শনিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

বেতন শোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চাপে হিমশিম অভিভাবক

নইলে জমা নেয় না শিক্ষার্থীর অ্যাসাইনমেন্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

করোনা মহামারীর কারণে বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে পরীক্ষার বদলে শিক্ষার্থীদের নেওয়া হচ্ছে অ্যাসাইনমেন্ট। কিন্তু এ অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়ার আগেই শিক্ষার্থীদের বকেয়া বেতন পরিশোধের চাপ দিচ্ছে রাজশাহীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে স্বল্প সময়ের মধ্যে সন্তানের বেতনের টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছেন অভিভাবকরা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আগে বেতনের টাকা দিতে বলা হচ্ছে। তারপর অ্যাসাইনমেন্ট দিতে বলা হয়। তবে, প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেওয়ার সময় টাকা পরিশোধ না থাকলে দ্বিতীয় অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেওয়ার আগে অবশ্যই বেতন দিতে বলা হচ্ছে। এ জন্য অভিভাবকের মোবাইল ফোনে দেওয়া হচ্ছে খুদে বার্তা। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের বেতন পরিশোধের জন্য মোবাইল ফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়েছে। কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের প্রত্যেককে বেতন পরিশোধের জন্য বলা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষার্থীরা জানায়, মোবাইলে বার্তা পেয়ে তাদের অভিভাবকরা কষ্ট করে হলেও টাকা জমা দিয়েছেন। যারা প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেওয়ার দিন টাকা পরিশোধ করতে পারেনি তাদের দ্বিতীয় অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়ার আগে টাকা জমা দিতে বলা হয়েছে। রাজশাহীর এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। প্রতিষ্ঠানটির দ্বিতীয় থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন ৫৫৫ টাকা। অষ্টম থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বেতন ৬৫৫ টাকা। আর মানবিক বিভাগের একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন ৫৫৫ এবং বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীদের বেতন ৭৫৫ টাকা। গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ।

এ সময়ের মধ্যেই রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ শিক্ষার্থীদের বেতন ছয় থেকে সাত হাজার টাকা পর্যন্ত বকেয়া পড়েছে। ছুটির আগেও যাদের কয়েক মাস বকেয়া ছিল তাদের মোট বকেয়ার পরিমাণ ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়ার আগে অভিভাবকদের একসঙ্গে এত টাকা পরিশোধ করা চাপ হয়ে যাচ্ছে।

বকেয়া বেতন পরিশোধের জন্য খুদে বার্তা দেওয়া প্রসঙ্গে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ তাইফুর রহমান বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠান সরকারি। কিন্তু শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন হয় শিক্ষার্থীদের বেতনের টাকায়। তাই আমাদের টাকা আদায় করতে হচ্ছে। শিক্ষকরা আত্মীকরণ হয়ে গেলে তখন আর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এত টাকা বেতন আদায়ের প্রয়োজন হবে না। আমরা আশা করছি, দ্রুতই আত্মীকরণ হয়ে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘টাকার জন্য এসএমএস দেওয়া হয়েছে সেটা ঠিক। তবে আমরা অনুরোধ করেছি। টাকা না দিলে যে অ্যাসাইনমেন্ট গ্রহণ করা হবে না ব্যাপারটি এ রকম নয়। তাছাড়া অনেক অভিভাবকই এসে তাদের সমস্যার কথা জানাচ্ছেন। কেউ কেউ বলছেন, করোনায় চাকরি হারিয়েছেন। এ রকম ২০০ আবেদন আমরা পেয়েছি। প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু বেতন মওকুফ করা হয়েছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী মহানগরী এবং জেলার প্রতিটি স্কুলই এখন শিক্ষার্থীদের বকেয়া বেতন পরিশোধের জন্য চাপ দিচ্ছে। শিক্ষকরা বলছেন, তারাও অসহায়। বেতন আদায় না করলে তাদের নিজেদেরই বেতন হবে না। তারা শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের বোঝাচ্ছেন, স্কুল বন্ধ থাকার কারণে তাদেরই কারও কারও তিন মাস বেতন হয়নি। তারাও বেকায়দায় আছেন।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের রাজশাহী অঞ্চলের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের করোনাকালের বেতনের কী হবে তা ঠিক করতে আমরা সভা করেছি। প্রায় তিন ঘণ্টা আলোচনা হয়েছে। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা জানিয়েছে। সেটাও জানানো হয়নি। তাই স্কুলে বেতন আদায় করতে কোনো বাধা নেই।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর