বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

মাদক নিরাময় কেন্দ্রে হচ্ছে কী

রাজশাহীতে মিলছে না সেবা, জড়াচ্ছে নানা অপরাধে

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

শিক্ষিত পরিবারের সন্তান হামিম আল ফজলে নুর শুভ্র (ছদ্মনাম)। বাবা সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। ১৮ বছর না পেরুতেই শুভ্র মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েন। জানাজানির পর সংশোধনের জন্য পরিবার তাকে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে পাঠায়। মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে কয়েকবার রাখার পরও শুভ্রর মাদকে আসক্তি কমেনি। বরং সে জড়িয়েছে আরও নানা অপরাধে। এখন সে রাজশাহীতে অপহরণকারী চক্রের চিহ্নিত সদস্য। নগরীর বিভিন্ন থানায় এখন তার বিরুদ্ধে অপহরণের একাধিক মামলা। শুধু শুভ্র নয়, এমন অনেকে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে গিয়েও সুস্থ হয়ে উঠছে না। সেখানে নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসক। মাদক সরবরাহের অভিযোগ আছে নিরাময় কেন্দ্রগুলোর বিরুদ্ধে। রাজশাহী জেলার মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলো ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশেই কোনো চিকিৎসক নেই। প্রতিদিনের খাবারের তালিকাতেও গরমিল থাকে। নার্স বা বয় থাকলেও তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোনো সার্টিফিকেট নেই। রোগীদের মানসিক বিকাশের জন্য পর্যাপ্ত পরিবেশ নেই অধিকাংশ নিরাময় কেন্দ্রগুলোতে। যে কয়টি আসনের (১০ বা ২০) জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো লাইসেন্স নিয়ে রেখেছে, তার চেয়ে বেশি রোগী ভর্তি করাচ্ছে। কয়েকটি নিরাময় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে তারা চিকিৎসার আড়ালে মাদক সরবরাহও করছেন। বাঁচতে চাই সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক শামসুল কাওনাইন শান্ত রাজশাহীর মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রগুলো সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে জানান, একজন মাদকাসক্তকে সম্পূর্ণ সুস্থ হতে নিরাময়কেন্দ্রে থেকে ২ বছরের কোর্স সম্পন্ন করাটা জরুরি। তবে এর জন্য যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন তা অনেকের পক্ষেই জোগাড় করা সম্ভব হয় না। ফলে তারা সম্পূর্ণ কোর্স শেষ না করেই নিরাময় কেন্দ্র ছেড়ে যাচ্ছেন। আর এজন্য বদনামের ভাগিদার হতে হচ্ছে নিরাময় কেন্দ্রগুলোকে। রাজশাহী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের এক কর্মকর্তার দেওয়া তথ্য মতে, শুরুতে মানুষের ধারণাই ছিল না মাদকে আসক্তদের চিকিৎসা আছে। গত ৫ বছরের তুলনায় রাজশাহীতে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রগুলোতে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। সামাজিক সচেতনতা ও অধিদফতরের প্রচারের কারণে এটা সম্ভব হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর রাজশাহী বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক জাফরুল্ল্যাহ কাজল জানান, মাদকসক্ত নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলোর অনিয়মের চিত্র সবার জানা। তারপরও এর মান উন্নয়নে কাজ করা হচ্ছে।

জানা গেছে, রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলায় মোট ৪৭টি বেসরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র আছে। এর মধ্যে রাজশাহী জেলায় আছে ৮টি। এগুলোর মধ্যে আপন ভুবন ও ক্রিয়া ২০ বেডের, বাকি ৬টি ১০ বেডের মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্র। আর ‘চলো বদলাই’ পুনর্বাসন কেন্দ্রে এই মুহূর্তে কোনো রোগী নেই। এই কেন্দ্রগুলোতে ১০০ জনের বেশি মাদকাসক্ত চিকিৎসাধীন আছে। এসব কেন্দ্রে থেকে চিকিৎসা নিতে রোগীদের মাসে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ পড়ে। তবে অধিকাংশ মাদকাসক্তই তাদের চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে না পারায় দুই বছরের সম্পূর্ণ কোর্স শেষ না করেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর