুই বছরেও কান্তার নিখোঁজের রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি। ঘটনার প্রায় তিন মাস পর আদালতের শরণাপন্ন হন কান্তার বাবা সোহরাব হোসেন রতন।  গত বছর ২০ জানুয়ারি নরসিংদীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে অভিযোগ করেন। আদালত ২৪ জানুয়ারি তার অভিযোগটি এফআইআর হিসেবে নথিভুক্ত করতে নরসিংদীর বেলাব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়। পরে বেলাব থানার ওসি জাবেদ মাহমুদ ৩১ জানুয়ারি মামলাটি গ্রহণ করেন। আদালতে দাখিল করা অভিযোগে দেখা যায়, ২০১৭ সালের ১৮ আগস্ট কান্তাকে বিয়ে করেন সাগর। ২০১৮ সালের ২২ আগস্ট নির্যাতনের পর দুই লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে কান্তাকে তার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন সাগর। এর মাসখানেক পর সাগর নরসিংদীতে কান্তার বাবার বাড়িতে যান এবং তাকে আশুলিয়ার জামগড়ায় তাদের ভাড়া বাসায় নিয়ে আসেন। এখানে আসার পর যশোরে বেড়াতে যাবে বলে ওই বছরের ২১ সেপ্টেম্বর শরীয়তপুরে যান।

এরপর থেকে সাগরের ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। প্রায় তিন মাস মেয়ের কোনো খোঁজ না পেয়ে গত ১০ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার চরবামনেরচরে (খলিগঞ্জ) সাগরের গ্রামের বাড়িতে যান সোহরাব হোসেন রতন। সেখানে সাগরের কাছে তার মেয়ের বিষয়ে জানতে চান। জবাবে সাগর তাকে বলেন, কান্তা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। এ কথা বলে উল্টো তাকে আরও গালিগালাজ করেন এবং নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে তাড়িয়ে দেন। পরে ফোন করে তার মেয়েকে জীবিত ফেরত পেতে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, গ্রেফতারের পর সাগরকে একাধিকবার রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানিয়েছেন, শরীয়তপুর পৌরসভায় ৫ তলাবিশিষ্ট হোটেল নুর ইন্টারন্যাশনালে তার এক বন্ধুর পরিচয়ে অবস্থান করেন। ওই হোটেলে স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে এক হাজার টাকা ভাড়ায় ৩০৭ নম্বর রুমে তারা ছিলেন। ওই হোটেলে অবস্থানকালে সাগর নিজের ফোন বন্ধ করে কান্তার ব্যবহৃত ফোন নম্বরে বিভিন্ন স্থানে কথা বলেন। ওই রাতে কান্তার নাম্বারে তার বাবা ফোন দিয়ে তাদের অবস্থান জানতে চাইলে তা রিসিভ করে সাগর তাকে জানান, কান্তা ঘুমাচ্ছে। এরপর থেকে কান্তার আর কোনো খোঁজ মেলেনি।

কান্তার বড় বোন রিতা এ প্রতিবেদককে জানান, তার বোন প্রেমের পর সাগরকে বিয়ে করে। কান্তা নিখোঁজ হওয়ার পর বিভিন্নখানে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন যে, সাগরের বিভিন্ন জেলায় একাধিক বিয়ে ছিল। সে যেখানেই গেছে সেখানেই একটি করে বিয়ে করেছে। হয়তো টাকার জন্য কান্তাকেও সে বিয়ে করে দেশের বাইরে কোথাও বিক্রি করে দিয়েছে বলে আশঙ্কা করেন তিনি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক মনিরুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, গত জুলাইয়ে সাগরকে তিন দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সে একেক সময় একেক তথ্য দেয়। সর্বশেষ জানিয়েছে, তাদের সঙ্গে হোটেলে মামুন নামে একজন ছিল। মামুন আর কান্তা হোটেল থেকে একসঙ্গে বেরিয়েছে। মামুন নামে ওই ব্যক্তির খোঁজ পেলে রহস্য উদঘাটনের সম্ভাবনা রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর