সোমবার, ৫ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

পাহাড়ে কফি ও কাজুবাদাম চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা

অনাবাদি জমিতে দুই ফসলেই বছরে ১৭ হাজার কোটি টাকা আয় সম্ভব

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

পাহাড়ের অনাবাদি জমিতে দুই ফসলেই আয় হবে ১৭ হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে ২ লাখ হেক্টর জমিতে কাজুবাদাম আবাদ করলে বছরে ১০০ কোটি ডলারের  বেশি আয় করা সম্ভব, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া ১ লাখ হেক্টর জমিতে কফি চাষ করতে পারলে ২ লাখ টন কফি উৎপাদন সম্ভব হবে যার বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা। পাহাড়ের ঢালে দেশের অপ্রচলিত অর্থকরি ফসল কফি ও কাজু বাদাম চাষের সম্ভাবনা নিয়ে সম্প্রতি কৃষি মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান এ তিন পার্বত্য জেলায় অন্তত ৫ লাখ  হেক্টর জমি অনাবাদি হিসেবে পড়ে রয়েছে। অন্যান্য ফসল নষ্ট না করে এই অনাবাদি জমি আবাদের আওতায় এনে সম্ভাবনাময় এই ফসল দুটির উৎপাদন বাড়ানো যেতে পারে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে পাহাড়ের কিছু জায়গায় অল্প পরিসরে কাজুবাদাম এবং কফি উৎপাদন হচ্ছে। পরিকল্পিতভাবে ও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এসব ফসলের ব্যাপক সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, সমতল জমির অভাবে কফি, কাজু বাদাম ও মসলাজাতীয় মাঠ ফসলের আবাদ সম্প্রসারণের সুযোগ কম। বর্তমানে পার্বত্য এলাকার মোট ভূমির প্রায় ২২ শতাংশ মাঠ ফসলের আওতায় আনার সম্ভাবনা রয়েছে। এ এলাকার ভূ-প্রকৃতির অবস্থান ও আবহাওয়া বিবেচনায় কফি, কাজুবাদাম ও মসলা জাতীয় ফসল আবাদের অনেক সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া, দেশের বরেন্দ্র অঞ্চলসহ অন্যান্য অঞ্চলের পার্বত্য বৈশিষ্ট্য অনুরূপ জমিও কাজুবাদাম ও কফি চাষের উপযোগী। এসব জমিতে কাজুবাদাম ও কফির আধুনিক জাত ও উন্নত প্রযুক্তির উদ্ভাবন এবং তা সম্প্রসারণের মাধ্যমে কাজুবাদাম ও কফির উৎপাদন বহুগুণে বৃদ্ধির ব্যাপক সুযোগ রয়েছে।  জানা গেছে, দেশের পাহাড়ি অঞ্চলের অনাবাদি জমিকে মাঠ ফসলের আওতায় আনতে ‘কাজুবাদাম ও কফি গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ’ শীর্ষক ২১১  কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট যৌথভাবে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছেন। এ প্রকল্পের মাধ্যমে কাজুবাদাম এবং কফি ফসলের উচ্চফলনশীল ও উন্নত জাত উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তির সম্প্রসারণ করা হবে। এই ফসল দুটি উৎপাদনে দক্ষতা উন্নয়নের জন্য কৃষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে। কৃষি মন্ত্রণালয় জানায়, বর্তমানে বিশ্বে প্রতিবছর ৩৫ লাখ টন কাজুবাদাম উৎপাদন হয়। তার মধ্যে ভারতে ৭ লাখ ৪৬ হাজার টন, ভিয়েতনামে ৪ লাখ টন ও আফ্রিকায় ১২ লাখ টন উৎপাদিত হয়। সেখানে বাংলাদেশে উৎপাদন হয় মাত্র দেড় হাজার টন। উৎপাদনের তুলনায় চাহিদা বেশি হওয়ার কারণে আমদানির পরিমাণ বাড়ছে।

 ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১৮ হাজার কেজি কাজুবাদাম আমদানি হয়েছে, সেখানে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কাজুবাদাম আমদানি হয়েছে ৫ লাখ ৮০ হাজার কেজি। ৪ বছরে প্রায় ৩২ গুণ  বেড়েছে আমদানি। ফলে এই অর্থকরী ফসলটির উৎপাদন বাড়িয়ে যেমন দেশের চাহিদা মেটানো সম্ভব, তেমনি উদ্বৃত্ত ফসল বিদেশে রপ্তানি করে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব বলে মনে করছেন সরকারের নীতি নির্ধারকরা। 

কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, কৃষিকে লাভজনক করতে হলে কাজুবাদাম, কফি,  গোলমরিচসহ অপ্রচলিত অর্থকরী ফসল চাষ করতে হবে। শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও এসবের বিশাল চাহিদা রয়েছে, দামও বেশি। পাহাড়ের অনাবাদি জমিতে এসব ফসল চাষের সম্ভাবনা অনেক। আমরা কাজুবাদাম ও কফির উন্নত জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং এসব ফসলের চাষ আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছি। এটি করতে পারলে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। পাহাড়ি এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মানের উন্নতি ঘটবে। একইসঙ্গে, এই ফসল দুটি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করেও প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যাবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর